TadantaChitra.Com | logo

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদছেন মা!

প্রকাশিত : জুন ০৫, ২০১৯, ১৫:৩০

বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদছেন মা!

আসমা বেগম। বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর জেলায়। স্বামী হারিয়েছেন ১৮ বছর আগে। এরপর দুই ছেলেকে অনেক কষ্টে লালন পালন করেছিলেন। বর্তমানে তার দুই ছেলেই স্থানীয় ঠিকাদার। নিজেদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুই ছেলে আরাম-আয়েশে আলাদা জীবন যাপন করছেন।
কিন্তু অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হয়নি কোনো ছেলের ঘরেই। ছেলে ও ছেলের বউদের ওপর অভিমান করে ১৬ মাস আগে ঘর ছেড়েছেন মা আসমা বেগম। পথে-ঘাঁটে ঘুরে এখন তার ঠিকানা রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকার চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা আসমা বেগম ও বৃদ্ধাশ্রমের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আসাম বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। আমার স্বামী এলাকায় ভালো ব্যবসা করতো। আমাদের দুই ছেলে। আমার স্বামী মারা গেছেন ২০০১ সালে স্ট্রোক করে। তখনও আমার ছেলেরা খুব একটা বড় হয় নাই। স্বামী মরার পরে অনেক কষ্টে তাদের বড় করছি বাবা। কিন্তু ছেলেরা বিয়ে কইরা সব পর হইয়া গেল। ছেলের বউ আমারে দেখতে পারে না, কথায় কথায় গালি গালাজ করে। ছেলেরাও কোনো কিছু বলে না। তারাও একই ব্যবহার করে। আমারে বাড়িতে থাকতে দিবে না। বয়স্ক মানুষ কি করমু, কই যামু। সব সহ্য কইরা এত বছর তাদের সাথেই ছিলাম। কিন্তু আর পারি নাই…’ বলেই হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়েন আসমা বেগম।
আপনার ছেলেদের পেশা কি, তাদের আয়-উপার্জন কেমন জানতে চাইলে আসাম বেগম বলেন, ‘বাবা রে, বড় ছেলে বিক্রমপুরে ঠিকাদারি করে। ম্যালা টাকা কামায়। আর ছোট ছেলেটাও ঠিকাদার। কিন্তু সে বউ নিয়া শ্বশুর বাড়িতে থাকে। আমার দুই ছেলের ঘরে এখন ৫ জন নাতি–নাতনী। সবার কথাই মনে পড়ে।’
কীভাবে বৃদ্ধাশ্রমে আসলেন জানতে চাইলেন তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হইয়া গাজীপুর একটা বাড়িতে দুইটা ছোট বাচ্চারে প্রাইভেট পড়াতাম। কারণ আমি বিয়ের পরে এইচএসসি পাশ করেছিলাম। একটু শিক্ষিত আছি তো। কয় মাস পড়াইয়া, তাই দিয়া একা একা খাইতাম, থাকতাম। কিন্তু বেশি দিন পারি নাই। পরে আমার বোনের বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম। আমার সেই বোনের ছেলেরাই আমারে এখানে দিয়া গেছে। এখন এখানেই থাকি। ছেলেরা তো কেউই কোনো খোঁজ খবর নেয় না।’
ঈদের সময় ছেলেরা কাপড় কিনে দিত কি না? ভাল খাবার দিত কি না? জানতে চাইলে আসমা বলেন, ‘তিন বছর আগে আমার বড় ছেলে আমারে একটা গোলাপি রঙের শাড়ি কিনে দিছিলো। এরপর গত দুই ঈদে কিছুই দেয় নাই। আর এই ঈদে তো তারা, আমার খবরই নেয় নাই।’
এবার ঈদে নতুন শাড়ি চান কি না জানতে চাইলে আসাম বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের দেয়া গোলাপি রঙের শাড়িটাই অনেক ভালা। আমার আর শাড়ি লাগবো না, বাপজান’ বলে আবারও হু হু করে কান্না শুরু করেন আসমা বেগম।
অসহায় ও আশ্রয়হীন বৃদ্ধদের খুঁজে খুঁজে নিজের গড়ে তোলা ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে’ আশ্রয় দেন বৃদ্ধাশ্রমের মালিক মিল্টন সমাদ্দার। মূলত নিজের ব্যক্তিগত উপার্জনেই ৩২ বছর বয়সী এই যুবক চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি। নিজের ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সকল বৃদ্ধাদের ভরণপোষণ করান তিনি। আর তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী মিঠু হালদার। শুধু বৃদ্ধ নয় মানসিক ভারসাম্যহীন ও প্রতিবন্ধীদেরও আশ্রয় দেন তারা। এমনকি মৃত্যৃর পর তাদের দাফন-কাফনের দায়িত্বও পালন করেছেন এই দম্পতি।
বৃদ্ধ ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য রাজধানী কল্যাণপুর এলাকায় একটি ছয় তলা বাড়ির নিচতলার দুই ইউনিট ও আরেকটি দোতলা বাড়ির নিচ তলার পুরোটা নিয়ে তৈরি করছেন চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামক ওই বৃদ্ধাশ্রমটি। তার প্রতিষ্ঠানে ১৫ কর্মী রয়েছেন। যারা এসব বয়স্ক বাবা-মায়ের দেখাশোনা করেন। বর্তমানে মোট ২৩ জন বাবা ও ৩২ জন মা মিলে মোট ৫৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন এই বৃদ্ধাশ্রমে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।