TadantaChitra.Com | logo

৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শাহাদাত বাহিনীর আতঙ্কে ভুমির মালিকরা

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ১৮:১১

শাহাদাত বাহিনীর আতঙ্কে ভুমির মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আশুলিয়ার সাবেক যুবলীগ নেতা ও বর্তমান সাভার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে গোপনে বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাতের অভিযোগ উঠেছে। যুবলীগের একজন রাজনীতিক পরিচয় দিলেও রাতের আধারে ঘটে এর উল্টো চিত্র। দেশের বাহিরে গিয়েও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সাথে গোপন মিটিংয়ে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন সময়।

বিএনপি’র একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মোটা অংকের টাকাদিয়ে তাদের প্রিয় পাত্র হিসাবে রয়েছেন যুবলীগের এই নেতা। গাজীরচট এলাকার যেখানেই বিএনপি-জামায়াতের ঘাটি সেখানেই তিনি থাকেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রধান হয়ে। গাজীরচটের বিভিন্ন বিএনপি নেতার বাসায় নিয়মিত রয়েছে যাতায়াত। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অল্পদিনেই ফুলে ফেঁপে ওঠা এ নেতা আবার দিনের অধিকাংশ সময়ই থাকেন নেশা আর নারী নিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায়। মাদকাসক্ত এ নেতা মাতাল হয়ে নিজ কর্মীদের নাকি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও দূর্ব্যবহার করে থাকেন বলেও অনেক কর্মী জানিয়েছেন, তবে টাকার গরমে আর ক্ষমতার দাপটে, দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাতে তিনি নাকি খুবই পারদর্শী।

জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায় থাকলেও বাগিয়ে নিয়েছেন সাভার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ। সাভার উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হুয়ার পরই স্বরূপে পর্দাপন করেন এই নেতা। একে একে দখল করতে থাকে গাজীরচট এলাকার ডিস ব্যবসা সহ বিভিন্ন মানুষের জায়গা-জমি। আরো অভিযোগ রয়েছে দুই মাস অন্তর অন্তর তিনি ঘুরতে যান দেশের বাইরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকইে বলেন, যুবলীগের নামধারী এই নেতা গোপনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সাথে আঁতাত করছেন। সিঙ্গাপুরে বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে একাধিক আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন সময় থেকেছেন। গোপনে বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অর্থ দিয়ে তাদের মন জয় করে রেখেছেন।

সম্প্রতি গাজীরচট এ.এম. স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ খন্দকার মোজাফ্ফর হোসেন তার বাল্যকালের দোস্ত হওয়ায় তারই ছত্রছায়ায় অনেক অনিয়ম করে চলেছেন। তারই ছেলেকে পরীক্ষার প্রশ্ন দিতে গিয়ে প্রশ্নফাঁসের কেলঙ্কারীতে ধরা পড়েন অধ্যক্ষ মোজাফ্ফর হোসেন। ২০১৮ সালের ৯ জুন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাকে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্থ করেছিলেন। শাহাদাত হোসেন খান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিচালনা কমিটির সবাইকে ম্যানেজ করে তাকে আবার স্বপদে বহাল করেন।

রাজনীতিকে ঢাল বানিয়ে নামে বেনামে কালো টাকা আর সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। বিগত সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে মুখে নৌকার পক্ষে লোকদেখানো ভুমিকা থাকলেও গোপনে অর্থের বিনিময়ে বিএনপি-জাায়াতের পক্ষে কাজ করেছেন এই নেতা। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয় না পেয়ে নৌকার প্রার্থী সাইফুল ইসলামের পক্ষে থেকে বিএনপি’র প্রার্থীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গোপনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। আর ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থী জামায়াতের নেতা বশির উদ্দিনের পক্ষে সরাসরি কাজ করেছন। বিএনপি-জামায়াতের সাথে আতাতের কারনে যুবলীগের পদটিও হারাতে হয়েছে এই নেতাকে। বর্তমানে সাভার উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পূর্বের মতো স্বরূপে আসীন হয়েছেন তিনি। বাইপাইল মৌজায় জনৈক সাইদুল বাকী নামের এক জমির মালিকের প্রায় দুই বিঘা জমি জবর দখল করেন শাহাদাত হোসেন খান। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

সাইদুল বাকিী বলেন, আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পৃক্ত রয়েছি। কোন দিন দলের নেতাকর্মীদের সম্পদ-অর্থ, কড়ি আত্মসাত করিনি। দুঃখের সাথে বলতে হয় আশুলিয়া এলাকায় যুবলীগের নামধারী শাহাদাত হোসেন কোন ধরনের রাজনীতিবিদ? আমার বৈধ জমি সে তার বাহিনী দিয়ে দখল করে নিয়েছে। এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশ সহ আদালতেও মামলা দায়ের করেছি। আমার জমি জবর দখলকারীর বিচার চাই। এর বিচারের ভার আমি সর্বকালের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট অর্পন করেছি।

সাভারের রুহুল আমীন নামের এক জমির মালিকের ৩০ শতাংশ জমিও জবর দখল করে রেখেন এই নেতা। তাকে এলাকার অনেকই বøাক ডায়মন্ড বলেও ডাকেন।
এখানেই শেষ সে কোন আলাদীনের চেরাগের বিনিময়ে বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তার পৈত্রিক সম্পতির মালিককানা এখনো তার হাতে আসেনি। কি করে এতা সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন প্রশ্ন দলের ভেতরে ও বাইরের রাজনৈতিক নেতাদের।

মানিকগঞ্জের নয়াডিঙ্গি কাটিম এলাকায় প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর শাহাদাত খাঁন গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাগান বাড়ি। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
বাইপাইল বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সিটি সেন্টার নামের একটি টিনসেড (এক বিঘা জমির) মার্কেটটির জমিটিও জবর দখল করা। যার অনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। ওই জমির মালিকদের একজন মোশারফ হোসেন বলেন, আমার বৈধ জমির ২৬ শতাংশ জায়গা দখল করেন তার বাহিনী দিয়ে। আদালতে এই বিষয়ে একটি মামলা চলছে। তিনি আরো বলেন, আমার মালিানা জমির একটি অংশ এখনো আমদের দখলে থাকলেও ২৬ শতাংশ জমি শাহাদাত হোসেন খাণ তার বাহিনী দিয়ে রাতের আধারে দখল রে নেয়। আমরা জমিতে গেলে তার বাহিনীর মুখ খুলে কিছুই বলতে পারি না। এছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে তার বহুতল একট ভবন। যার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
গত কয়েক বছরে কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। গাড়ি বাড়ীসহ বনে গেছেন বিপুল ঐশ্বর্য ও ধনসম্পত্তির মালিক।

প্রশ্ন উঠে এত ধনসম্পদ আর ঐশ্বর্যের উৎস কি?। এছাড়াও আশুলিয়া, উত্তরা, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার জমি, বাড়ি, প্লট, ফ্লাট, গাড়ী ব্যাংক ব্যালেন্স। রাজনৈতিক পদ পদবীকে পুঁজি করে দখলবাজি, ঝুট সন্ত্রাস আর দূর্ণীতির মাধ্যেমে তার এ সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে।

সাবেক যুবলীগ নেতা শাহাদাত খাঁনের বিরুদ্ধে গত ২০১০ সালের ৩০ জুন আশুলিয়া থানা এফ আই আর নং-৭৯, ধারা ১৪৩/ ৩২৩/৩৮৫/৩৭৯/ ৫০৬, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির এ মামলায় শাহাদাত খাঁন এজাহার ভুক্ত আসামি ছিলেন। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ডিইপিজেড) এর ইউএস টেক্সটাইল লিমিটেডের বিপুল পরিমান কাপড় অবৈধভাবে পাচারকালে আটক করে বেপজা কর্তৃপক্ষ, ইউএস টেক্সটাইল কারখানার মহাব্যবস্থাপক জেনেডিগ জানান, আলিফ এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের সাথে ঝুট ব্যবসার চুক্তি হলেও, ঝুটের আড়ালে তারা কোটি টাকার মূল্যবান কাপড় পাচার করে আসছিলো, যার একটি অংশ বেপজা গেটে কাস্টমসের হাতে আটক হয়। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, আলিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন খানঁ।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে জবরদখল, চাদাঁবাজি ও দূর্ণীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাই নানাবিধ অপকর্ম ও দলীয় শৃংখলা ভংগের কারনে ২০১৭ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সড়িয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। বর্তমানে শাহাদাত হোসেন খাঁন সাভার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনা অনুযায়ী সারা দেশের দুর্নীতি বিরাধেী অভিযানে যাতে এসব মুখোশধারী রাজনীতির খোলশ পড়া র্দুনীতিবাজরাও আইনের আওতায় আসে এমন প্রত্যাশাই করছেন সাধারন মানুষ।
এ বিষয়ে জানতে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।