TadantaChitra.Com | logo

৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আনন্দ টিভির চেয়ারম্যানের চড়ের মূল্য নিয়ে দর কষাকষি!

প্রকাশিত : মার্চ ১০, ২০১৯, ০৩:২৯

আনন্দ টিভির চেয়ারম্যানের চড়ের মূল্য নিয়ে দর কষাকষি!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পণ্যের মূল্য নির্ধারণের দর বা মূল্য কষাকষিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এবার অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রূপ নিয়েছে চড় বা থাপ্পড় দেয়ার বিষয়। গত ২৫ ডিসেম্বর সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তায় থাকা একজন নারী আনসার সদস্যকে চর দেয় আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান তাজিন আব্বাস সুমি। এজন্য চেয়ারম্যান তাজিন কে অবশ্য স্বসম্মানের সহিত শ্রীঘরে যেতে হয়েছিল। আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান হিসেবে হাজতবাস করায় বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তাজিন আব্বাস সুমি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, সেদিন ওই আনসার সদস্যকে শুধু চড় মেরে এই তাজিন আব্বাস সুমি ক্ষান্ত থাকেননি তিনি এবং তার ভাই ওই সময় সগৌরবে নিজেদের টিভির মালিক বলে সিভিল এভিয়েশনের সবাইকে না না ভয় ভীতি দেখাচ্ছিলেন ও বিভিন্ন হুমকি-ধুমকি দিচ্ছিলেন, এছাড়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাও বাদ দেন নি তারা।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আনন্দ টিভির এমডি ও চেয়ারম্যান হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন যে আইন সকলের জন্য সমান। আইনের চোখে কোন ধনী-গরীব অসহায় বা ক্ষমতাবানদের কোন বৈষম্য নেই। ঐদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আশরাফুল ইসলাম নামের এক বিমান যাত্রী জানান, আমরা যাত্রীরা যখন একে একে তল্লাশি পয়েন্টে এগুচ্ছিলাম তখন এক ভদ্রমহিলা কে বারবার চেকিং বুথে প্রবেশ এর জন্য বিনয়ের সাথে নিরাপত্তাকর্মীরা অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু ওই মহিলা ও তার সাথে থাকা দুই ভদ্রলোক কে বলতে শুনি যে, তারা নাকি আনন্দ টিভির মালিক ও বনানীর জমিদার, তাদের নাকি দেশ বিদেশের কোথাও চেক-টেক লাগে না। তাদের চেক করতে হলে নাকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগে। এসব কথাবার্তার এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই ওই মহিলা এক নারী আনসার সদস্যের গালে সজোরে চড় বসিয়ে দেন এবং ওই মহিলা সহ তার সাথে থাকা দুজন পুরুষ অকথ্য ভাষায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে গালিগালাজ করতে থাকেন। তৎক্ষণাৎ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আনন্দ টিভি মালিক পরিচয় দানকারীদের আটক করেন। আটক করার সময় তাদের মধ্যকার এক পুরুষ সদস্য তিনি নিজেকে এসব বিষয়ে নির্দোষ দাবি করে অনেকটা জোড়ে হেঁটে চেকিং পয়েন্ট ক্রস করে আটক থাকা বাকি দুজনকে রেখেই বিমানের বাসে তড়িঘড়ি করে উঠে পরেন।

বাসে উঠেই মোবাইল ফোন বের করে সাব্বির নামে কাকে যেন ওই লোক ফোন দেন, তাকে মোবাইলে বলতে শুনি সাব্বির আপনার ম্যাডাম কে বাঁচান, আমি কোন মতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি, নইলে সিভিল এভিয়েশনের ওরা আমাকে সহ মেরে ফেলতো, সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্টে আসেন, সব ক্যামেরা আর রিপোর্টার নিয়ে আসেন, সিভিল এভিয়েশনের ওই ব্যাটারা দেখো এবার আমার ক্ষমতা কি, তারা কার পেছনে লাগতে আসছে। নিউজ কইরা ওই বেটাগো উরাইয়া দেন, এটা আমি আনন্দ টিভির এমডি হিসেবে আপনাকে অর্ডার করছি, সিভিল এভিয়েশনের সবাইরে দুর্নীতিবাজদের খাতায় নাম তুইলা দেন। এ কথাগুলো বলেই সে ব্যক্তি মোবাইলের সংযোগ কেটে দেয়। একটু ভালো করে ওই ব্যক্তির দিকে তাকাতেই দেখি, ওই ব্যক্তি ঘেমে একেবারে নেয়ে গেছে।

এ সময় বাসটি কক্সবাজারগামী বিমানের সামনে থামতেই দেখি, নিজেকে আনন্দ টিভির এমডি পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি দৌড়ে বিমানে উঠে যায়। এদিকে সিভিল এভিয়েশনে আটক থাকা অবস্থায় আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান তাজিন আব্বাস সুমি ও তার স্বামী একটি বেসরকারী হাসপাতালে মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ ফয়সাল জামান বরাবরই নিজেদের ভিআইপি এবং সিআইপি বলে জাহির করছিলেন কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্রাদি দেখাতে পারেননি সুমি ও ফয়সাল।

এ সময় উপস্থিত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, যদি তারা ভিআইপি বা সিআইপি সত্যিকার অর্থেই হতেন,তবে প্রথমত সুমি ফয়সাল ও তাদের ভাই আনন্দ টিভির এমডি হাসান তৌফিক আব্বাস সোহাগ এর ব্যবহার মার্জিত থাকতো। তাদের বাসার কাজের লোকের মত সিভিল এভিয়েশনের স্টাফ দের সাথে গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে এত বাজে ব্যবহার করতেন না।

আর দ্বিতীয়তঃ সুমি, ফয়সাল, সোহাগ কেউই ভিভিআইপি বা ভি আই পি গেট ব্যবহার করেননি। তারা ব্যবহার করেছেন সাধারণ যাত্রীদের গেট। পরে অবশ্য সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন অবস্থায় সব শেষ আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান তাজিন আব্বাস সুমি স্বীকার করেন যে, তিনি সহ তার ছোট ভাই এমডি হাসান তৌফিক আব্বাস। তার স্বামী ফয়সাল জানান, তারা কেউই ভিআইপি বা সিআইপি মর্যাদা এখনো পাননি। সিভিল এভিয়েশন এর কাছে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে আর এ জাতীয় কোনো ঘটনা ঘটবে না বলে স্বীকারোক্তিমূলক একটি জবানবন্দি দেন আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান তাজিন আব্বাস সুমি।

ঐদিন সন্ধ্যায় আটককৃতদের বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করেন সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। সারারাত থানা হেফাজতে রাখা হয় আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান তাজিন আব্বাস সুমিকে।

এদিকে সেই নারী নিরাপত্তা রক্ষী আনসার সদস্য ফাতেমা খাতুন বিমানবন্দর থানায় সরকারি কাজে বাধা দান করে আক্রমণসহ আঘাত করিয়া, হুমকি দেয়ার অপরাধে বাদী হয়ে মামলা করেন গত ২৫ ডিসেম্বর রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে।

জানা যায়, ওই দিন রাত ভর আনন্দ টিভির এডমিন ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক বজলুর রহমান, চিফ রিপোর্টার আনিসুর রহমান সাব্বির, সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার বুলবুল ও তাদের ঘনিষ্ঠ ড্রাইভার ইসমাইল সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মামলার বাদী ফাতেমাকে আপোষ করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে কোন লাভ না হওয়ায় পরের দিন সিএমএম আদালতে আসামি হিসেবে আনন্দ টিভির চেয়ারম্যান তাজিন আব্বাস সুমিকে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে জামিনে বেরিয়ে এলে তাজিন আব্বাস সুমি ও তার ভাই আনন্দ টিভির এমডি হাসান তৌফিক আব্বাস সোহাগ উঠে পড়ে লাগেন মামলা থেকে খালাস পেতে।

এর মধ্যেই এডমিন ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম নিজে মামলার বাদী আনসার সদস্য ফাতেমা ও তার স্বামী আরিফুল ইসলাম কে ডেকে নেন আনন্দ টিভি অফিসে। এ সময় ফাতেমা দম্পতির সামনে টিভি চ্যানেলের এডমিন ম্যানেজার হিসেবে নিজের ক্ষমতার ও বেশ দাপট দেখান সাইফুল।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।