TadantaChitra.Com | logo

৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডিপিডিসির মহাব্যবস্থাপক হাসনাতের দুর্নীতির সাম্রাজ্য, পর্ব-১

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১০:২৫

ডিপিডিসির মহাব্যবস্থাপক হাসনাতের দুর্নীতির সাম্রাজ্য, পর্ব-১

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) অনিয়ম ও দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মহাব্যবস্থাপক (জিএম, এইচআর) মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরী। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের আশকারায় তিনি হয়ে ওঠেন গডফাদার। বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ডিপিডিসি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক (জিএম, এইচআর) পদে কর্মরত। এ পদে থেকে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, টেন্ডারসহ অনিয়ম-দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এসব অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচারও করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির আরও বেশকিছু কর্মকর্তাও এই অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তারা হলেন, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফা, জিটুজি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজিবুল হাদী, সাবেক কোম্পানি সচিব আসাদুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী (সেন্ট্রাল) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বনশ্রী ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী হিসাবরক্ষক মো. জসিমউদ্দিন। এরা সবাই মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরীর সিন্ডিকেট সদস্য। এউ চক্রের কয়েকজন অবসরে গেলেও ডিপিডিসির বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। সম্মেলনে বলা হয়, ডিপিডিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিগত স্বৈরাচার সরকারের মদতপুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন, যা বর্তমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পরিপন্থি এবং শহীদদের সঙ্গে চরম প্রতারণা। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে দ্রুততম সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ডিপিডিসির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ, দুর্নীতির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা, শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও লোপাটকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে সংস্থাটির পদোন্নতিবঞ্চিত সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়নেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের অনিয়ম আর দুর্নীতির বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠিও দেয় বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ।

জানা গেছে, সীমাহীন অভিযোগে অভিযুক্ত ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফা। সূত্র জানায়, গোলাম মোস্তফা গত ৯ বছরে অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে দেড়শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে এবং প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন কোম্পানিটির বড় বড় পদপদবি। কখনো হয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক (এইচ আর) আবার কখনো হয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক (আইসিটি)। এছাড়া কোম্পানির এইচ আর পদেও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন, সিএসএস ও ঠিকাদারের জনবল নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ১২০ কোটি টাকা। গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে বেনামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকে ডিপিডিসির ৪০ কোটি টাকা এফডিআর করে ব্যক্তিগতভাবে কোটি টাকার সুবিধা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। দুদকের সূত্র মতে, গোলাম মোস্তফা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন ডিপিডিসির পরিচালকদের গাড়ি। রাজধানীর বনশ্রীতে রয়েছে তিনটি বাড়ি। স্ত্রীর নামে পূর্বাচলে বরাদ্দ নিয়েছেন ৫ কাঠার প্লট। এছাড়াও যমুনা ফিউচার পার্কে রয়েছে ৫টি দোকান ও গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে বারবার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আরেক কর্মকর্তা ডিপিডিসির মহাব্যবস্থাপক (জিএম, এইচআর) মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরী। ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করেন তিনি। ডিপিডিসির ডিএসএস, সিএসএস ঠিকাদার নিয়োগ, গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ, নীতিমালা ভঙ্গ করে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বদলি-বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করেন তিনি। ডিপিডিসিতে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হলেন- উপ মহাব্যবস্থাপক (এইচআর) নিহার রঞ্জন সরকার। ডিপিডিসির এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগ-বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে নিহার রঞ্জন সরকার বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের পলিসি আছে, সেই পলিসি অনুযায়ী বদলী, পদোন্নতি ও নিয়োগ দেওয়া হয়। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবই মিথ্যা এবং বানোয়াট।

অভিযোগের অন্ত নেই ডিপিডিসির জিটুজি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজিবুল হাদীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে- কর্মজীবনের ১৬ বছরে হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। যেখানেই দায়িত্ব পালন করেন সেখানেই গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে অর্থের লোভে চীনাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, যোগ্য ঠিকাদারের পরিবর্তে অযোগ্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে হাতিয়ে নেন বিপুল টাকা। রাজিবুল হাদী ডিপিডিসির খিলগাঁও ডিভিশনের প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কুড়িয়েছেন মেলা অভিযোগ। জানা যায়, গ্রাহকদের সঙ্গে অসদাচরণ, হয়রানি এবং নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে করতেন নানা টালবাহানা। ঘুষ না দিলে মিলত না বিদ্যুৎ সংযোগ। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ বিলের কিস্তি করাতে গেলে সেখানেও তিনি উৎকোচ দাবি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পতিত স্বৈরাচার সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ছত্রছায়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, হাদী চাইনিজ বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন নকশা, ড্রইং ডিজাইন করে দেন। ডিজাইনে হেরফের করে প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা অপচয় করেন। সিনম নামে একটি চাইনিজ কোম্পানিকে দুইশ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেতেও সহায়তা করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিনিময়ে সেখান থেকে ৫ শতাংশ বাগিয়ে নেন হাদী।

তিনি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের শর্ত পূরণ করা হলেও টাকা ছাড়া দেন না সংযোগ। অভিযোগ রয়েছে অনিয়ম থাকলেও টাকা পেলে সব বৈধ করে সংযোগ দেন তিনি। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাকেও তোয়াক্কা করেন না তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাজিবুল হাদীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এদিকে মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরীর কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।