বিশেষ প্রতিবেদক: জনসেবায় অগ্নি নির্বাপনে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর জুড়ে পেয়ারে হাসিনাদের জয়জয়কার। দেশজুড়ে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা হিসেবে পরিচিত ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বহাল তবিয়তে রয়েছেন শেখ হাসিনা সরকারের দোসর কর্মকর্তারা। এসব বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালকের টনক নরেনি। সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিস দেখভালের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর তাই উভয়কে বহন রাখতে মরিয়া। গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় (কেপিআই) অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পদক্ষেপ জনগণের মনে নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রথমে ছোট্ট পরিসরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলেও অতি দ্রুততার সাথে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সেখানে পৌঁছায়। কিন্তু তাদের অগ্নি নির্বাপনের কর্মপরিকল্পনা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন অনেকেই। তাই অনেকেরই ধারণা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ প্রতিটি কর্মকর্তার হৃদয় জুড়ে পেয়ারে হাসিনা বন্দনা। বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে সচিবালয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পনামূলক। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ তন্ত্রের আমলাদের যোগসাজসে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ইতিমধ্যেই সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকই ব্যক্তিগত মন্তব্য করেছেন।
সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালার একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিস তাদের অগ্নি নির্বাপন চেষ্টা সময় পরিকল্পনা মাফিক রাস্তা বন্ধ করেননি, যে কারণে একজন ফায়ার ফাইটারকে ট্রাক চাপায় জীবন দিতে হয়েছে। রাস্তা বন্ধ করার দায়িত্ব যারই থাকুক না কেন নিরবিচ্ছিন্ন আগুন নেভানোর কর্ম পরিচালনার জন্য ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের রাস্তা বন্ধের নির্দেশনা দেয়ার দায় রয়েছে। এছাড়াও সচিবালয় আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের পরিকল্পনার যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। কেমন ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে ১০ থেকে ১৫টি বহুতল লেডার থাকতেও ২০ টি ইউনিট কেন মাত্র দুইটি লেডার/ মই নিয়ে অগ্নি নির্বাপনে চেষ্টা করেছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করেছেন পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড ঘটার পরও ফায়ার সার্ভিস সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা ইচ্ছে করি অগ্নি নির্বাপন বিলম্বিত করেছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত ডিডি ঢাকা ছালেহ উদ্দিন ও ডিরেক্টর অপারেশন তাজুল ইসলামের ইচ্ছা ও পরিকল্পনায় হেঁয়ালি করা হয়েছে। যে কারনে আগুন বৃদ্ধি পায় বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
অগ্নি নির্বাপনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা দুই কর্মকর্তা ডিডি ছালেহ উদ্দিন ও ডিরেক্টর অপারেশন তাজুল ইসলাম সাবেক সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের অতি ঘনিষ্ঠজন হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। বিগত কয়েক বছর ধরে তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও ফায়ার সার্ভিস একাধিকবার তদন্ত নাটক মঞ্চায়িত করে। আবার অর্থের বিনিময়ে এই নাটকে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা টিকে যায় বারবার। সেই একই পথে হাঁটছে বর্তমান মহাপরিচালক সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের দেখভালে নিয়োজিত সকলেই। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসরদের আগলে রাখা ও সংস্কারে অনীহা প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হলেও কখনও তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পরিচালক বলেন, ডিডি ছালেহ উদ্দিন ও তাজুল ইসলামের কুট বুদ্ধির কাছে সকলেই পরাস্ত। এখনই উপযুক্ত সময় তাকে বরখাস্ত করে ফায়ার ব্রিগেড ডিপার্টমেন্ট থেকে উৎখাত করা। তিনি আরো বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার রোশানালে আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিতদের সেসব ব্যবসায়িক কলকারখানায় ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটে সেসব মালিকপক্ষকে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে চাহিদা মাফিক প্রতিবেদন প্রদানের কন্টাক্ট চলছে ফায়ার সার্ভিসে। এক একটি কলকারখানার মালিকপক্ষ দুই থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় ফায়ার প্রতিবেদন সংগ্রহ করছেন। এ কাজে জড়িত রয়েছেন উপ-পরিচালক (ঢাকা) ছালেহ উদ্দিন, সহকারী পরিচালক (ওয়্যারহাউজ) আনোয়ার হোসেন ও ডিরেক্টর অপারেশন।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেন এমন একজন গণমাধ্যমকর্মী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক উপকরণ, পেশাদারিত্ব ও সক্ষমতার সঙ্গে সচিবালয়ের আগুন নিভানোর তৎপরতা একেবারেই বেমানান। ছোট্ট অগ্নিকাণ্ডটি ধীরে ধীরে প্রসার হতে থাকে কিন্তু তাদের ২০ টি ইউনিট কাজ করেও সেই আগুন নেভাতে পারেনি। যা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভাবে সন্দেহ হচ্ছে। অগ্নি নির্বাপনের শেষে ব্রিফিং এর সময় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের ডান পাশে দাঁড়ানো অপারেশন তাজুল ইসলামকে দেখে কষ্ট লেগেছে। যিনি স্বৈরাচারী সরকারের পছন্দের একজন মানুষ ছিলেন। আওয়ামী ঘরানার সেনাকর্তা হিসেবেই সাবেক শেখ হাসিনার সরকার তাকে পছন্দ করে ফায়ার সার্ভিসে সংযুক্ত করেছিলেন।
এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের প্রায় প্রতিটি কর্মকর্তা যারা মহাপরিচালকের চারপাশে অবস্থান করেন সবাই স্বৈরাচার সরকারের সময়ে পছন্দের তালিকার মানুষ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে পদায়ন পেয়েছিলেন। তাদের নিয়েই ডিজির এত আনন্দ কিভাবে বুঝতে পারিনা। তাই এই আগুনলাগা এবং আগুন নেভাতে ধীরগতি একই সুতোয় বাধা বলে মনে হচ্ছে।
বর্তমান মহাপরিচালকের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে তিনি নিজেও সাবেক সরকার ভক্ত মানুষ। তাই তার চারপাশে স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের কলরব তাকে আনন্দ দেয়। যাদের সঙ্গে মিলেমিশে সুখের সংসার করছেন তিনি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরিবিলি অফিস করেন মহাপরিচালক।
চলবে……
‘সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা পেলেন চুয়াডাঙ্গার সন্তান এইচ এম হাকিম’
স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন শির্ষক আলোচনা শেষে সারা বাংলাদেশ......বিস্তারিত