মেহেদী হাসানঃ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী অতঃপর ধিরে ধিরে রাজনীতিতে পদার্পণ, একের পর এক গিরগিটির মত রঙ পাল্টে দল পরিবর্তন পরিশেষে তিনি এখন নামীদামী সমাজ সেবক ও জনপ্রতিনিধি।
তবে এই জনপ্রতিনিধির আড়ালেও তার রয়েছে একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। দেশে যখন বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে চলছে শুদ্ধি অভিযান ঠিক সেই সময়েও প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর রামপুরা থানার ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের রয়েছে পাহার সমান অভিযোগ। হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ কাউন্সিলর মোস্তাকের নামে ও বেনামে রয়েছে মামলার পাহাড়।
মোস্তাকের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়ঃ রামপুরা থানার ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও বিগত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সরদার ফায়সাল বাশার ফুয়াদকে নির্বাচনের দিন প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত জখম করে। এ বিষয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলা নং-২৮, ধারা-১৪৭/ ৩৪১/ ৩২৩/ ৩২৪ / ৩০৭/ ৭৯/৫০৬ পেনাল কোর্ট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে অনেককে বাধ্য করিয়েছিলেন তার পক্ষে
নির্বাচনী কাজ করতে। ১৫ই মে ২০১৫ সালে নির্বাচন চলাকালীন দুপুরে স্থানীয় সরদার ফায়সাল বাশার ফুয়াদ কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার সময় রামপুরার তালতলা
নুরবাগ মসজিদ সামনের রাস্তায় বর্তমান কাউন্সিলর মোস্তাক তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অস্ত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুয়াদকে হত্যার উদ্দেশ্যে শরিরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়।
সূত্র জানা যায়, রামপুরার ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়টি ‘পাথেয় প্রন্থাগারের’ যায়গায় অবস্থিত। খিলগাঁও তালতলাস্থ ৪৭২/বি প্লটে এলাকাবাসীর পড়াশুনার জন্য স্থাপিত ‘পাথেয় গ্রন্থাগার’
বহুদিন যাবৎ দখল করে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে জুয়া, মদ ও নারীদের নিয়ে অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করে যাচ্ছে মোস্তাক এমন অভিযোগ
করেন অনেকে।
এছাড়া ‘পাথেয় গ্রন্থাগার’ সংলগ্ন সরকারী পানির পাম্প থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে ভেঝাল মিনারের (কোয়েল) পানির ব্যবসার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকারও বেশী টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মোস্তাক সিন্ডিকেট। পরবর্তীতে র্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে পানির কারখানাটি সীলগালা করে দেন।
তাছাড়া নিরীহ সাধারন মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করে ২৩ নং ওয়ার্ডের নবীনবাগে শত শত বস্তি ঘর তৈরী করে প্রতি মাসে প্রায় ১ (এক) কোটি টাকার বেশী অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মোস্তাক আহমেদ ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সালে পবিত্র ঈদের দিন সকালে ৩৬৮/বি খিলগাঁও তালতলা এলাকায় সোহেল নামের এক যুবককে কাটা রাইফেল দিয়ে একাধিক গুলি করে তালতলা নতুনবাগ এলকায় হত্যা করে ফেলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সোহেল বাসা থেকে ঈদের নামাজ পরে বের হয় এরপর আর বাসায় ফিরে আসেনি বলে অভিযোগ পত্রে জানান সোহেলের মা। সবুজবাগ থানার মামলা নং-৫৫, ধারা-৩০২, ৩৪ দঃ বিঃ এর এজাহার ও চার্জশীটভূক্ত আসামী মোস্তাক।
১৯৮৮ সালের ৪ই মে খিলগাও থানার চৌধুরীপাড়া বি জোনের বাসিন্দা ইশতিয়াক নাসিম নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ১২ ধারা ৩০৭/৩২৬। ওই সময়ে মোস্তাক জার্মানে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তবে ঢাকা জর্জ কোর্টের বিশেষ ট্রাইবুনাল নং-৩৭৯/৮৯ তে মোস্তাক আহমেদের তিন বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে মোস্তাক কারাবরণ করে উচ্চ আদালতের দারস্ত হয়ে আপিলে মুক্ত হন।
১৯৯৯ সালের ১৯ সে জুন ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার প্রবীন রাজনীতিবিদ মুনসুর আলীর ছেলে ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বিনা আলমের স্বামী এবং খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেটের সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন আলমকে মোস্তাক আহমেদ গুলি করে হত্যা করে। এ বিষেয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৫৪, ধারা-৩০২ ও ৫০৬ দঃ বিঃ। এই মামলায় মোস্তাক এজাহার ও চার্জশীটভূক্ত আসামী। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও মোস্তাকের নামে বেনামে আছে মামলার পাহাড় বলেও তথ্য রয়েছে।
গিরগিটির মত রঙ পাল্টায় মোস্তাকঃ
কখনো জয় বাংলা আবার কখনো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগানে রাজনীতি করেছেন কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ। যখন যে সরকারই ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের লোক বনে যায় মোস্তাক আহমেদ। মোস্তাক আহমেদকে দলীয় নিয়ম শৃংখলা ভঙ্গের কারনে যুবলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। পরবর্তীতে মির্জা আব্বাসের মাধ্যমে বিএনপিতে যোগদান করে খিলগাঁও থানা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উপর অনেক হামলা মামলা ও অত্যাচার নির্যাতন করেছিল বলেও অনেক ফিরিস্তি আসে অনুসন্ধানে।
২০০৬ইং সালে ২৭ ও ২৮ শে অক্টোবর লগী বৈঠা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার ছবি, ফেষ্টুন ও ব্যানার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ীতে হামলা করে ভাংচুর করে। এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে। ২০০৬ সালে লগি বৈঠা আন্দোলনের সময় তৎকালীন খিলগাঁও থানা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ (বর্তমান কাউন্সিলর মোস্তাক), জামাত শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ২৮ শে অক্টোবর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান জুয়েল এর -২৭/সি, খিলগাঁও ও খিলগাঁও থানা আওয়ামীলীগের নেতা শাখাওয়াত হোসেন আওলাদ এর হ-৩১/সি খিলগাঁও বাড়ীতে তাদেরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হামলা ও ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। ঐ সময় বাড়ীর ভিতরে থাকা নুরুজ্জামান জুয়েল এর মা সামছুন্নাহার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ বিষয়ে খিলগাঁও থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করা হয়। খিলগাঁও থানার মামলা নং-৮৮, ধারা ১৪৩/ ১৪৮/ ১৪৯/ ৪৪৮/ ৪২৭/ ৩৮০ দঃ বিঃ ও মামলা নং-৮৯, ধারা ১৪৩/ ১৪৮/ ১৪৮/ ৪৪৮/ ৪২৭/ ৩৮০/ ৫০৬ দঃ বিঃ।
‘পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু’
রাজশাহীর পবা উপজেলায় পদ্মা নদীতে ডুবে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।......বিস্তারিত