দুই ভাইকে দিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে বানিয়েছেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে রূপ দিয়েছেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। স্থান বুঝে পরিচয় দিতেন সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাথে তার অবাধ চলাচল রয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তার সাথে সলাপরামর্শ করতেন শেখ হাসিনা। অনেকে তার এমন বুলি বিশ্বাস করতেন। কারণ তিনি এর আগে ডিজিএফআইয়ের ঢাকা মেট্রো জোনের প্রধান ছিলেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বিভিন্ন! সাবেক সেনা প্রধান শফি উদ্দিনের আস্থাভাজন ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। অধিদপ্তরের লুটপাটের বড় অংকের একটা টাকা সাবেক সেনা প্রধান শফি উদ্দিনকে দিতেন ডিজি মাইন উদ্দিন। সাবেক এই সেনা প্রধান ফায়ারের ডিজির সব অপকর্ম জেনেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পর্যন্ত মাইন উদ্দিনকে নিয়ে যেতেন। সরাসরি নিজে না গেলেও মাঝে মাঝে মাইন উদ্দিনকে একাই পাঠাতেন সাবেক সেনা প্রধান শফিউদ্দিন আহমেদ। এমন বড় বড় স্থানে সম্পর্ক থাকায় ফায়ারের সাবেক ডিজি মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তা তদন্তই শেষ করে দেন মন্ত্রণালয়। তাদের এমন দায়সারা তদন্তের কারণেই মাইন উদ্দিন ফায়ার সার্ভিস থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বাহিরে পাচার করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে ফায়ারে সাবেক ডিজি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাঊেশ মহাপরিচালক ব্রিঃ জেঃ মো. মাইন উদ্দিন ও তার ছোট ভাইদের মাধ্যমে নিয়োগ-বদলী বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, মানি লন্ডারিং ও অন্যান্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দেশে টাকা পাঁচারের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে ১২ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা। অধিদপ্তরের যোগদান করে তিনি তার ভাইদের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে বিপুর পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অবৈধ টাকা দেশের বাহিরে পাঁচার করেন ডিজি মাইন উদ্দিন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে’- এ মূলমন্ত্র ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছে। জন্মলগ্ন থেকেই অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বপরিমণ্ডলে আজ একটি অতি পরিচিত ও গর্বিত নাম। সামরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সকল ক্ষেত্রে অসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ বিভিন্ন অধিদপ্তরে প্রেষণে কর্মরত রয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি কর্মকর্তাগণ চাকুরিতে যোগদানের পূর্বে দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং দুর্নীতি না করার পবিত্র শপথ গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি: জে: মো. মাইন উদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শপথ ভঙ্গসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর মতো সেবাদান প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে। তার ভাই নুর উদ্দিন আনিছ কে দিয়ে নিয়োগ -বদলী বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, মানি লন্ডারিং ও অন্যান্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, তুরস্ক সহ অন্যন্যা দেশে পাঁচার করে সেনাবাহিনী ও দেশের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করেছেন। তার ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিছ, সালাউদ্দিন ও তাদের সিন্ডিকেট কর্তৃক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে তাদের একটি ব্যক্তিগত বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তার এ মহাদুর্নীতির কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে প্রত্যাহার করে অৎসু অপঃ, ১৯৫২ অনুযায়ী চাকুরি হতে সামরিক বরখাস্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ সাধারণ ফায়ার কর্মীদের প্রতিকার পাওয়ার লক্ষ্যে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিম্নে তার এবং তার পরিবারের দুর্নীতির চিত্র ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো:
সাবেক দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, মুখ্য সচিব, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন ভিআইপি নাম ভাংগিয়ে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি: জে: মোঃ মাইন উদ্দিন ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করে ফায়ারফাইটার ও ড্রাইভারসহ মোট ৮০০ জন নিয়োগ প্রদান করেন। উক্ত নিয়োগে তার আপন ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস, সালাউদ্দিন ও তাদের সিন্ডিকেট সদস্য ডিএডি শাহ ইমরান, ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান পাটোয়ারী, সহকারী পরিচালক (সাবেক ওয়ারহাউজ) মানিকুজ্জামান, সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহীন আলম (পোস্তগোলা) ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর জাকির গং কর্তৃক জনপ্রতি ১৫ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে প্রায় ৩৫০ লোকের চাকুরি প্রদান করেন। উক্ত নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি টাকা আয় করে। এছাড়া এর কয়েকমাস পরে ৫৫০ জন ফায়ার ফাইটার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে অতিরিক্ত ১০০জন সহ মোট ৬৫০ নিয়োগ প্রদান করেন। এ নিয়োগে বর্তমান ডিজি সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন ভিআইপি গণের নাম ভাংগিয়ে ৬৫০ জনের মধ্যে প্রায় তার ভাইকে দিয়ে ৩০০ প্রার্থী থেকে জনপ্রতি ১৫ লক্ষ টাকা করে নিয়ে চাকুরি দিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেন। মন্ত্রী, সচিব, মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন ভিআইপিগণের নামে ভূয়া তালিকা প্রণয়ন করে নিয়োগ কমিটি সদস্যগণকে চাকুরি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে নিয়োগ প্রদান করেন। বর্ণিত দুটি নিয়োগে মহাপরিচালক ও তার ভাইগণের সিন্ডিকেট দ্বারা প্রায় ৭০ কোটি টাকার নিয়োগে দুর্নীত করেন। তার ভাই আনিস প্রকাশ্যে বলে থাকেন যে, সাবেক মুখ্য সচিব এর বাসায় প্রতিমাসে ৫ লক্ষ টাকার বাজার ও বিভিন্ন উপহার প্রেরণ করা হয়। এ কাজে মুখ্য সচিবের এলাকার ড্রাইভার শাখাওয়াত কে নিয়োজিত করে রাখা হয়েছে। শাখাওয়াত ফায়ার সার্ভিসের একজন সামান্য ড্রাইভার হলেও মুখ্য সচিবকে ম্যানেজ করার জন্য তাকে কোন ডিউটি করতে হয় না। সে নিয়মিত সাকেব মূখ্য সচিবের বাসায় গিয়ে মহাপরিচালকের তদবির ও উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কাজ করতেন।
নূর উদ্দিন আনিছের অভিনব পদ্ধতিতে সেফটি প্ল্যানে কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি:
মহাপরিচালকের ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ফায়ার সেফটি প্লান কনসালটেন্সি ফার্মসমূহের মধ্যে ১০টি কনসালটেন্সি ফার্মের সাথে ৩০০/- ষ্ট্যাম্প এ চুক্তির মাধ্যমে ৫০% পার্টনারশীপ গ্রহণ করেছে। এ সকল ফার্মের মাধ্যমে সকল সেফটি প্ল্যান পাশ হয়ে থাকে। তার ভাইয়ের পার্টনারশীপ কনসালটেন্সি ফার্মসমূহ ব্যতিত কেও প্ল্যান অনুমোদন করতে পারেন না। প্রতিটি প্ল্যান পাশ করতে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে থাকে।
দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ:
মহাপরিচালকের ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ফায়ার সেফটি প্ল্যান কনসালটেন্সি ফার্মসমূহের মধ্যে ভিস্তা (বিডি) ইঞ্জিনিয়ারিং, বাসা নং-০৭, ব্লক নং-১৪, পল্লবী, মিরপুর-১২ সেফটি প্ল্যান, নিয়োগ বদলী বানিজ্য করার জন্য দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। উক্ত অফিসে নূর উদ্দিন আনিস সপ্তাহে ৩দিন অফিস করেন। সে অফিসে সন্ধ্যার পর ফায়ার সার্ভিসে সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ ঘুষ লেনদেন করে থাকে। বিভিন্ন তদবির করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণের লাইন লেগে যায়। যার ঘুষের পরিমান বেশি নূর উদ্দিন আনিস তাকে আগে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়। এছাড়া তার ২য় হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সবচেয়ে বড় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফন ইন্টারন্যাশনালের লিয়াজো অফিস যার ঠিকানা বাড়ী নং-১৯, রোড নং-৮/এ, নিকুঞ্জ-১, ঢাকা। উক্ত ফন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছর ফায়ার সার্ভিসে ৫০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটি টাকার গাড়ী পাম্প ও অন্যান্য মালামাল সরবরাহ করে থাকে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথেও নূর উদ্দিন আনিস পার্টনারশীপ ব্যবসা পরিচালনা করে। উক্তি অফিসেও সে সপ্তাহে ৩দিন বসে থাকেন। বর্ণিত ২টি অফিসে গোয়েন্দা দিয়ে তদন্ত করতে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
বেআইনী বদলী বাণিজ্য:
সংবিধানের ১৩৩ ধারায় বলা আছে, এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন; তবে শর্ত থাকে যে, এই উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং অনুরূপ যে কোন আইনের বিধানবলী সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হইবে। এই আইন অনুযায়ী অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১ম শ্রেণী কর্মকর্তাগণের সব ধরনের বদলী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করতো। বদলীর আদেশে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উল্লেখ্য করা হতো। কিন্তু বর্তমান মহাপরিচালক কোন আইনের তোয়াক্কা না করে বলে থাকেন যে পুলিশের এডিশনাল এসপি ৬ষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বদলী করে আইজিপি মহোদয় আমি কেন ১ম শ্রেণী বদলী করতে পারবো না। অথচ উনি ভুলে গেছেন যে, আইজিপি মহোদয় সিনিয়র সচিব সমমান আর মহাপরিচালক হচ্ছে অতিরিক্ত সচিব সমমান। উনার এসকল বেআইনী বদলীর কারণে অধিদপ্তরে বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। মহাপরিচালক এর ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিসকে ১ম শ্রেণী বদলী বাবদ ২০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ফলে অধিদপ্তরে অযোগ্য অদক্ষ কর্মকর্তাগণ টাকার বিনিময়ে পোষ্টিং নিয়ে তারা ঘুষ বাণিজ্য ব্যতিত তাদের নিকট অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। মহাপরিচালকের আপন ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস পদবীভেদে বদলীর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে থাকে। সহকারী পরিচালক সাবেক ওয়ারহাউজ মানিকুজ্জামানকে ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে এ পদে বদলী করে আনে নূর উদ্দিন আনিস। পরে যদিও তাকে বদলী করা হয়েছে। এ পদে দুর্নীতিবাজ আনোয়ার হোসেনকে ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বদলী করে আনা হয়। বহুতল ভবনের ছাড়পত্র ও সেফটি প্ল্যান পাশ করানোর জন্য তাকে এ পদে বদলী করে আনা হয়েছে। তার এহেন বদলী বানিজ্যের খবর পেয়ে গত বছর সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক বদলীর নীতিমালা প্রণয়ন করে। কিন্তু মহাপরিচালক সুরক্ষা সেবা বিভাগের নীতিমালা অনুসরণ না করে অদ্যাবধি তার বদলী বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
কোটেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি:
সরকারের ক্রয় নীতি বহির্ভূতভাবে উন্নয়ন শাখার কোটি কোটি টাকার কোটেশনে মহাপরিচালক এর ভাই নূর উদ্দিন আনিস কাজ না করে বিল দাখিলের মধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারী ক্ষয় নীতিমালা অনুযায়ী সারা বছর সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকার বেশি কোটেশনে ক্রয় করা যাবে না। অথচ কোটি কোটি টাকার কোটেশন অবৈধভাবে কাজ না করে হাতিয়ে নিচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১২ কোটি টাকার কোটেশন করে কোন কাজ না করে লুটপাট করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। সঠিক তদন্ত করলে ১২ কোটি টাকার দুর্নীতি প্রমান হবে। তার এ কাজের সহযোগিতা করে থাকে উন্নয়ন শাখার কর্মরত ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান পাটোয়ারী।
বহুতল ভবনের ছাড়পত্র ও সেফটি প্ল্যান অনুমোদনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি:
যে সকল বহুতল ভবন ছাড়পত্র পাওয়ার যোগ্য নয় সেসকল ভবনের ছাড়পত্র ক্ষেত্রভেদে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মহাপরিচালক এর ভাই নূর উদ্দিন আনিস চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকে। তার এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে বর্তমান সহকারী পরিচালক (ওয়ারহাউজ) আনোয়ার হোসেন।
ফায়ার লাইসেন্স এর দুর্নীতি:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মোট ২৬৭টি ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর কর্মরত রয়েছে। উক্ত ইন্সপেক্টরগণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ফায়ার লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। প্রতিটি ইন্সপেক্টর থেকে মাসিক হিসেবে এলাকাভেদে ৫০ হাজার হতে ২ লক্ষ টাকা নূর উদ্দিন আনিস মাসোয়ারা হিসেবে নিয়ে থাকে। কোন ইন্সপেক্টর টাকা দিতে না চাইতে তাকে খারাপ ও দূরবর্তী স্থানে বদলীর হুমকী প্রদান করে। এছাড়া যেসকল প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নয় সেসকল লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রভেদে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মহাপরিচালক এর ভাই নূর উদ্দিন আনিস চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকে।
প্যাকেজ ট্রেনিং সেল এর মধ্যমে দুর্নীতি:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস ও ফেক্টরীতে নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। উক্ত ট্রেনিং এর ফান্ডে অদ্যাবধি ১০ কোটি টাকার উর্ধে সংরক্ষিত রয়েছে। উক্ত টাকা আত্মসাতের জন্য মহাপরিচালক এর ভাই নূর উদ্দিন আনিস বিভিন্ন রকম চক্রান্ত শুরু করেছে। উক্ত টাকা যাতে আত্মসাৎ না করতে পারে সেজন্য নিরপেক্ষ অডিট টিম দ্বারা একটি অডিট করা প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় ষ্টোর এর কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি:
সরকারের ক্রয় নীতি বহির্ভূতভাবে কেন্দ্রীয় ষ্টোর থেকে কোটি কোটি টাকার কোটেশনে মহাপরিচালক এর ভাই নূর উদ্দিন আনিস কাজ না করে বিল দাখিলের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। টেন্ডারের কাগজপত্র সঠিক না থাকা সত্বেও তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিতে বাধ্য করছে। তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাবেক সহকারী পরিচালক ষ্টোর মামুনুর রশিদকে এ পদ থেকে ঢাকার বাহিরে বদলী করে দিয়েছে। মহাপরিচালক প্রকাশ্যে দরবারে বলেছেন যে, এডি ষ্টোর আমার ফোন রিসিভ করতে দেরি করেছে তাই বদলী করেছি। নিম্নমানের রেশন সরবরাহ করে দুর্নীতে মহাপরিচালক এর ভাই নূর উদ্দিন আনিস নেয়াখালী, কুমিল্লা জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় নিম্নমানের ডাল সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরেজমিনে তদন্ত করলে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যাবে। রেশন সংক্রান্ত দুর্নীতি বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় রিপোর্ট প্রচার হয়েছে।
পূর্বাচলে ক্যান্টিনে ব্যাপক দুর্নীতি:
পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং সেন্টার বাহিরের কোন খাবার কেও ক্রয় করতে পারেনা। সেখানে মহাপরিচালক এর ছোটভাই নুর উদ্দিন আনিস কর্মচারীর মাধ্যমে ক্যান্টিন পরিচালনা করে থাকে। যে জিনিসের দাম ৫০/- বাজারে সেই জিনিস ক্যান্টিন থেকে ক্রয় করতে হয় ১২০/- করে। এই ক্যান্টিন বানিজ্যের কারণে সাধারণ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ডিজিএফআইকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ্রি: জে: মোঃ মাইন উদ্দিন, তার ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস ও তাদের সিন্ডিকেট কর্তৃক কথায় কথায় কর্মকর্তাগণকে হুমকী প্রদান করে থাকে যে আমাদের কথার বাহিরে কেও কথা বললে ডিজিএফআইকে দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হবে। ডিজিএফআই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা। এ সংস্থা দেশের জন্য কাজ করে থাকে। বর্তমান মহাপরিচালক পূর্বে ডিজিএফআইএ কর্মরত ছিল বিধায় তার নাকি ডিজিএফআই হাতের মুঠতে থাকে মর্মে তার ভাই নূর উদ্দিন আনিস সকলকে যে কোন অন্যায় মেনে নিতে বাধ্য করেন।
বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের চরম ব্যর্থতার অভিযোগ:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রি: জে: মোঃ মাইন উদ্দিন ঢাকা শহরের সকল দক্ষ ফায়ারফাইটার, লিডার, ড্রাইভার, সাব অফিসার, স্টেশন অফিসার, ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর, সিনিয়র স্টেশন অফিসার, উপ সহকারী পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপ পরিচালকগণকে ঢাকার বাহিরে বদলীর মাধ্যমে ঢাকা শহরে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে দক্ষ কর্মীর চরম সংকট সৃষ্টি করেছে। সাবেক কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ বঙ্গবাজার মার্কেটে এ যাবৎ ১৮ বার মহড়া পরিচালনা করে। সাবেক কর্মকর্তাগণ দীর্ঘদিন যাবৎ পরিশ্রম করে বঙ্গবাজার মার্কেট এর অগ্নি নির্বাপন বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে এ অধিদপ্তরে দাখিল করে। উক্ত কর্মপরিকল্পনায় বঙ্গবাজার ফায়ার স্টেশনে আগুনের ঘটনা ঘটলে ঢাকা মহানগরের বিদ্যমান ১৭টি ফায়ার স্টেশনকে ১২ জোনে কিভাবে এবং কোথায় কোথায় দ্রুত ফায়ারফাইটার ও গাড়ী পাম্প মোতায়েন করতে হবে তা সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত অফিসার কর্তৃক প্রণীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করার কারণে বঙ্গবাজার মার্কেটের সকল দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সকল পানি শেষ হয়ে গেছে। অথচ উক্ত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে প্রথমে শহিদুল হক হলের পুকুরে এবং ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের রির্জাভারের সাথে পাম্প সেট করা প্রয়োজন ছিল। অগ্নিকাণ্ডের প্রথম ১০ মিনিট গোল্ডের টাইম বিবেচনায় নিয়ে সাবেক কর্মকর্তাগণ উক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। সে সময় ঢাকায় সহকারী পরিচালক হিসেবে আক্তার হোসেন ও ঢাকায় উপ পরিচালক দিনুমনি শর্মা কর্মরত ছিলেন। বর্ণিত কর্মকর্তাগণ অদক্ষ হিসেবে এ অধিদপ্তরে স্বীকৃত। এছাড়া মহাপরিচালক এর বদলী বাণিজ্যের কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিশেষ ফায়ার এলার্ম সেট করা আছে। অথচ বঙ্গবাজার ফায়ার হওয়ার পর উক্ত বিশেষ এলার্ম বাজানো হয়নি বিধায় ফায়ারকর্মীগণ সঠিকভাবে ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উক্ত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ইতোপূর্বে নিয়োজিত দক্ষ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে বদলী করে তদস্থলে অদক্ষ কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ করায় বঙ্গবাজার মার্কেটে ৫০০০ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সাথে সাথে ২০,০০০ পরিবার পথের ফকির হয়ে গেছে। উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ফলে দেশের ২০০০ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়। সাবেক দক্ষ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ যদি সেদিন ঢাকায় থাকতো তাহলে বঙ্গবাজার মার্কেটের জন্য বিশেষভাবে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণের কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হতো।
কক্সবাজারের ইনানী বিচের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন জমি ক্রয়ে দুর্নীতি:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী বিচ পাটোয়ার টেক, রূপপতি, মাছকাইচ্ছাবিল এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সরকারী টাকায় ব্যক্তিগত জমি ক্রয় করেন ডিজি মাইন উদ্দিন। এছাড়াও এখানে ফায়ার সার্ভিসের একটি একাডেমি করার জন্য জমি ক্রয় করলেও ফায়ারের ট্রাস্ট্রের টাকা পে-অর্ডার করে না দিয়ে ক্যাশ পরিশোধ করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ডিজি। উক্ত জমি বাজার মূল্য থেকে ১০ গুণ বেশি দেখিয়ে এ টাকাগুলো আত্মসাৎ করেন। যা তদন্ত করলে প্রমান পাওয়া যাবে।
মহাপরিচালক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ:
বর্তমান মহাপরিচলক এর দুই মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী। মহাপরিচালক নিয়োগ, বদলী, টেন্ডার বাণিজ্যের ঘুষের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাচার করে আসছে। তিনি মাঝে মাঝে বিদেশে যাওয়ার সময় নগদ কোটি কোটি ডলার নিয়ে পাচার করে থাকেন। তার ছোটভাই নূর উদ্দিন আনিস সম্প্রতি সিংগাপুর ও থাইল্যান্ডে গমন করে কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে সিংগাপুর ও থাইল্যান্ড এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে।
স্বাধীনতা পুরুস্কারের নামে নিজের ছবিসহ স্মৃতিফলক নির্মাণ:
দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বাধীনতা পুরুস্কার নেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। সেই পুরুস্কার নেওয়া ছবিটি দিয়ে অধিদপ্তরের ভিতরে মোড়ল বানিয়ে আজীবন নিজের স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন দুর্নীতিবাজ ডিজি মাইন উদ্দিন। সরকার পরিবর্তনের পর সেই স্মৃতিফলক তেড়পাল দিয়ে ডেকে রেখেছেন ডিজি মাইন উদ্দিন। এছাড়া তিনি দায়িত্ব পেয়ে কয়েকবার শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে ছবি তুলেন, সেই ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহির করেন। শেখ হাসিনার আমলে নিজেকে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ভয়ভীতি দেখাতেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকার দেশ ছাড়ার পর বর্তমানের তিনি নিজেকে বিএনপির লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন।
মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর তার ভাই আনিসের সম্পত্তি ক্রয়ের বিবরণী:
৪ কোটি টাকার বনানীতে ৩০০০ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, আফতাব নগরে ২টি প্লট, নিজ জেলা নোয়াখালীতে ৩ একর জমি ক্রয়। সিংগাপুর ও থাইল্যান্ডে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। এছাড়া নামে বেনামে ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা। এছাড়াও টাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।
মহাপরিচালকের গ্রামের বাড়ী নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার নোয়ারন্নাই শিবপুর এলাকার মানুষের ক্ষোভ:
মহাপরিচালকের ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস ও সালাউদ্দিন তার নিজ এলাকার সকল মানুষকে বলে থাকেন যে আপনার জমি বিক্রি করলে জানাবেন বাজার মূল থেকে অনেক বেশি দাম প্রদান করা হবে। তাদের এহেন আচারনে গ্রামের লোকজন কানাঘুষা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে থাকেন যে, মাইনউদ্দিন কি আলাদিনের চেরাগ পাইলো যে তার ভাই দু’জন ১ বছরের মধ্যে কোটি কোটি টাকার জমি ক্রয় করে ফেলেছে। গ্রামের অন্যকোন মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না, সকলের জমি ক্রয় করতে চায়। কিছুদিন আগেও তার ছোট ভাই সালাউদ্দিন গ্রামের মধ্যে একটি ফার্মেসির দোকানদার হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে সেও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। আলাদিনের চেরাগ না পাইলে কিভাবে ১ বছরে করে এত সম্পদ।
কল্যাণ ট্রাস্ট ও কল্যাণ তহবিলের টাকা নয়-ছয়:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদদপ্তরে সরকারে গঠিত কল্যাণ ট্রাস্টের টাকায় বিভিন্ন ভাবে নয়-ছয় করে আত্মসাৎ করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। পূর্বাচল ও কক্সবাজার ইনানী বিচ সংলগ্ন জমি ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটির কল্যাণ ট্রাস্ট ও কল্যাণ তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। জমির বাজার মূল্য থেকেও উচ্চ মূল্য দেখিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়। জমির মালিকদের টাকা বাবদ চেক দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা না মেনে ক্যাশ টাকা দিয়েছেন এমন অভিযোগ ট্রাস্ট ও তহবিল কর্মকর্তাদের। এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জমি বিক্রেতা মালিকরা। এছাড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নারী কল্যাণের তহবিল থেকেও টাকা আত্মসাৎ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিটি সেক্টর থেকে তার ভাইদের মাধ্যমে বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে উক্ত প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করেন। এমনকি বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং প্যাকেজের টাকাগুলো সীমিত ট্রেনিং করিয়ে অবশিষ্ট বাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রেনিং সেলের টাকা আত্মসাতে করেন মহা প্রতারণা। পরিপূর্ণ ট্রেনিং না করিয়েই এই সেলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও অধিদপ্তরের মহা পরিচালক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সাধারণ ট্রেনিং সেল, বিজ্ঞাপন সেল, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, ফায়ার রিপোর্ট ও স্টোর থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব শাখায় বার্ষিক অডিট করতে খরচ করা হয় লাখ লাখ টাকা। টাকা দিয়ে অডিট প্রতিবেদনে সব অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক মাইন উদ্দিন। তার এসব ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্ত চিত্রের দীর্ঘ অনুসন্ধানে বের হয়েছে।
ফায়ারের ডিজি’র স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়মবর্হিভূতভাবে কর্মকর্তাকে বরখাস্ত; বিপাকে পরে বরখাস্তের আদেশ বাতিল:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর রেজায়ে রাব্বি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন যে আদেশ করতেন তখন সে আদেশ মেনেই চাকুরি করে যাচ্ছেন। নিয়ম আছে একজন কর্মকর্তা এক স্থানে দীর্ঘদিন থাকতে পারবে না। এ নিয়ম অধিদপ্তরের মহা পরিচালক (ডিজি) মাইন উদ্দিন ও তার ভাই নুর উদ্দিন আনিস ও আরেক ভাই সালাউদ্দিনের লোকজনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। যে কর্মকর্তা মাসে মাসে ডিজি’র ভাই সিন্ডিকেটকে টাকা দিবে তারা বছর বছর একই স্থানে থাকতে পারে। আবার ৬ মাস ৯ মাস একই কর্মস্থলে যারা রয়েছে তাদের তালিকা করে মোটা অংকের টাকা যার কাছে পায় তাদেরকে বদলী করে দেয়। রেজায়ে রাব্বি বদলী হতে টাকা না দেয়ার কারণে গত ২ বছরে তাকে ৬ বার বদলী করে দিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। সর্বশেষ গত মাসে রেজায়ে রাব্বিকে বদলী করা হলে এ নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। বদলী আদেশ হাতে নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন রেজায়ে রাব্বি। এখানেই শেষ নয়, ডিজির দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করায় রেজায়ে রাব্বির বিরুদ্ধে অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে সরকারী চাকুরি বিধিমালা না মেনেই রেজায়ে রাব্বিকে বরখাস্ত করেন ডিজি মাইন উদ্দিন। কোন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্ত কমিটি করে যদি ওই তদন্ত কমিটি প্রমাণ পায় তাহলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা রুজু করতে হয়। কিন্তু ডিজি এমন নিয়ম ভেঙ্গে আইন বর্হিভূতভাবে সংবাদ প্রকাশের জের দেখিয়ে বরখাস্ত করে বিপাকে পরেন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক মাইন উদ্দিন। এসব গোলমাল কাণ্ডে পুরো অধিদপ্তর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে। বেআইনী এই বরখাস্তের আদেশে ডিজির মহা বিপদ বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে সেই আদেশ বাতিল করেন ডিজি মাইন উদ্দিন।
ডিজি’র বদলীর আদেশ পেয়েই গণহারে বদলী বাণিজ্য:
২২ সেপ্টেম্বর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহা পরিচালক ব্রি: জে: মাইন উদ্দিনকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। অধিদপ্তরের নতুন মহা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস ষ্ট্যাডিজ (বিইউপি) এর ডীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালকে। মাইন উদ্দিনের এই বদলীতে বদলীর হিড়িক পড়েছে তার দপ্তরের। একজন সিনিয়র স্টেশন অফিসারকে বদলী করেছেন তার নিজ জেলায়। প্রশাসনের কেউ নিজ জেলায় চাকুরি করতে পারবে না এমন নিয়ম থাকলেও এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডিজি সিন্ডিকেটের লোক হওয়ার কারণে সেই সিনিয়র স্টেশন অফিসারকে নিজ জেলা গাজীপুরের বদলী করা হয়েছে। এ বদলীর তালিকায় ৭ জন সিনিয়র স্টেশন অফিসার ও ৩ জন স্টেশন অফিসারকে কর্মস্থল পরিবর্তন করা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক আদেশে এ কর্মকর্তাদের বদলী করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর আরেক আদেশে ২ জন সহকারী মেকানিক, ২ জন ওয়েল্ডার ও ২ জন ওয়ার্কশপ হেলপারকে বদলী করেন।
অভিযোগ রয়েছে, এই ৬ জনের মধ্যে ৩ জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ন স্থানে পদায়ন করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ৩৮ জন ফায়ার ফাইটার ও ২ জন নার্সিং এ্যাটেনডেন্টকে টাকার বিনিময়ে এই কর্মকর্তাদের পছন্দের স্থানে বদলী করেন। একই তারিখে আরেক আদেশে ১৫ জন লিডারকে তাদের পছন্দের কর্মস্থলে বদলী করা হয়। এসব বদলীর ফাইল ডিজি থেকে অনুমোদন নিয়ে পরিচালক (প্রশা: ও অর্থ) ও সহকারী পরিচালক (প্রশা: ও অর্থ) আদেশ জারী করেছেন।
বিপাকে পড়ে সাময়িক বরখাস্ত, মামলার আসামীকে টাকার বিনিময়ে ফায়ার সার্ভিসে পদোন্নতি:
বাগেরহাট ডিএডি দায়িত্বে থাকা সাবেক কর্মকর্তা গোলাম ছারোয়ারসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার/সমমান পদের কর্মকতাকে পদোন্নতি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে সুপারিশ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এ সুপারিশের ভিত্তিত্বে মন্ত্রণালয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুগ্মসচিব জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৪২ জন স্টেশন অফিসার/সমমান পদের অফিসারকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেন।
এই তালিকায় রয়েছে ফৌজদারী মামলার আসামী এবং বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তার নাম। এসব জেনেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করেন অধিদপ্তর। ২০২২ সালের ফৌজদারী মামলার আসামী থাকা সত্বেও এই তালিকায় পদোন্নতি পেয়েছেন বাগেরহাটের দায়িত্ব পালন করা গোলাম ছারোয়ার। এ তালিকায় মামলার আসামী গোলাম ছারোয়ারের নাম ক্রমিক নং ৩ নাম্বারে। এরপর তাকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয় ঝালকাটি। অভিযোগ উঠেছে, গোলাম ছারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলার সকল কাগজপত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক (প্রশা: ও অর্থ) ও উপপরিচালক (প্রশা: ও অর্থ) এর কাছে একাধিকবার পাঠানো হয়। তারা মামলার তথ্য গোপন করে টাকা লেনদেন করে গোলাম ছারোয়ারকে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পদোন্নতি ভাগিয়ে নিতে প্রথম একজন উপ-পরিচালক এর কাছে আসেন গোলাম ছারোয়ার। জসিমের দেখানো মতে এরপর গোলাম ছারোয়ার মিরপুর ডিজির ভাই নুরউদ্দিন আনিছের সাথে যোগাযোগ করেন। এসব দেন দরবার মিরপুর অবস্থিত ঢাকা সেপ্টি এন্ড সল্যুশন নামক প্রতিষ্ঠানে হয়। এখানেই সব বদলী ও পদোন্নতির দেন দরবার করেন ডিজির ভাই আনিছ।
ফৌজদারী মামলার এ আসামীকে পদোন্নতি দিয়ে বিপাকে পড়েছেন খোদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে তরিঘড়ি করে গোলাম ছারোয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। গত ৯ নভেম্বর এক অফিস আদেশে এ বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, মো: গোলাম ছারোয়ার (পিএন-২১২৬) উপসহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঝালকাটি এর বিরুদ্ধে স্ত্রী নারগিস আক্তার বিজ্ঞ অতি: মূখ্য মহানগর হাকিম এর আদালত, খুলনায় ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় সিআর মামলা নং-১৪৭৪/২২, তারিখ: ৩১/০৮ /২০২২ দায়ের করেন। বর্ণিত মামলা প্রেক্ষিতে আপনি গত ১১/০৯/২০২৩ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে জামিন গ্রহন করায় আপনাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অফিস মেমোরেন্ডাম নং ঊউ(জবম,-ঠও)ঝ-১২৩/৭৮/১১৫(৫০০), তারিখ: ২১/১১/১৯৭৮ মোতাবেক চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হল। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আপনি উপপরিচালকের দপ্তর বরিশাল সংযুক্ত বলে গণ্য হবেন এবং সাময়িক বরখাস্তকালীন আপনাকে সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। আপনি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলে বিধিমতে খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে এ আদেশ জারী করলেও সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন ও তার ভাই নুর উদ্দিন আনিছ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি দিয়ে মামলা ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন। টাকা লেনদেন করার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে কালবিলম্ব করেন। এমনইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজি মাইন উদ্দিন ও তার ভাই নুর উদ্দিন আনিছ সিন্ডিকেট লুটপাট ও অনিয়ম করে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন অধিদপ্তরের যোগ্য কর্মকর্তারা।
ডিজির দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ফায়ার ফাইটার গ্রেফতার!:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের চেষ্টা করায় আব্দুল হান্নান নামে এক ফায়ার ফাইটারকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে ফেরার পথে ফায়ার ফাইটার আব্দুল হান্নানকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। তবে ডিবি পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর খোঁজে আসেন হান্নানের স্ত্রী ফাতেমা খন্দকার নওরিন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী আব্দুল হান্নান গতকাল ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। রাত ১১টার দিকে হান্নানের নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, ডিবিতে আছেন। কিন্তু আজ ডিবিতে আসার পর জানায়, তারা কেউ হান্নানকে আটক করেনি। হান্নানের অপরাধ সে ফায়ারের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছে। এ অপরাধে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নওরিন আরও বলেন, আমি এই ডিজির পদত্যাগ দাবি করছি। আমার ছোট দুইটা বাচ্চা আছে। আমি এখন কী করবো? আমার স্বামীকে গুম করা হয়েছে। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। নওরিন আরও বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমার স্বামীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে আবার তাকে বলেছে, সদরদপ্তরে আবেদন দিতে। তাকে সদর দপ্তর থেকে বের হওয়ার পরে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
এদিকে ফায়ার ফাইটার আব্দুল হান্নানের স্ত্রীর সঙ্গে সহকর্মীর সন্ধানে ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ পরিদর্শক রেজায়ে রাব্বি। তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে আমি ও নিখোঁজ হান্নান ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেই। সে আমার ব্যাচমেট। রাব্বি নিজেও হয়রানির শিকার দাবি করে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের দুই ভাই আনিস ও সালাউদ্দিন সারাদেশে ঘুরে ঘুরে বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য এবং মালামাল কেনায় নানান অনিয়ম করে আসছেন। এই সিন্ডিকেটকে টাকা না দিলেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বারবার বদলি করা হয়। আমি টাকা না দেওয়ায় গত দুই বছর ১০ মাসের মধ্যে পাঁচবার বদলি করা হয়। এমন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে পাইনি। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন দিলে আমাকে হয়রানি না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেটিও মানা হয়নি। আমি হয়রানি বন্ধে আদালতেও রিট করেছি। এই রিট চলমান রয়েছে, বলেন তিনি।
ঢাকায় বারবার অগ্নিকাণ্ড: ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোঠিশ দিয়েই টাকা হাতিয়েছে ফায়ার সার্ভিস!
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি আজ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ”সেবাধর্মী” প্রতিষ্ঠান এই মূল্যবান কথাকে পুঁজি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে অধিদপ্তরের ডিজি পরিবার। সুনাম ও মানুষের একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটি আজ পারিবারিক দুর্নীতির প্রতিষ্ঠানে হিসেবে রূপ নিয়েছে। বারবার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে বের হতে চাইলেও এ অধিদপ্তরের ডিজি থেকে শুরু করে ফায়ার ফাইটার পর্যন্ত বেশিরভাগ কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সাথে ওৎপ্রেতভাবে জড়িত। এই অধিদপ্তরের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি সেফটি প্ল্যান অনুমোদনে অনিয়ম। এর পাশাপাশি বদলী, টেন্ডার, নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য। অধিদপ্তরের যোগ্য ফায়ার কর্মীদেরকে গত দুই বছরের দুরবর্তী স্থানে বদলী করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য কর্মকর্তাদেরকে অধিদপ্তর সহ ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে পোস্টিং দেন মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। তার এমন বদলী আতঙ্কে অধিদপ্তরের অনেকেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেও মুখ খুলে কিছু বলতে সাহস পাননি। তাই নিরবে ডিজি ও তার ভাই সিন্ডিকেটের বদলী করা স্থানে বাধ্য হয়ে যোগদান করেন।
জানা গেছে, মহাপরিচালক তার ভাই আনিছ এর মাধ্যমে ঢাকা নিয়ে ঢাকা যোগ্য অফিসার ও ফায়ার ফাইটার শূণ্য করেন। এছাড়াও নিয়োগের সময় ১৫-২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে অযোগ্য লোকজন নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি যেসব হাইরাইস ভবনে অগ্নি নির্বাপক নাই তাদের কাছ থেকে মাসের পর মাস মোটা অংকের টাকা নিতেন। এ জন্য নিজস্ব ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টরকে এসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন।
সম্প্রতি ঢাকা কয়েকটি ভয়াবহ আগুনকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ডিজি মাইন উদ্দিন যোগদানের পর ভয়াবহ আগুনের প্রথম ঘটনা তার অধিদপ্তরের ঠিক উল্টোপাশে কয়েকশো গরীবের মার্কেট বঙ্গবাজার। আগুনের ঘটনার সূত্রপাত যেখানে ঠিক তার পাশেই ৪৮ ঘন্টা পালা বদল দুইজন করে ফায়ার ফাইটার সেন্টি ডিউটি পালন করে। এই ফায়ার ফাইটার থাকার পরও বঙ্গবাজার দাউদাউ আগুনে জ্বলেপুড়ে শেষ। হাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা পথে। ঘটনার পরেই ফায়ার সার্ভিসের ডিজি সংবাদ মাধ্যমকে ব্রিফ করে বলেছেন এবং কাগজ দেখিয়ে বলেছেন বঙ্গবাজার অগ্নি ঝুঁকি থাকায় ব্যবহার না করতে কয়েকবার ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের নোঠিশ দিয়েছেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোঠিশ দিয়েই তিনি দায়সারা হয়েছেন। এরপরের প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নিতে অফিসিয়ালি অগ্রসর হননি।
বঙ্গবাজারের রেষ না কাটতেই নিউমার্কেট পুড়ে ছাঁই। সেই এই আগুন নিয়ন্ত্রনে এনেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের সামনে একই বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর বিভিন্নস্থানে আগুনের ঘটনা তো আছেই। সর্বশেষ বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনকাণ্ড বিশ্বব্সী নাড়া খেয়েছে। এই ভয়াবহ ঘটনায় বিভিন্ন দেশের মানুষ বলছে, আগুনের দেশ। আবার দেশের অনেকেই বলছেন আগুনের ঢাকা। মানবাধিকার কমিশন বেইলী রোডের আগুনকাণ্ডের পর বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং ভুল আছে। তারা সেফটি প্ল্যান ছাড়া ভবনের বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেয়নি?। এমন প্রশ্ন ঢাকা অনেক সচেতন মানুষের।
অধিদপ্তরের সাবেক এক উপপরিচালক বলেন, শুধু নোঠিশ দিয়েই ফায়ার সার্ভিসের কাজ শেষ নয়। এরপর যদি ভবন মালিক যথাযথ ভাবে নিয়ম না মানে সেফটি প্ল্যান না করে তাহলে ভবন অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে মর্মে সাইনবোর্ড লাগতে পারতো। তারপরও কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চিঠি বা তাগিদ দিতে পারে। অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবগত করে যায়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস এমন কিছুই করে না। বরং একটি বা দুইটি নোঠিশ দিয়েই দায়সারা হচ্ছে। এতে করে মানুষ জীবন যাচ্ছে। অন্যদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
বেইলি রোডের একটি বাড়ীর মালিক জানান, ঝুঁকিপূর্ন বাড়ীগুলোকে নোঠিশ দিয়ে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। নিয়ম মানতে গেলে অনেক ব্যাপার থাকার কারণে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই বাড়ীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। আবার সেফটি প্ল্যান নিতে হলে এককালীন অনেক টাকা দিতে হবে বিদায় কেউ মোটা অংকের টাকা দিয়ে সেফটি প্ল্যান নিতে চায় না। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, সেফটি প্ল্যান নিলেই তো ফায়ার সার্ভিস অনিয়ম পাবে না তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে সেফটি প্ল্যান না দিয়ে এক বা দুই টি নোঠিশ দিয়ে দায়সারা হয়ে টাকা নিয়ে আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা থাকলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়ে জানাতো। কিন্তু এটা করা হচ্ছে না। মানুষ মরলে বা ক্ষতি হলে ফায়ার সার্ভিসের কিছু যায়, আসে না এমনটাই বললেন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
টেন্ডার-বাণিজ্য, সংবাদ প্রকাশ হলে পত্রিকার অফিসে চাপ প্রয়োগ করে নিউজ সরাতে বাধ্য করেন ডিজি!
নিয়োগ, বদলি-বাণিজ্য, নিজ ভাইকে দিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদক তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। যার দুর্নীতি দমন কমিশন স্মারক নং-২৪২১৩, তারিখ- ০৪/৭/২৩। দুদক থেকে এমন লিখিত চিঠি পাওয়ার পর অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
এ নিয়ে ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) ফয়সাল আহমেদ এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (নিরাপত্তা-৩) আফরোজা আক্তার রিবা। যার কাগজ আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এমন গুরুতর অভিযোগ ধামাচাপা দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। নিয়মিত যোগাযোগ করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অগ্নি অনুবিভাগ) মোসাম্মাৎ শাহানারা খাতুনের সঙ্গে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটির প্রধান মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করেন ডিজি মাইন উদ্দিন।
এছাড়াও ডিজির এমন অপকর্মের তদন্ত কমিটির বিষয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলে এসব পত্রিকা অফিসে ফোন করে ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করে সংবাদগুলো সরিয়ে দিয়েছেন ডিজি। সংবাদগুলো তদন্ত কমিটির উপর ভিত্তি করে করা হলেও ডিজি সেই সংবাদে হস্তক্ষেপ করেন। এরপর নিজের গুণকীর্তন করে বিভিন্ন পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ করিয়ে নিজের অপকর্ম দামাচাপা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যান। এসব কাল্পনিক সংবাদ লিখতে অধিদপ্তরের একটি মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাজাহান শিকদারকে দায়িত্ব দেন ডিজি।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে বলা হয়, ডিজির ছোট ভাই নুর উদ্দিন আনিস ও সালাউদ্দিন মিলে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। অধিদপ্তরে একটি অপারেশন বিভাগ থাকার পরও মহাপরিচালক, তাঁর ভাই এবং তাঁদের সিন্ডিকেট নিয়োগ, বদলি ও টেন্ডার-বাণিজ্য, কোটেশন-বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা শহরের সব দল ও ফায়ার ফাইটার, লিডার, ড্রাইভার, সাব অফিসার, স্টেশন অফিসার, ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর, সিনিয়র স্টেশন অফিসার, উপসহকারী পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালকদের ঢাকার বাইরে বদলির মাধ্যমে ঢাকা শহরে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে দক্ষ কর্মীর সংকট সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া যোগদানের পর ৩৫০ জনকে অনিয়মের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ডিজি মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তাঁর ভাইয়ের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগে বলা হয়, ডিজির ছোট ভাই নুর উদ্দিন আনিসকে প্রথম শ্রেণির পদে বদলি জন্য ২০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ফলে অধিদপ্তরে অযোগ্য অনেক কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে যান। বহুতল ভবনের ছাড়পত্র ও সেফটি প্ল্যান পাস করানোর জন্যও তাঁদের টাকা দিতে হয়।
সম্প্রতি সুরক্ষা সেবা বিভাগ বদলির নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রথম শ্রেণি কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গেছে। এতে মহাপরিচালক ক্ষুব্ধ হন দাবি করে অভিযোগকারী জানান, ক্রয়সংক্রান্ত কাজেও ছোট ভাইকে দিয়ে তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন। নীতিমালা অনুযায়ী, সারা বছর সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকার বেশি কোটেশন পদ্ধতি অনুযায়ী ক্রয় করা যাবে না বলে উল্লেখ থাকলেও গত অর্থবছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এভাবে। অধিদপ্তরের মোট ২১৭ জন ওয়্যারহাউজ পরিদর্শক কর্মরত আছে; যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ফায়ার লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এ জন্য এলাকাভেদে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা মাসোহারা আদায় করা হয়ে থাকে। এসব টাকার একটি অংশ মহাপরিচালকের ভাগ ভাই নুর উদ্দিন আনিসের পকেটে যায়। পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং সেন্টারে বাইরের কোনো খাবার কেউ কিনতে পারেন না। সেখানেও ছোট ভাই নুর উদ্দিন আনিস কর্মচারীর মাধ্যমে ক্যানটিন পরিচালনা করে থাকেন। সেখানে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ যেহেতু জানি না, তাহলে মন্তব্য করব কীভাবে? তখন অভিযোগগুলো ফোনে পড়ে শোনানোর পর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তবে নুর উদ্দিন আনিস ও সালাউদ্দিন নামে তাঁর দুই ভাই আছে স্বীকার করে মাইন উদ্দিন বলেন, ডিজির কি ভাই থাকতে পারবে না?
কে এই নুরউদ্দিন মোঃ আনিছ?
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের টেন্ডার, নিয়োগ, বদলী, পদায়ন সহ গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। অনেকের প্রশ্ন অলৌকিক এ ব্যক্তি কে? যার ইশারায় চলে ফায়ার সার্ভিসের সব কার্যক্রম। উন্নয়ন শাখার রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের সব কাজই করেন নুরউদ্দীন মোঃ আনিছ। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে বদলী ও পদায়নেও রয়েছে তার হাত। টেন্ডার সংক্রান্ত কাজ তাকে না দিলে কোন টেন্ডার করতে পারেন না অধিদপ্তর। এ জন্য তিনি বেশ কয়েকজন ঠিকাদারকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গঠন করেছেন। এ সিন্ডিকেট এর ঠিকাদারদের লাইসেন্স দিয়ে অধিদপ্তরের বিভিন্ন কাজ করেন। বর্তমানে তার সিন্ডিকেটের ঠিকাদার অধিদপ্তরের বাউন্ডারির কাজ করছেন বলে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমির বাউন্ডারির কাজ নিয়েছেন নুর উদ্দিন মোঃ আনিছ সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে ডাল ক্রয়ও নিয়ন্ত্রণ করেন আনিছ। এই সিন্ডিকেট এর অপকর্ম নিয়ে দুদক সহ রাষ্ট্রের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযোগ জমা পরেছে। দুদকের একটি অভিযোগ তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। সে মোতাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন।
তবে এই তদন্ত শুরু হওয়ায় কিছু দিনের জন্য ডিজি তার ভাইদেরকে অধিদপ্তরের সকল কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখলেও অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তা দিয়ে বদলী, টেন্ডার, পদায়ন ও পদোন্নতি বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বেশ কিছু উপসহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যার মধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা বিভিন্ন আদালতে চলমান। এসব কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি সুপারিশ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। তৎকালীন বাগেরহাট ও চাঁদপুরের ডিএডির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। বাগেরহাটের ডিএডি গোলাম সরোয়ারের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী কর্তৃক যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা থাকার পরও ডিজি টাকার বিনিময়ে তাকে পদোন্নতি দেন। এসব মামলার কাগজ পত্র আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
অভিযোগ রয়েছে, নুর উদ্দিন মোঃ আনিছ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন এর আপন ছোট ভাই। আরেক ভাই সালাউদ্দিন। দুই ভাইয়ের মধ্যে নুর উদ্দিন মোঃ আনিছ ডিজির খুব আদরের ও চতুর চালাক লোক। এ জন্য আনিছ ডিজিকে যা বলেন ডিজি তার কথা মতো তা-ই করেন। কোন কর্মকর্তা যদি অন্য কোন মাধ্যমে বদলী হন তাতেও আনিছ ও সালাউদ্দিনকে টাকা না দিলে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে দেন না। টাকা না দিলে অন্যস্থানে বদলীর হুমকি দেওয়া হয়। তবে এসব কর্মকাণ্ডে ডিজির ভাইরা নিজেদের ফোন থেকে কারো সাথে কথা বলেন না। হয় ফায়ার সার্ভিসের কোন কর্মকর্তার নাম্বার থেকে না হয় তাদের সিন্ডিকেট এর ঠিকাদারদের ফোন থেকে কথা বলেন তারা।
‘গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ, যানজট’
গাজীপুরের চান্দন এলাকায় টি এন্ড জেড অ্যাপারেল লিমিটেড পোশাক কারখানার......বিস্তারিত