TadantaChitra.Com | logo

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম, সব উৎসব সবার নয়!

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৬, ২০১৯, ১৮:২২

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম, সব উৎসব সবার নয়!

“মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার”

ঘটনা ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলে ফলাফল ভিন্ন হতে বাধ্য। খোদা না করুন একজন মেয়রের নিরীহ পিতাকে যদি এলাকার মাস্তানরা কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন এ হত্যাকান্ডের বিজয় উল্লাস হয়, তারা মৌজ মাস্তি করে উৎসব পালন করে, আর এ দিকে মেয়র তার পিতাকে লাশকাটা ঘর থেকে ফিরিয়ে নেয়, দাফন-কাফন করে তাহলে কি এখানে দু’টি জায়গায় দু’টি ঘটনা ঘটল না? এখন যদি কেউ বলে ‘ঘটনা যার যার উৎসব সবার’, তাহলে বিষয়টি শুনতে কেমন লাগবে? কতটা যৌক্তিক হবে? আর সবার কাছেই কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে? এটা শুধু উদাহরণস্বরূপ বলা। চিন্তা করুন ভারতে হিন্দুদের যে অংশ গো-হত্যা মহাপাপ মনে করে, নিজের মাকে জবাই করা মনে করে, কোনো পর্যায়ে যদি সেসব হিন্দুকে মুসলমানরা ঈদ নামক ইবাদতের সময় বলে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ তখন বিষয়টি শুনতে কেমন লাগবে? এমনই একটি ঘটনা মূর্তিপূজা, যা ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে বড় গুনাহ। সনাতন ধর্মেও কোনো প্রামাণ্য উৎসে পৌত্তলিকতা বা মূর্তিপূজা নেই। এটি পরবর্তীকালে পূজারীদের তৈরি সংস্কৃতি মাত্র। যার নানা ব্যাখ্যা রয়েছে কিন্তু মূল অস্তিত্ব নেই। এখানে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট। মুসলমানরা অন্য ধর্মের মানুষকে সামাজিকভাবে সহায়তা করবে। রাষ্ট্র পূজা পার্বণে নিরাপত্তা ও অন্যান্য দেখভাল করবে। মুসলিম আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পূজায় পাহারা পর্যন্ত দিতে পারবে। সরকারের দায়িত্ব নিরাপদে নির্বিঘ্নে সব ধর্মের মানুষের উপাসনার ব্যবস্থা করা। ধর্মস্থানের রক্ষা করা। ধর্মীয় গুরুদের হেফাজত করা। কিন্তু যে মুসলমান সে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করতে পারবে না। মূর্তিপূজা করতে পারবে না। অন্য ধর্মের উপাসনার কোনো পর্যায়েই অংশগ্রহণ করতে পারবে না। দেবদেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদ বা খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে না। এসব বিষয় কুরআন-হাদিসে স্পষ্ট। কুরআন শরীফে আছে, ‘আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয়ই শিরক মারাত্মক ধরনের জুলুম।’ – আল কুরআন।

অন্য জায়গায় আছে, ‘আল্লাহ তার সাথে শিরক করলে এ অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য যে কোনো অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন।’ – আল কুরআন। নবী করীম সা. বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি অন্য ধর্মের লোকদের মতো আচরণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আরেক হাদিসে এসেছে- ‘যে মুসলমান অন্য ধর্মের উৎসবে গিয়ে তাদের সমাবেশকে বড় করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ – আল হাদিস। হযরত ওমর রা. বলেছেন- ‘তোমরা মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ, সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হতে থাকে।’ – বায়হাকি। নবী করীম সা. বলেছেন- ‘এক সময় আমার উম্মতের লোকেরা শিরকে লিপ্ত হবে, তাদের অনেকে মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে।- তাবারানী। অন্য ধর্মের উৎসবে সামাজিকভাবে তাদের সাথে সদাচরণ, পূজা ছাড়া সাধারণ নিমন্ত্রণ খাওয়া কিংবা সৌজন্যমূলক চলাফেরা ইসলামেও আছে। তবে আল্লাহর সাথে শিরক, কবিরা গুনাহ, কোনোরূপ পাপাচার করা যাবে না। নির্দোষ সামাজিকতা ও নিষ্কলুষ অসাম্প্রদায়িকতা কিংবা মানবিক সম্প্রীতি ইসলামের চেয়ে উত্তম আর কোথায় আছে?

এবার ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম সাহেব যেভাবে নারী-পুরুষ ভক্ত ও পূজারী পরিবেষ্টিত হয়ে পূজার ঢোল বাজালেন, কেউ না চিনলে সোজা মনে করবে তিনি একজন ঢুলি। পূজায় এমন উদ্দাম অংশগ্রহণ তার ধর্মীয় বোধ-চেতনার অভাব থেকেই হয়েছে। তিনি সৌহার্দ্য, দায়িত্ব আর পূজায় অংশগ্রহণের মধ্যকার ভেদরেখা সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেন না। তার আচরণে সচেতন মানুষ কষ্ট পেয়েছেন। যদি তিনি শুধু একজন আতিকুল ইসলাম হতেন তাহলে তেমন মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু পরিভাষায় বলে- মেয়র নাকি নগরপিতা, এ জন্য তার কান্ডকারখানা নাগরিকদের মাথাব্যথার কারণ হতেই পারে। রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বশীল কিংবা জনপ্রতিনিধি পূজামন্ডপ পরিদর্শনও করতে পারেন। তাই বলে মূর্তিপূজা করে ফেলা কিংবা শিরকি কথাবার্তা বলা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আরো সতর্কতা ও প্রজ্ঞা নাগরিকরা আশা করতেই পারে। কিছু লোক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপের কাজ আল্লাহর সাথে শিরক তথা মূর্তিপূজা করবে, ইসলামের দৃষ্টিতে যা মানবহত্যার চেয়েও ছোট অপরাধ নয়। আর এ ঘটনাটির ফলে সৃষ্ট উৎসবটিকে বলা হবে এটি মুসলমানদেরও উৎসব। হাদিস শরীফে এসেছে- প্রকৃত ঈমানের অবস্থা বা স্বাদ তখনই একজন মুসলমানের মধ্যে আসে, যখন তাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করার কথা বললে কিংবা ইসলাম ত্যাগ করার নির্দেশ দিলে এ কাজ করা তার জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও কষ্টকর বলে গণ্য হবে। -আল হাদিস। অতএব, বড়-ছোট যত মুখ দিয়েই বলা ও বলানো হচ্ছে, মানুষের কানে কথাটি পৌঁছাতে পৌঁছাতে অভ্যস্ত করে ফেলা হচ্ছে যে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এটি মূলত ঈমানবিরোধী একটি অনৈসলামিক কথা। এ বার্তাটি শুদ্ধ নয়। শরীয়তসম্মত নয়। প্রতিটি মুসলমান, আলেম-উলামা, ইমাম, খতিব, শিক্ষিত মানুষ, সচেতন নাগরিকের খুব ভালো করে বুঝতে হবে, অনেক বেশি বেশি বলতে হবে- সব উৎসব সবার নয়।

লেখক: ডিইউজে সদস্য, আহবায়ক: জাতীয় জনতা ফোরাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শত নাগরিক সিলেট বিভাগীয়।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।