জাহিদ হাসান: এবারের বাজেটকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছরের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আমাদের প্রতি আস্থা বেড়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে গত ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে।’
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। রীতি অনুযায়ী প্রতিবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে বলেছেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের মানসিকতা অসুস্থ তাদের কিছুই ভালো লাগে না। সব কিছুতেই তারা কিন্তু খোঁজে। তারা কী গবেষণা করেন আমি জানি না। একটা কিছু বলতে হবে। তাই বলেছে। এটা একটা অসুস্থতা।’
সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষ খুশি কিনা তা দেখতে হবে। এটা আমাদের ১১তম বাজেট। যতটুকু আমি বলেছি তার থেকে অনেক বেশি কিছু রয়েছে বাজেটে। ভালো না লাগা পার্টি যারা তাদের কোনও কিছুই ভালো লাগবে না। উনাদের সেই অসুস্থতা। ভালো সমালোচনা করলে আমরা গ্রহণ করবো আর মন্দ কথা বললে ধর্তব্যে নেবো না।’
কৃষিখাতে সরকারের ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রণোদনা থাকবে। কৃষি ভুর্তকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে।
তিনি জানান, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ ধরে সেভাবে সরকার কাজ করছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির প্রেক্ষিতে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতে সরকারে সামগ্রিক লক্ষ্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জ্ঞান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদেরও আধুনিক বিশ্বের সমতুল্য করে তোলা হবে। এছাড়া মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করাও সরকারের লক্ষ্য।
স্বাস্থ্য খাতকেও সরকার অন্যতম গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন করে সেবা নিয়ে থাকে, এর ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সেবাও নিশ্চিত করা হবে।
দেশের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো, সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বর্তমান অর্থবছরে ছিল ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য খাতেও কেবল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নয়, মোট ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এই খাতে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ০২ শতাংশ ও বাজেটের ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য একশ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করতে স্টার্টআপের জন্যও একশ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পরে একে একে প্রতিটি খাত ঘিরেই সরকারের পরিকল্পনা এবং বাজেটে খাতগুলোর বরাদ্দ ও অন্যান্য তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট পেশ করা হয়। এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
‘ভাঙ্গায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত’
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের......বিস্তারিত