পতনের বৃত্তে আটকে শেয়ারবাজার: সতর্কতার ঘণ্টা বাজছে

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৩ দিন আগে

দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আবারও সতর্কবার্তা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় সব খাতেই পতনের ধারা অব্যাহত থাকে। মূল সূচক ডিএসইএক্স ৪০ পয়েন্ট কমে ৪,৯২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ও ডিএসই-৩০ সূচকও নিম্নমুখী। এমন পতনের মধ্যেই ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমে ৩৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় নেমেছে, যা ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

শেয়ারবাজারের পতন কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের প্রতি মানুষের আত্মবিশ্বাসের সূচকও। সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে বড় দরপতনের পর তৃতীয় কার্যদিবসে সামান্য উত্থান দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার বাজার ফের নিম্নমুখী হয়েছে। দিন শুরুতে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেলেও আধাঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়, এবং অধিকাংশ শেয়ারের দাম হ্রাস পায়।

দরপতনের ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যমেয়াদি আশঙ্কা ও লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির তুলনায় ক্ষুদ্র ও জেড গ্রুপের শেয়ারে অতিরিক্ত চাপ। ডিএসইর বড় খাতের মধ্যে ভালো কোম্পানি বা উচ্চ লভ্যাংশ প্রদানে সক্ষম ১৮টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কিন্তু ১৬৮টি প্রতিষ্ঠান দরপতনের মুখোমুখি হয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, শুধু কোম্পানির বর্তমান পরিস্থিতি নয়, বাজারে বিনিয়োগকারীর মনোভাবও শেয়ারের দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই পরিস্থিতি। সিএসইর সার্বিক সূচক ১১৪ পয়েন্ট কমেছে, এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও লেনদেনের সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারের এই পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিচ্ছেবাজারে স্থায়ী উত্থানের জন্য এখন কেবল কোম্পানির মৌলিক পরিস্থিতি নয়, বরং নিয়ন্ত্রক নীতি, বাজারে স্বচ্ছতা, এবং বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস পুনঃস্থাপন করা জরুরি।

এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের উচিত হঠাৎ দুশ্চিন্তা বা তাড়াহুড়ো করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত না নেওয়া। বাজারের ওঠা-নামা স্বাভাবিক, কিন্তু ধারাবাহিক পতনের সময় মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও কম নয়। বাজারের স্বচ্ছতা, তথ্যের পূর্ণতা এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি।

শেয়ারবাজার একদিন আবারও স্থিতিশীল হতে পারে, কিন্তু সেই দিন আসার জন্য সময় ও দায়িত্বশীলতা দুটোই প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীর ধৈর্য, কোম্পানির মৌলিক শক্তি এবং নিয়ন্ত্রক নীতি মিলিতভাবে বাজারকে উত্থানে সাহায্য করবে। তবে বর্তমানে আমরা যে পতনের বৃত্তে আটকে আছি, তা শুধুই সতর্কবার্তা নয়এটি একটি শিক্ষা, যা বিনিয়োগকারীদের, কোম্পানিদের এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন...

  • অর্থনীতি
  • ডিএসই
  • ডিএসইএক্স সূচক
  • ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
  • দরপতন
  • বাজার বিশ্লেষণ
  • বিনিয়োগকারীর আস্থা
  • লেনদেন কমে যাওয়া
  • শেয়ার দরপতন
  • শেয়ারবাজার
  • শেয়ারবাজার পতন
  • শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ
  • শেয়ারবাজার সংবাদ
  • সিএসই
  • স্টক মার্কেট বাংলাদেশ