
সাত জনমের পাপমোচনের প্রত্যাশা নিয়ে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমী পূজায় অংশ নিলেন ভক্তরা। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটে এ পূজা শুরু হয়, শেষ হয় ১০টায়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় ও উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী পূজা পরিচালনা করেন। ভক্তরা দেবীদুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন। কেউ কেউ দেবীর পদজলে উপবাস ভেঙে প্রার্থনা করেন।
বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীর সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়।
তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, এবার তিথির কারণে একদিন আগেই মঙ্গলবার বোধন এবং পরদিন অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বোধন হল উপলব্ধি করা যে তিনি এসেছেন। অধিবাস হল আমন্ত্রণ জানানো যে আমরা পূজা করব। আর সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ বলেন, ষষ্ঠী থেকেই আমাদের উৎসব শুরু হলেও উৎসবের আনন্দটা পুরোদমে শুরু হয় সপ্তমী থেকে। মায়ের আগমনে আমরা আনন্দ করব এবং বিশ্বশান্তির জন্য মঙ্গল কামনা করবো। এবার সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় পূজা হওয়ায় সবাই নিরাপদ অনুভব করলেও সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার আহবান জানান কাজল দেবনাথ। তিনি বলেন, পুরো দেশের মানুষ আমরা একটা পরিবার। এই দেশে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে তাদের ধর্মচর্চা করবেন বলে আশা করি। সব রাজনৈতিক দল এবং মানুষের মাঝে সম্প্রীতির ঐক্য দরকার। সবাই মিলে একটা পরিবার হয়ে থাকতে পারলে আমাদের কাউকেই আর অনিরাপদ অনুভব হবে না।
না.গঞ্জে ম-পে ম-পে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে ম-পে ম-পে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে মহাসপ্তমী পূজা শুরু হয়েছে। সকাল ছয়টা ১০ মিনিটে থেকে মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। যা সকাল ১১টায় এসে শেষ হয়। চন্ডী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে দিনব্যাপী চলবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন পূজা ম-প ঘুরে দেখা গেছে, শারদীয় দূর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিনে ম-পে ম-পে নেমেছে ভক্তদের ঢল।
শঙ্গ, ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিটি ম-প। বিভিন্ন কারুকাজ, শিল্পীদের রংতুলির ছোঁয়ায় রাঙানো হয়েছে প্রতিটি ম-প। সেই সাথে সুন্দর আলোকসজ্জায় উৎসবের আমেজ আরো রঙিন হয়েছে। বর্ণিল সাজসজ্জা, হইচই আর মহা ধুমধামের যেন শেষ নেই। প্রতিটি পূজাস্থলে চলছে চন্ডী পাঠ। ভক্তদের পূজা-আর্চনা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে দিনব্যাপী চলবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। সকালে পূজার জন্য ম-পে ভিড় দেখা যায়। তবে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে প্রতিমা দর্শন। সে সময় ভক্তদের ভিড় বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। ঘরের আদরের শিশু থেকে ঠাকুরমারা সবাই আসছেন প্রতিমা দর্শনে।
সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দূর্গা এসেছেন দোলায় বা পালকিতে চড়ে, আর বিজয়া দশমীর দিন ঘোটকে বা ঘোড়ায় মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে চলে যাবেন। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে। পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফল হয় মড়ক। খাদ্যশস্যে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে ও রোগব্যাধি বাড়বে। এছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। সেই নিরিখে ২০২৪ সালে দেবীর গমন ঘোড়ায় হওয়ার জেরে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হতে পারে। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে।
এদিকে, শুক্রবার মহাঅষ্টমী ও শনিবার অনুষ্ঠিত হবে মহানবমীর পূজা। পঞ্জিকা মতে, এবার মহানবমী পূজার পরই রোববার দশমী বিহিত পূজা হবে। উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষ ও শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের শুরু হয়। মাগুরার শ্রীপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মাগুরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ণ্যাঢ্য র্যালী ও মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা করেছে শ্রীপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপজেলার এমসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের করে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রাটি উপজেলার অধিকাংশ পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মনোরঞ্জন সরকার, সাধারণ সম্পাদক রমেনদ্রনাথ বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা।
