জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতি দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিলেন রিজওয়ানা হাসান

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

আরমান চৌধুরী: জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে ন্যায্য জলবায়ু দায়িত্ব পালনের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আজ সকালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত মেঘনা নলেজ ফোরাম II (MKF II)-তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “বিশ্বের উন্নয়ন ভাবনাকে অবশ্যই বদলাতে হবে—যেখানে অল্প সম্পদ নির্ভরতা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানই হবে ভবিষ্যতের রূপরেখা।”

বাংলাদেশের নদী এবং জাতীয় পরিচয়ের গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নদীর দেশ বললে ভুল হবে না। নদী ও নদীর পরিবেশ আমাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

তার বক্তব্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় “নদীর অধিকার” প্রসঙ্গ। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের নদীগুলোকে কেবল আমাদের টিকে থাকার উপাদান হিসেবে নয়, তাদের নিজস্ব অধিকার সুরক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দেখতে হবে। তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নদীকে আইনি অধিকারভুক্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া শুরু হয়েছে—এই ধারাকে আরও বিস্তৃত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা জরুরি।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অঞ্চল সম্পর্কে তিনি বলেন, হাওর বাংলাদেশের একটি অনন্য প্রতিবেশব্যবস্থা। কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল হিসেবে হাওরের বহুমাত্রিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই অঞ্চল এখন পরিবেশ দূষণ, বালু উত্তোলন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও ঘনঘন আকস্মিক বন্যার হুমকিতে রয়েছে।

তিনি এও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় কার্যকর পূর্ব-সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারার ফলে প্রকৃতির আঘাত আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এ প্রেক্ষাপটে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রবাহ ব্যবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

উপদেষ্টা আরও জানান, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদী ও হ্রদ সুরক্ষা কনভেনশন-এ সম্পৃক্ত হয়েছে—যা এই অঞ্চলে পরিবেশ নেতৃত্বের প্রতীক। তবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সার্ক এখনো নদীকে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে, যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পথে বড় বাধা।

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, যখন সরকারগুলো পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন এমন ফোরামগুলোতে কমিউনিটির কণ্ঠস্বর ও জ্ঞানই হতে পারে জলবায়ু সহনশীলতার পথনির্দেশক।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ইন্দ্র মণি পান্ডে (সেক্রেটারি জেনারেল, বিমসটেক), ড. পাই-চি লি (প্রেসিডেন্ট, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি), ড. দিন্দো ক্যাম্পিলান (আঞ্চলিক পরিচালক, আইইউসিএন, এশিয়া), রাকিবুল আমিন (প্রধান, প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট, আইইউসিএন, এশিয়া), ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী (বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, থাইল্যান্ড), বিশ্বরঞ্জন সিনহা (সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, আইইউসিএন, সাউথ এশিয়া), জন স্যামুয়েল (আঞ্চলিক পরিচালক, অক্সফাম এশিয়া), এবং ড. মেধা বিশ্বাস (সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি)।

সংবাদটি শেয়ার করুন...