প্রেম প্রত্যাখ্যান: তরুণীর গায়ে আগুন!

মোঃ সালাউদ্দিন আহমেদঃ নরসিংদীতে তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাইয়ের শ্যালক সঞ্জিত রায়কে আটক করেছে পুলিশ। সঞ্জিত প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফুলন রানী বর্মণের গায়ে আগুন দিতে পারে- এমন সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছে। ফুলনদের ভিটে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষও এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সন্দেহ পরিবারের। প্রেম-সংক্রান্ত বিষয়সহ সম্ভাব্য কারণ সামনে রেখেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লায় বাড়ির পাশে ফুলনের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দু’জন। তাকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার বুক থেকে মাথা পর্যন্ত ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আগুনের ঘটনায় ফুলনের বাবা যুগেন্দ্র বর্মণ গতকাল শুক্রবার নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় দু’জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন ফুলন। মাথার চুল পুড়ে যাওয়ায় কেটে ফেলা হয়েছে। বুক থেকে গলা পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার। তার বড় বোন দুলন রানী বর্মণ জানান, রাত ৮টার দিকে বাবার সহকর্মী শাজাহান মোক্তার তাদের বাড়িতে আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ফিরে যাওয়ার সময় ফুলন তার সঙ্গে দোকানে যান কেক কিনতে। কেক কিনে ফুলনকে বাড়ির গলির মুখে পৌঁছে দিয়ে শাজাহান চলে যান। অন্ধকার গলি ধরে একাই বাড়িতে ফিরছিলেন ফুলন। এ সময় দু’জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত হাঁটা শুরু করেন তিনি। তাদের পাশ কাটিয়ে বাড়িতে ঢোকার মুখেই ওই দু’জন তার মুখ চেপে ধরে বাড়ির পাশেই একটি খোলা জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে মাথায় কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। অন্ধকার থাকায় তাদের চিনতে পারেননি ফুলন। পরে স্বজনরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ফুলনের শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই সুমন বর্মণের শ্যালক সঞ্জিতকে আটক করেছে পুলিশ। রঞ্জিতের বাড়ি রায়পুরা উপজেলার বটতলী গ্রামে। সে মাদকাসক্ত। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মাদক মামলাও রয়েছে।

নরসিংদী মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সঞ্জিত মেয়েটিকে

উত্ত্যক্ত করত। ফোনেও বিরক্ত করত। তাকে নরসিংদীর ডিবি পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় দু’জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। প্রেম-সংক্রান্ত বিষয়সহ সম্ভাব্য কারণ সামনে রেখে তদন্ত চলছে।

ফুলনের ভাই সুমন বর্মণ বলেন, ফুলনের সঙ্গে সঞ্জিত মাঝে মধ্যে ফোনে কথা বলত। এর বাইরে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। ফুলনের কয়েক প্রতিবেশী সমকালকে জানিয়েছেন. ফুলনের সঙ্গে সঞ্জিতের প্রায় দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি ফুলন তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন এবং অন্য এক ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। এ নিয়ে তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন সঞ্জিত।

ফুলনের মা অঞ্জলী রানী বর্মণ জানান, তার স্বামীর মামাতো ভাইদের সঙ্গে তাদের ভিটে জমি নিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে মাস দুয়েক আগে সালিশ হয়। সে সময় ফুলন কড়া কথা বলেন তাদের বিরুদ্ধে। এ কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা তার।