নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ স্থাপনা সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন গনপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ই/এম বিভাগ- ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে। নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে বদলী করা হয় রাজশাহী ডিভিশন। সেখানে নিয়মিত অফিস না করেই বেতন নিতেন জাহাঙ্গীর। আবার ঢাকায় ফিরতে নানান স্থান দিয়ে তদ্বির করতেন। অবশেষ তিনি তদ্বির করে সাকসেস হয়েছেন। মাত্র ৮ মাসের মাথায় ফিরে এসেছেন তার কমিশন খ্যাত ঢাকায়। ঢাকা তার প্রাণের শহর খ্যাত এলাকা। এখানে রয়েছে মধু, যে মধু শেষ না হতেই তিনি অন্যস্থানে থাকতে নারাজ।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে টেন্ডারবাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি’র মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে দুর্নীতির দায়ে অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় গণপূর্তের রাজশাহী বিভাগে। বছর না-যেতেই ৮ মাসের মধ্যে দুর্নীতি অনিয়মের আমলনামা নিয়ে আবারও ফিরেন ঢাকায়। ঢাকায় ফিরতে জোর তদবীর ও কোটি টাকা খরচ করেছেন এমন অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মাত্র ৯ বছর গণপূর্তে চাকরি করে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ অবধৈ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে।
গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ একজন নারীলোভী নন বিসিএস প্রকৌশলী হিসাবে সবাই তাকে চেনেন ও জানেন। উচ্চপর্যায়ের তদবীরে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই কোনো রকম ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে এসডিই হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ ডিউটি না করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বেতন তুলেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আলাদিনের চেরাগের মতো প্রমোশনের পাশাপাশি শত কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিকও হয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই নির্বাহী প্রকৌশলী। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দিন তাঁকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে বদলী করে দেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেই সেই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী আবারও ঢাকায় বদলি হয়ে ফিরে আসেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই তিনি নানাবিধ অনিয়ম -দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা। অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গড়েছেন আলিশান বাসভবন। গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ৩০ বিঘারও বেশি জমি। তিনি গণপূর্তে ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত চাকরি না করেও এককালীন বেতন-ভাতা তুলেছেন। একই সময়ে তিনি বিআইডব্লিটিএ থেকেও বেতন তুলেছেন। কোনো সরকারি কর্মকর্তার জন্য এটি নজিরবিহীন ঘটনা।
রাজধানীর জিগাতলা কোয়ার্টারের কাজ না করিয়ে এসডিই এবং এসও এর মতামত সনদ ছাড়াই ঠিকাদারের সাথে টাকা ভাগাভাগি করে বিল তুলে নিয়েছেন এমন অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারে লাইটের মূল্য তিনগুণ দেখিয়ে এনার্জী প্লাস কোম্পানির সাথে যোগসাজশ করে লুটে নিয়েছে ৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে না করিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা লুটেপুটে খেয়ে কাজ অর্ধেক করে এবং কখনো কাজ না করেই পুরো টাকা তুলে নিয়ে ভাগাভাগি করেছেন এ কর্মকর্তা।
গণপূর্তের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর মোটা অংকের অর্থ চাঁদা দিয়ে ঢাকা বোট ক্লাবের মেম্বার হয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সেখানে উঠতি মডেল ও চলচ্চিত্র নায়িকা ছাড়াও অনেক আবেদনময়ী নারী শরাব শাবাব ও কাবাব নিয়ে আয়েসি সময় কাটান বলে একাধিক সূত্র দাবী করেছে। রাজশাহীতে পোস্টিং হলেও তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন দীর্ঘ সময়। কারণ ঢাকার অবাধ বিচরণ আর অবৈধ উপার্জন কোনটির সুযোগ মিলেনা রাজশাহীতে।
এছাড়া ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ঢাকায় ওয়ার্কিং ডিভিশনে পোস্টিং বাগিয়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সফল হন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর। এজন্য তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আস্থাভাজন লোকজনের বাসায় ধর্ণা দিয়ে এখনও চেষ্টা অব্যাহত রেখে বদলি হয়ে ঢাকায় ফিরেন। তিনি বর্তমানে কর্মরত (রিজার্ভ) সংযুক্ত হিসেবে গণপূর্ত ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ, ঢাকা।
এক অভিযোগে থেকে জানা গেছে, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, পাম্প অপারেটর, লিফট অপারেটর, সিসি ক্যামেরা অপারেটর, বড় বাবু বা হিসাব সহকারী, জেনারেটর অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য জনবল। ই/এম বিভাগ- ২ এর অধীনে উপ বিভাগ ৩ ও ৪ এর লোকবল অধিকাংশই রাজশাহীর যা জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন। অভিযোগ রয়েছে, এরা আর্থিক লেনদেনে নিয়োগপ্রাপ্ত। এর মধ্যে কিছু লোকবল কোন প্রয়োজন ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বেতন ছিল দ্বিগুণ, এমনকি ঠিকাদারের অধীনস্থ লোকবল দিয়ে চালিয়েছেন বড়বাবুর/সেকশন প্রধানের দায়িত্ব। তিনি ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতেন তাদেরকে। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে লোকবল নিয়োগ দিয়ে করাতেন ভুয়া বিল ভাউচার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্তের মাফিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রয়োজনে হয়ে যেতেন আইন প্রণেতা। তারই অংশ হিসেবে জয়েতি প্রকল্প সাব ডিভিশনই পরিবর্তন করে ফেলেন জাহাঙ্গীর আলম। সাব ডিভিশন- ৩ এর প্রকল্পের কিছু অংশ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন সাব ডিভিশন ৪ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সজলকে। যেমন: রোজগার্ডেনের কিছু অংশসহ বেঙ্গলি স্টুডিও’র দায়িত্বে আছে উপবিভাগ ৪। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সাইট পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হচ্ছে, হিসাব শাখা তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ বিল ভাউচার উপসহকারী প্রকৌশলী কিংবা বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। তথ্যমতে, রায়ের বাজার বধ্যভূমি উপকেন্দ্র সহ আনুষঙ্গিক কাজের বিল ও জিগাতলার ১০০০ বর্গফুট ২টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিল নিজ ক্ষমতা বলে প্রদান করেছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে। তবে বিষয়গুলো জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জাহাঙ্গীর আলম এর উপর ক্ষিপ্ত গণপূর্ত’র অধিকাংশ ঠিকাদার। জানা যায়, কোন ছোটখাটো ঠিকাদার জাহাঙ্গীর এর কাছে ভীড়তে পারতেন না। ছোটখাটো কোন ফিগারও তিনি নিতেননা। এই জন্যই ছোট ঠিকাদারের স্থান ছিল না তার কাছে। জাহাঙ্গীর আলম এর রেট ছিলো কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সবাইকে কাজ দিতেন এমনও নয়। হাতে গোনা দশ থেকে বিশ জন ঠিকাদারকে কাজ দিতেন। বাকি ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া টাকা ওই পোস্টিং এ শোধ করতে পারতেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, এরকম অসংখ্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে একই ফিগার নিতেন। সেক্ষেত্রে সবার টাকা কম কম করে শোধ করতেন। যার ফলে অধিকাংশ ঠিকাদার ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীর আলমের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের অধীনস্থ প্রায় একশ’ ঠিকাদার ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র দশ থেকে বিশ জন ঠিকাদার ছিলেন তার বাধ্যগত। এই গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, নারী সাপ্লাই ঠিকাদারেরাই রুম দখল করে রাখতেন সব সময়। তার অফিস কক্ষের দরজা খোলার দায়িত্বে রাখতেন একাধিক লাঠিয়াল অফিস কর্মচারী। হাজার টাকা বকশিশ দিয়েও কেউ ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতেন না। সাধারণ, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ঠিকাদাররা জাহাঙ্গীর এর রেট মোতাবেক টাকা খরচ করতে না পারায় বঞ্চিত হয়েছেন কাজ থেকে ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় উঠাকালীন সময়ে কাজের গাফিলতির কারনে এবং সঠিক মানের মালামাল সরবরাহ না করায় প্রধান বিচারপতি তার প্রতি ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। বাসযোগ্য উপযোগী না হওয়ায় এবং কাজের গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ায় প্রধান বিচারপতি সঠিক সময়ে বাসায় উঠতে পারেননি। মূলত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সৃষ্ট অনিয়মের কারনেই এই দুর্নীতিবাজ ও নারীলোভী জাহাঙ্গীর আলমকে বদলী করা হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তার অধীনস্থ উপ সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে দুই একজন তার কাছের ছিলেন। অন্য সব প্রকৌশলীরা তার বেপরোয়া চলাফেরা, আচরণ এবং সীমাহীন দুর্নীতি সহ্য করতেন না বলেই তাদের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করে বা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বদলির চিঠি দিতেন। এমনকি তিনি সফলও হতেন। সেই ভয়ে অন্য প্রকৌশলীরা তার অন্যায় নীরবে সহ্য করতেন। জাহাঙ্গীর আলম এর অধীনস্হ দুই জন মাত্র উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী। একজন নারী, আরেক জন পুরুষ। মন্ত্রী পাড়া জুড়িসডেকশনে পুরুষ এবং দুর্বল জুড়িডেকশনে নারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, নারী প্রকৌশলীর এই জায়গায় দুই বছরে চারজন উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নারীকে বদলী করা হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম এর কু-প্রস্তাব বা অন্যায় এবং দুর্নীতির কাজে রাজি না হওয়ায় তারা নিজ চেষ্টায় অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপ বিভাগ তিন এ জয়ন্তী নামের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে প্রত্যাশিত সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার পূর্বে সকল বিল সমাপ্ত করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে যে সকল কাজ হয়নি সে সকল কাজের বিল দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে উক্ত প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে দায়িত্ব বদল করে উপ বিভাগ-৪ কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি তার টার্গেট পূর্ণ করেন। যা গণপূর্ত’র বিধানে সাইড ডিস্টিভিশন করার এখতিয়ার শুধু মাত্র পারেন প্রধান প্রকৌশলী।
বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, উপ বিভাগ-৪ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে তার ছিলো সখ্যতা এবং সব কাজের ভাগাভাগি সম্পর্ক। এমনকি অধিকাংশ কাজেই তাদের দুজনের ঠিকাদার ছিলো নামে মাত্র। পূর্ত ভবন বেইলি রোডের ভবনের কাজ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজেই করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, যেকোন কাজের বিল দেয়ার আগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম এর বনিবনা না হলে তার পছন্দের প্রকৌশলীকে অর্ডার করে বিল প্রস্তাবের নির্দেশ দিতেন। সময়ের ব্যবধানে দায়িত্ব বদল করতে না পারলে দায়িত্বরত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই নিজ ক্ষমতা বলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করতেন। এর প্রমাণ হিসেবে রায়ের বাজার বধ্যভূমির উপকেন্দ্র সহ আনুষাঙ্গিক চতুর্থ আর/ এ বিলের উপ প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে ও ঝিগাতলা প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিলই দায়িত্বগত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিল দুটো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারিখ পরিবর্তনসহ বিলে সই করার পায়তারা করছেন জাহাঙ্গীর আলম।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ নয় বছর সরকারের বিশেষ বিশেষ স্থাপনা পরিচালনা করতেন উপর মহল ঠিক রেখে। ওই মহলকে ঠিক রাখতে খরচ করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই অর্থ আসতো ভুয়া প্রাক্কলন এবং ভুয়া বিলের মাধ্যমে। অথচ ভবনের সমস্যা সমস্যাই থেকে যেতো। বিল প্রদান করার জন্য হিসাব শাখাটি ছিলো তার অনুগত। তাদের খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন তিনি। চেষ্টার অংশ হিসেবে হাজার হাজার ভূয়া ভাউচারে লাখ লাখ টাকার সুবিধা দিয়েছেন। এমনকি হিসাব শাখার কর্মচারীদের বাসায় এসির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজ শেষ হবার আগেই ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে নিজের ক্ষমতাবলে বিল দিয়েছেন। এছাড়াও নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এমন অভিযোগও আছে। জাহাঙ্গীরের ক্ষমতার দাপটে অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী মুখ বন্ধ করে কাজ করতেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন তিনি। একমাত্র তিনি এবং তার দুই অনুগত কর্মকর্তা লাভবান হয়েছেন। তিনি ছিলেন একক আধিপত্য’র অধিকারী।
জানা যায়, পিডব্লিউডির ইএম-২ ডিভিশনে চাকরি করে জাহাঙ্গীর আলম শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তার ইচ্ছেমতো বা মনমতো কোন কর্মকর্তা না হলে তাদের বিরূদ্ধে বেনামে অভিযোগ দায়ের করে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করিয়ে ফায়দা হাসিল করতেন।
জিগাতলা প্রকল্পের এক হাজার বর্গফুট এর দুইটি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও মাহবুব কনস্ট্রাকশন এখনো কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। একইভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের লাইট এর মূল্য তিন গুণ বেশি দেখিয়ে এনার্জি প্লাস এর সাথে যোগসাজশ করে সেখানেও ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এরকম অসংখ্য কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কখনো অর্ধেক আবার কখনো কাজ না করিয়েই বিল উত্তোলন করেছেন অহরহ। মাত্র নয় বছর গনপূর্ত অধিদপ্তরে চাকরি করে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে জাহাঙ্গীর আলম এখন শত কোটি টাকার মালিক।
গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ডিভিশনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এরকম বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। গুরুতর এসব অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তার সহকর্মীদের মুখ থেকে শোনা যায়, জাহাঙ্গীর এর নিজ এলাকায় এমন কোন জমির খতিয়ান নাই যেটা তার নয়। জাহাঙ্গীর আলম বিলাসী জীবন যাপন সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি উচ্চাবিলাসী এবং মনোরঞ্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। সরকারি ছুটির দিন তার জন্য ঈদ। ঢাকায় একেক ঠিকাদার একেক রিসোর্টে সুন্দরী রমনী দিয়ে তার আনন্দ ও মনোরঞ্জন করাতেন। তিনি বোট ক্লাবে দশ লাখ টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ নিয়েছেন এমন খবরও শোনা গেছে।
হিসাব শাখার সুবিধাবঞ্চিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বাধ্যগত একজন প্রকৌশলী যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে তার ১০ গুন সুবিধা তিনি দিয়েছেন হিসাব শাখার একজন কর্মচারীকে। তদন্তে এর কিছু নজিরও পাওয়া গেছে। কিন্তু বিন্দুমাত্র তথ্যও প্রদান করতে রাজি নয় সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র। দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলমের ডিভিশনে দুই জন এস্টিমেটরের পদ থাকলেও দায়িত্বে ছিল একজন। তার অতিরিক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাওয়াতে উক্ত কর্মকর্তাকে সরিয়ে উপ বিভাগ-৪ এর দায়িত্ব প্রদান করেন উক্ত উপবিভাগের সেকশনে নিয়োজিত জুনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন। এতে সুবিধা হয়েছে যে, সাইটে প্রাকলন প্রস্তুত করেন তিনি এবং তিনিই চেক করেন যাতে করে বেশি পরিমাণ দুর্নীতি করা যায় ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোজ নিয়ে জানা যায়, অসংখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন এই দপ্তরে। কিন্তু কারো অফিস কক্ষের সামনে এত পরিমান ঠিকাদার অপেক্ষমান থাকতে দেখা যায়নি যা জাহাঙ্গীর আলম এর সময় দেখা গেছে। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষের সামনেও এভাবে ভিড় জমাতেন না ঠিকাদাররা।
‘সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা পেলেন চুয়াডাঙ্গার সন্তান এইচ এম হাকিম’
স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন শির্ষক আলোচনা শেষে সারা বাংলাদেশ......বিস্তারিত