জাহিদ হাসানঃ রামগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতার ভাগিনার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষনের মামলা করে বিপাকে পড়েছেন রামগঞ্জ উপজেলার চাঙ্গিরগাঁও গ্রামের গৃহবধু ও কলেজ ছাত্রী আয়েশা আক্তার সুমি (২৫) ও তার পরিবার।
ধর্ষক ফিরোজ আলম প্রভাবশালি হওয়ায় ধর্ষিতার পরিবারকে বার বার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এদিকে হুমকী-ধমকী অব্যাহত থাকায় মামলার বাদী ধর্ষিতা আয়েশা আক্তার সুমি নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৬ ডিসেম্বর রামগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। (যার নং ২০৪)।
এদিকে ফিরোজ ও তার বাহিনীর এমন কর্মকান্ডে উপজেলাব্যাপী চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষনের শিকার সুমির মা আমিরেন নেছার আহাজারি আর মেয়ের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।
আয়েশা আক্তার সুমী চ্যানেল বিডিকে জানান, তিনি এক সন্তানের জননী। স্বামী প্রবাসে থাকেন। লক্ষ্মীপুর দত্তপাড়া কলেজে পড়াকালীন অবস্থায় রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ.ক.ম রুহুল আমিনের ভাগিনা ফিরোজ আলমের সাথে পরিচয় হয়।
পরিচয়ের সূত্র ধরে ফিরোজ আলম জানান তার মামা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানেরর মাধ্যমে সরকারী চাকরী পাওয়া সম্ভব। তবে সরকারী চাকুরী পেতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। বাবা হারা সুমী স্বামীর সাথে কথা বলে তিন ধাপে ফিরোজ আলমের হাতে ৩লক্ষ টাকা তুলে দেয় সরকারী চাকরী পাওয়ার আশায়। ২০১৮ইং সনের মে মাসে সুমীর ইমো আইডি হ্যাক হলে তিনি ফিরোজ আলমের শরনাপন্ন হলে রামগঞ্জ থানায় সাধারন ডায়েরী করা হয়।
এদিকে সুমী ও ফিরোজ আলমের সাথে সর্ম্পকের গভীরতা বাড়তে থাকলে সুমীকে ফিরোজ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে স্বামীর সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে সুমী রাজি না হওয়ায় ফিরোজ কৌশলে ২০১৮ইং সনের ডিসেম্বরে সুমীর চাকুরীর কথা বলে লক্ষ্মীপুরের মোবারক কলোনীর এক বন্ধুর বাসায় সুমীকে নিয়ে যায়। সেখানে জোরপূর্বক সুমীকে ধর্ষনের চেষ্টা চালিয়ে আপত্তিকর ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারন করে ফিরোজ আলম। পরে সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন সময় সুমীর কাছ থেকে ফিরোজ আলম আরো প্রায় ৪লক্ষাধীক টাকা হাতিয়ে নেয়। উপায়ন্তর না দেখে পুরো ঘটনাটি সুমী তার পরিবারকে জানান।
গত ১৯ নভেম্বর সকালে সুমী তার বাবার বাড়ীতে থাকা অবস্থায় ফিরোজ আলম ফোন দিয়ে জানায়, যদি তাকে আরো ৫০হাজার টাকা দেয়া হয় তাহলে পুর্বে ধারনকৃত ভিডিও সে সুমীকে ফেরত দিবে। এসময় সুমী তার মা বোনের বাড়ীতে বেড়াতে গেছে জানিয়ে পরদিন আসতে বললে ফিরোজ জানায় আমি তোমাদের বাড়ীর কাছাকাছি চলে আসছি, টাকা নিয়েই চলে যাবো। সুমী সাথে সাথে তার মাকে মোবাইলে বোনের বাসা থেকে দ্রুত ফেরার জন্য জানিয়ে দেয়।
কিছুক্ষন পরেই ফিরোজ সুমীদের ঘরে ঢুকে কেউ না থাকার সুযোগে ঝাপটে পড়ে জোরপূর্বক সুমীকে ধর্ষন করে ফিরোজ আলম। এসময় সুমীর আত্মচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে ফিরোজকে দিগম্বর অবস্থায় আটক করে।
ফিরোজ আলমকে আটকের পর তার মামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম রুহুল আমীনের অনুসারী কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফিরোজকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আয়েশা আক্তার সুমীর মা আমিরেন নেছা জানান, আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে ঘটনাটি যেন কাউকে না জানানো হয়।
যদি বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাহলে এলাকা ছাড়ারও হুমকি দেয়া হয় তাকে ও তার মেয়েকে। মামলা তুলে ফেলার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। রাতে বাড়ীর সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে নানান ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে থেকে পালিয়ে সুমী ও তার মা লক্ষ্মীপুরের এক আত্মীয়র বাসায় আত্মগোপন করে। সেখানে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে সুমীকে লক্ষ্মীপুর সদর হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
২৪ নভেম্বর নিকটা আত্মীয়দের সহযোগীতায় আয়েশা আক্তার সুমী বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। আদালত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিষ্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কে তদন্ত করার নির্দেশ দিলে ফিরোজ আলম আত্মগোপনে চলে যায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফিরোজ আলম বলেন, সুমীকে ধর্ষনের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। সুমীর বিরুদ্ধে একাধীক ছেলের সাথে সর্ম্পকসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় আমি তার থেকে দুরে সরে এসেছি।
রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ.ক.ম রুহুল আমিনের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে অপরাধ করবে তাকে শাস্তি পেতে হবে, আমি কোন ব্যক্তিকে সাপোর্ট এবং প্রশ্রয় দেইনি। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকে সেটা একান্তই তার ব্যাপার।
‘কুষ্টিয়ায় চায়ের দোকানে দুজনকে গুলি, আওয়ামী লীগ নেতাসহ আটক ২’
কুষ্টিয়ার মিরপুরে আওয়ামী লীগ নেতার গুলিতে দুজন আহত হয়েছে বলে......বিস্তারিত