TadantaChitra.Com | logo

২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে?

প্রকাশিত : জুলাই ১২, ২০১৯, ১৮:৩৬

খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে?

৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার যে সময়সীমা ছিল, তা ঘনিয়ে আসার আগ মুহূর্তে গত এপ্রিলের মধ্যভাগে গুঞ্জন ওঠে, প্যারোল নিয়ে ঈদের আগেই দেশের বাইরে যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া।

রাজনীতির নানা হিসাব-নিকাশ সামনে রেখে ওই গুঞ্জন আস্থা রাখেন অনেকেই। ওই সময় ধারণা করা হয়েছিল, বিএনপির নির্বাচিত ছয় প্রার্থীর শপথ গ্রহণ এবং প্যারোলে মুক্তি নিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসছে প্রধান দুই দল।

৯০ দিন সময় সমীয় পার হওয়ার ৪ ঘণ্টা আগে গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় সংসদে গিয়ে শপথ নেন বিএনপির চার সংসদ সদস্য। এর পর দেড় মাস পার হয়ে গেলেও খালেদা জিয়ার জামিন বা প্যারোলের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আইনি জটিলতায় আটকে যাচ্ছে জামিন। আর খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ অবস্থানের কারণে ‘প্যারোল’ আলোচনার পালে হাওয়া লাগছে না। অর্থাৎ প্রধান দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা আপাতত নয়।

এখন প্রশ্ন উঠছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি তাহলে কোনো পথে? আইনি প্রক্রিয়ায়? রাজপথের আন্দোলনে? নাকি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাহী আদেশে (প্যারোল)? এসব প্রশ্নের উত্তর নেই বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য তার আইনজীবীরা আদালতের বারান্দায় প্রতিদিনই দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। একটি মামলায় জামিন হলে, অন্য মামলায় আটকে যাচ্ছে মুক্তির পথ। অথবা নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন আদেশ উচ্চ আদালতে আটকে যাচ্ছে। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া শিগগির মুক্তি পাবেন— এমনটি বিশ্বাস করেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। তারপরও আইনি মারপ্যাচে তার মুক্তি আটকে যাচ্ছে। ফলে তার মুক্তি রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই আদায় করতে হবে বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বাধা ও কূটকৌশলের কারণে সেটা আটকে যাচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, চেষ্টা চালিয়ে যাব। কিন্তু ফায়সালাটা রাজপথেই হতে হবে।’

তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের চার জন নেতার সঙ্গে একান্ত আলাপে জানা গেছে, বর্তমান যে সাংগঠনিক অবস্থা, তাতে করে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা বিএনপির পক্ষে সম্ভব না। বরং দলকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত করে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে গত ২ মার্চ থেকে সাংগঠনিক জেলার ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন তারেক রহমান। এরই মধ্যে বেশিরভাগ সাংগঠনিক জেলার পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলো শিগগরিই ঘোষণা করা হবে।

কিন্তু সাংগঠনিক জেলাগুলোতে নতুন কমিটি ঘোষণার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির কী সম্পর্ক?— এ প্রশ্নটিও উঠেছে নানা মহল থেকে। এর পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, গত একযুগ ধরে রাজনৈতিক পীড়নে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভঙ্গুর পর্যায়ে চলে গেছে। কমিটি পুনর্গঠন না করলে নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো সম্ভব হবে না— সেটা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনই হোক, বা অন্য কোনো ইস্যুতেই হোক।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। যেকোনো ধরনের দাবি আদায়ে আমরা গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করে থাকি। আর গণতান্ত্রিক পন্থায় দাবি আদায় করতে গেলে সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন হয়। এই মুহূর্তে আমরা সেই কাজটিই করছি।’

তবে বিএনপির একটি অংশ সমঝোতা করে হলেও খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পক্ষে। তারা মনে করেন, সুস্থ খালেদা জিয়া কেবল দলের জন্য নয়, দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য এখনই তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। রাজনীতি করতে হলে তো তাকে বেঁচে থাকতে হবে।

গত এপ্রিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেছিনে, ‘হার লাইফ ইজ ইমপরট্যান্ট ফর আস।’

তবে এর বিপরীত মতও আছে বিএনপিতে। অনেকেই মনে করেন, সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে অসম্মানের। এতে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শেষ পর্যন্ত এ পক্ষের ভাবনাটাই খালেদা জিয়ার ভাবনার সঙ্গে মিলে গেছে। গত ১৪ এপ্রিল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে দেখা করতে গেলে খালেদা জিয়া সাফ জানিয়ে দেন, সমঝোতার মাধ্যমে ‘প্যারোল’ নেবেন না তিনি।

তাহলে কোন পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি?— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জামিনে মুক্তি পাওয়ার অধিকার খালেদা জিয়ার রয়েছে। কিন্তু তাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর প্যারোল নিতে রাজি নন খালেদা জিয়া। তাহলে পথ এখন একটাই— রাজপথে আন্দোলন।

সেই আন্দোলনটা কবে?— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ দিয়ে আন্দোলন করা বিরোধী দলের পক্ষে সম্ভব না। বিশেষ করে এ ধরনের একটি সরকারের পক্ষে সেটা একেবারেই অসম্ভব।’


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।