TadantaChitra.Com | logo

২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুমি ইসলামের কবিতাগুচ্ছ (পর্ব-২)

প্রকাশিত : মে ০২, ২০১৯, ১৮:৫৭

সুমি ইসলামের কবিতাগুচ্ছ (পর্ব-২)

………………………
বাবা
………………………
বাবা তোমায় মনে পরে,
ছোট্ট বেলায় খেলার ছলে
ঘোড়া সেজে পিঠে নিতে,
ঘুমের ঘোরে ভয় পেলে
বুকের ভেতর জড়িয়ে নিতে।
একটু খানি কান্না শুনে
কোথায় থেকে ছুঠে এসে
চোখের পানি মুছে দিতে।
জ্বরের ঘোরে প্রলাপ শুনে
তুমি কেমন আতকে উঠে
চোখের পানি ছেড়ে দিতে।
কইগো বাবা আজ তুমি
ফিরে আসো না
তোমার ছেলে কান্না করে
শুনতে কি পাওনা।
এটি লেখা হয়েছে….১৫.১২.২০১৮ ইং।
………………………………………..
এখানে কি কোন মানুষ থাকতে পারে
………………………………………..
এখানে কি কোন মানুষ থাকতে পারে,
এই নির্দয় নিষ্প্রাণ যন্ত্রমানবের দেশে?
এখানে মানুষেরা এক সাথে হেঁটে যায় কিন্তু কেউ কাউকে চেনে না
কেউ কাউকে দেখার প্রয়োজন মনে করেনা ।
আত্বকেন্দ্রীক মানুষগুলো সমালোচনায় ব্যাস্ত দিনময়,
শহর জুড়ে কেবল অচেনা অজানা মানুষের কোলাহল,
গাড়ির কর্কশ হর্ণ, কালো ধোঁয়া, আর রাস্তাঘাটে নোংরারস্তুপ।
একানে সকালে ঘুঘুর ডাক শুনি না
রাখাল আজ বাঁশি বাজায় না,
মাঝি মনের সুখে গান গায়না ।
এই মানুষদের ভিড়ে আজ পাখিদের ওড়াউড়ি নেই,
কোথাও দেখিনা শিশির ভেজা ফুলের উপর গঙ্গাফড়িং খেলা করে।
ফুলেদের গন্ধ নেই, প্রজাপতির আর ফড়িং এখন আর খেলা করে না,
দখিনা বাতাসে আজ আর ক্লান্ত দেহ জুড়িয়ে যায় না,
এখানে তো কোন মানুষ থাকতে পারেনা।
এখানে শিশুরা হাসে না, পাখিরা গান করে না।
এখানকার মানুষেরা মানুষের কষ্ট বোঝেনা, দুঃখ বোঝেনা
এরা মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা করে, মজা করে মানুষের দুঃখ নিয়ে,
সবাই কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছে এখানে,
এ যন্ত্রমানবদের ভীড়ে কোন মানুষ থাকতে পারে না।
এদের মাঝে আজ ভালোবাসা নেই, মমতা বোধ নেই
আজ এখানে ভাই ভাইকে গালি দেয়,
জন্মদাত্রীকে রাস্তায় ফেলে যায় সন্তান।
এখানকার মানুষের নিশ্বাসে আজ বিষের তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
এখানে বুটের আঘাতে রক্তঝড়ে,
শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে অপমান সইতে না পেরে,
ছাত্ররা বই রেখে রাস্তায় নামে, দেশ পরিস্কারের জন্যে
আজ এদেশের মানুষ শিক্ষার নামে পকেট ভরে।
বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানীর পেছনে
এখানে মানুষেরা মানুষকে রোজ রাতে হত্যা করে
আর মানুষের রক্তে ওরা গোছল করে,
লাশের স্তুপ দেখে অনন্দ পায়, ওরা অট্টহাসি হাসে লাশ দেখে
লাশের উপরে ওরা নৃত্য করে মনের সুখে,
আহা কি নির্দয় এখানের মানুষগুলো ,
ছি, এখানে কোন মানুষ থাকতে পারে না কখনও না, কোনদিনও না।
কবিতাটি লেখা হয়েছে…..১১.১২.২০১৮ ইং।
…………………………
খুঁজে পাই তোমাকে
…………………………
খুঁজে পাই তোমাকে আমার স্মৃতিদের ভীড়ে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার একলা চলার মাঝে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার মন খারাপের রাতে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার অসুখে বিসুখে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার কবিতাদের ভীরে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার জমে থাকা কথার ভীড়ে।
খুঁজে পাই তোমাকে বালিকার চুড়ির রিনিঝিনি সুরে
খুঁজে পাই তোমাকে ভোরের শিশির বিন্দুতে
খুঁজে পাই তোমাকে বকুল ফুলের মালাতে
খুঁজে পাই তোমাকে বেলী ফুলের সৌরভে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার ক্লান্ত দুপুরে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার বিষন্ন বিকেলে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার আঁধার রাতে নীলিমাতে
খুঁজে পাই তোমাকে জোৎস্না স্নাত রাতে
খুঁজে পাই তোমাকে ঝুম বৃষ্টিতে
খুঁজে পাই তোমাকে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাতে
খুঁজে পাই তোমাকে রংধনুর সাত রঙের মাঝে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার নিস্তব্ধতার মাঝে
খুঁজে পাই তোমাকে আমার কান্নার জলে
খুঁজে পাই তোমাকে কিশোরীর মিষ্টি হাসিতে ।
……………………………………..
আকাঙ্ক্ষার ঝুল বারান্দা
……………………………………..
মাঝ দুপুরে আকাঙ্ক্ষার ঝুল বারান্দায়
যখন তাদের দেখা হয়
মেয়েটি তখন হয়ে যায় ১৬ বছরের কিশোরী
আর ছেলেটি তখন চল্লিশ বছরের টগবগে যুবক।
প্রতিদিন তপ্ত রোদে মেয়েটি ঝুল বারান্দায় রৌদ্দ্রু খেতে আসে
সেই সময় কিশোরীটির বাড়ির সামনে
প্রতিদিনের ন্যায় ছেলেটির সাইকেলের চেইন পড়ে যায়,
ঝুম বৃষ্টিতে কিশোরীটি পুকুর থেকে জল নিতে আসে
ঠিক তখনই কিশোরের বাড়ির জলের ট্যাঙ্কি খালি হয়ে যায়
ভরা পূর্ণিমাতে কিশোরীটি রাধা হয়ে ঘড় ছাড়া হয়,
আর কিশোরটি বংশী হাতে কৃষ্ণ হয়ে কদম তলায় বাঁশি বাজায়।
………………………
অপেক্ষায় থাকি  
………………………
আমি অপেক্ষায় থাকি শিউলি ফোটা ভোরের
আমি অপেক্ষায় থাকি শিশিরের,
শীতের প্রথম প্রহরে যখন সন্ধ্যা নামে,
আমি অপেক্ষায় থাকি ঘন কালো মেঘের
অবাক করা রিনিঝিনি শব্দে যখন বৃষ্টি নামে।
আমি অপেক্ষায় থাকি,
সেই ভরা পূর্ণিমার, যখন নাগ-নাগিনী
পদ্ম পাতায় এক হয়ে খেলায় মত্ত থাকে।
আমি প্রতীক্ষায় থাকি শুধুই তোমার,
হঠাৎ কোন একদিন আমায় অবাক করে
তুমি আসবে বলে ৷
নীল অপরাজিতা শাড়ি, রয়েছি খোলা চুলে,
বেলি ফুলের মালা এনে খোঁপা সাজাবে বলে।
সপ্নিল আবেগে আর প্রজাপ্রতির ডানায় ভর করে
উড়ে যেতে চাই আজ-তোমার কাছে ৷
হৃদয় মাঝে তীব্র হাহাকার,
তৃষ্ণার্থ কোন পাখির মতন।
একটি বার তোমাকে দেখতে পাবো সেই প্রতীক্ষায়,
হয়তো স্বপ্নে, নয়তো বাস্তবতায়
অথবা অনন্তকাল তোমারই ফেরার প্রতীক্ষায়৷
কবিতাটি লেখা হয়েছে…..৮.১২.২০১৮ ইং।
…………………………………
একবার তুমি হাতটা যদি ধরো
…………………………………
একবার আমার হাতটা যদি ধরো
তোমায় এনে দেবো আকাশের নীলের সাথে
গাড়ো রঙের অপরাজিতা,
আরো দেবো কানামাছি আর বৌচি খেলার সেই মধুর ছোট্টবেলা,
ঘন অন্ধকার করে দেবো উজ্জ্বল আলোর ভোর
মরা নদীতে খুলবে তখন নতুন যৌবনের দোর।
একবার তুমি হাতটা যদি ধরো
খড়া চৈত্রকে বানিয়ে দেবো শ্রাবনের এক ভর দুপুর ।
ঝুম বর্ষায় নুপুর পায়ে নাচবো আমি আর-তুমি দেখবে মুগ্ধ নয়নে ।
তুমি আমার হাতটা যদি ধরো
চারিদিকে ধূ ধূ হাহাকার, ফাটা চৌচির শস্যের মাঠে
নতুন করে জন্ম নেবে হলুদ সরিসার বন।
মৌমাছি আর ভ্রমর মিলে করবে খেলা ভরবে সবার মন।
একবার যদি তুমি হাতটি আমার ধরো
লিখে যেতে পারবো হাজারটা পদ্য
রচনা করবো তোমার আমার
প্রেমের অনাবদ্য এক গদ্য।
কবিতাটি লেখা হয়েছে….৮.১২.২০১৮ ইং।
……………………
নীল শাড়ি নীল চুড়ি
……………………
আজও  অপেক্ষায় আছি
একটা নীল শাড়ী আর এক গাছি কাচের চুড়ির,
শিশির পরা পাগল করা কোন এক ভোরে
তোমার দেওয়া নীল শাড়ী নীল চুড়ি আর খোপায় বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে
সোনার নূপুর পায়ে হাতটি ধরে হাঁটবো তোমার সাথে
খোলা মাঠে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের মাঝে।
অথবা কোন এক ভরা পূর্নিমার মাতাল করা রাতে
সমুদ্রের তীর ঘেষে খোলা আকাশের নীচে নির্ভরতার ঘাড়টিতে মাথা রেখে
কাটিয়ে দেবো সারাটা রাত।
হঠাৎ করে বড় একটা ঢেউ এসে আছড়ে পড়বে পায়ের উপর
আমি চমকে উঠে তোমায় আরো জোরে জড়িয়ে ধরবো
সেই মায়াবী রাতটার অপেক্ষায় আজও,
এখন আর নেই কোন ব্যাস্ততা, নেই কোন অযুহাত
এখন শুধু তোমারই অপেক্ষা
আর সেই নীল শাড়ি নীল চুড়ির আকাঙ্খা।
কবিতাটি লেখা হয়েছে…..১৫,১২,২০১৮ ইং।
………………….
তীব্র আকাঙ্খা
………………….
আমি তোমার আকাশ হবো
নীল সাদা মেঘে আমাকে সাজিয়ে দিও তুমি
ঠিক তোমার মনের মতন করে,
আমি তোমার ভরা পূর্ণিমা হবো
আমার মায়াবী আলোয়
তুমি নিজেকে পরিপূর্ন করে নিও।
আমি তোমার দক্ষিনা হাওয়া হবো
আমার মাতাল করা হাওয়া, ভেসে যাবা তুমি
হাওয়া ওরে যাবে ধানী রঙের শাড়ির আঁচল
সেই আঁচলের তলে খুজে নিও তোমার স্বপ্নের নীড়।
আমি শুধু তোমার নদী হবো
যার শীতল জলে
তপ্ত মনটা তোমার শীতলতায় ভরে যাবে।
সেই নদীর বুকে তুমি তরী হয়ে ভেসে যেও আজানা কোন দেশে।
এই কবিতাটি লেখা হয়েছে….১৬.১২.২০১৮ ইং।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।