তদন্ত চিত্র ডেস্কঃ সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে কিশোর গ্যাং এর মধ্যে ক্ষমতা প্রদর্শনে প্রাণহানি ও প্রকাশ্যে রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুলিশ, প্রশাসন ও সরকারের যখন টনক নড়িয়েছে ঠিক তখনই পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ক্ষুদ্র বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাং এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৪ জন আহত হন। এদের মধ্যে নিশাতের (১৮) শরীরে আঘাত ছিল গুরুতর। তার বাম হাত ও বাম উরুতে রাম দা দিয়ে কোপানো হয়েছে। অন্যদের অবস্থা স্থিতিশীল।
আহতদের ওই দিন দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তবে নিশাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। বর্তমানে নিশাত সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিশাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য ও দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানা যায়, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) শহরের চৌরাস্তা মোড় সংলগ্ন এলাকায় রাত সাড়ে ৯ টায় দেবীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক মশিউর রহমান বাবু ওরফে ছোট বাবুর নেতৃত্বে রামদা, লাঠি ও রডে সজ্জিত হয়ে প্রায় ১৫-২০ জন ছেলে অবস্থান নেয়। এরপর পূর্বের দ্বন্দ্বের জেরে কলেজপাড়া এলাকার হাসানের সাথে নিশাতের বাকবিতণ্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি থেকে মারামারি শুরু হয়। এইসময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা ছেলেরা রাম দা দিয়ে নিশাতকে কোপাতে এগিয়ে আসে। নিশাত আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পাশের রোজ-জান্নাত সুইটস এন্ড কনফেকশনারী নামে একটি দোকানে প্রবেশ করে। দোকানে প্রবেশের পর পেছেন থেকে মোহাম্মদের রাম দায়ের কোপে বাম হাত ও বাম উরুতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও রড দিয়ে আঘাত করা হয়। এই সময় পাশে উপস্থিত থাকা নিশাতের চাচা লাড্ডান, ভাই রাব্বি, প্রতিবেশী সুইডেন ও গুড্ডু আক্রমণকারীদের নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেন।
নিশাতকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে তার সাথে স্বপন নামে এক বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। বাবু ও তার সঙ্গীরা সে সময় হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে স্বপনকে জরুরি বিভাগ থেকে বের করে বেধড়ক মারধর করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। নিশাতের দুই বন্ধু তাদের বান্ধবীদের নিয়ে ময়নামতি চরে ঘুরতে আসেন। এসময় সদরের কলেজ পাড়া এলাকার মোহাম্মদ নিশাতের বন্ধুদের আটক করে টাকা ও ফোন কেড়ে নেয়। পরে নিশাতের বন্ধুরা তাকে ফোন করলে সে ময়নামতি চরে উপস্থিত হয়। এসময় নিশাতের সাথে মোহাম্মদের বাকবিতন্ডা হয়। পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) নতুন বন্দর এলাকার আক্তারুল নিশাত ও মোহাম্মদকে নিয়ে ঘটনাটির মিমাংসার জন্য আলোচনায় বসলে এক পর্যায়ে নিশাত মোহাম্মদকে চড় মারেন। এই সময় সাদ্দাম নামে অপর একজন নিশাতকে নিবৃত্ত করতে চড় মেরে সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দেয়। এর ফলে কোন সিদ্ধান্তে না পৌঁছেই আলোচনা ভেস্তে যায়। এরপর থেকে মোহাম্মদ ও তার এলাকার (কলেজ পাড়া) কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছেলে নিশাতকে মারার জন্য হুমকি দিয়ে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার মারামারির সময় দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি রবিউল ইসলাম ও ওসি (তদন্ত) শাহা আলম ঘটনাস্থলের পাশে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সংঘর্ষের সময় তারা দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে কঠোর কোন পদক্ষেপ নেন নি। পুলিশের এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ৪ জন ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাবু পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও কিভাবে প্রকাশ্যে রাম দা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে উৎসাহিত করতে পারেন সেটি উদ্বেগের বিষয়। তবে তাদের অভিযোগ এদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন আওয়ামীলীগেরই কতিপয় নেতা। যদিও তারা তাদের নাম বলতে রাজি হন নি।
অভিযোগ আছে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা আগেই রাম দা, রড, লাঠি এনে মাদ্রাসা মার্কেটের মেসার্স জাহিন ট্রেডার্স নামে একটি দোকানে রাখেন। যার স্বত্তাধিকারী রাসেল ইসলাম। পরে রাতে সেখান থেকে এসব অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয় নিশাতের উপর। যদিও রাসেল বিষয়টি অস্বীকার করেন।
নিশাতের বাবা মুন বলেন, আমার ছেলের সাথে হয়তো তাদের দ্বন্দ্ব ছিল। তাই বলে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হবে পুলিশের সামনে এটা মেনে নেয়ার মতো না।
এই বিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার ওসি রবিউল হাসান জানান, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে নিশাত নামে এক ছেলেকে রাম দা দিয়ে কোপানো হয়েছে। ভিকটিমের পিতা মুন সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর (মামলা নং-১৬) বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে জোর প্রচেষ্টা চলছে।
‘টিউবওয়েলের পানি পান করে ফরিদপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ’
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিউবওয়েলের পানি পান......বিস্তারিত