TadantaChitra.Com | logo

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশ পুলিশের একজন বিজয় বসাক

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ১৮:০৮

বাংলাদেশ পুলিশের একজন বিজয় বসাক

শরীফুল ইসলাম রুকন, মুহাম্মদ মেহেবুব আলীঃ পুলিশ কর্মকর্তা বিজয় বসাকের জন্ম ও বেড়ে উঠা দুটোই দিনাজপুর শহরে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। ১৯৯২ সালে দিনাজপুরের এম.জি.এন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন বিজয় বসাক। প্রথম বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৯৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন ১৯৯৭ সালে। একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ হয়ে ১৯৯৮ সালে স্নাতকোত্তর করেন।

২১তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে বিজয় বসাক বেছে নেন পুলিশ ক্যাডার। ২০০৩ সালে চাকরিজীবনের শুরুতে সুনামগঞ্জে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নরসিংদী ও ফরিদপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। ২০০৯-১০ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দারফুরে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) পদে যোগ দিয়েছেন বিজয় বসাক।

কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ২০১৭ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) পেয়েছেন দিনাজপুরের ছোটগুড়গোলা গ্রামের সন্তান বিজয় বসাক। এর আগে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পান। ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ ও ২০১৭ সালের পুলিশ সপ্তাহে তিনি ‘আইজিপি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ’ পেয়েছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন বিজয় বসাক।

বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দির পাশাপাশি আরবি ভাষায়ও সমান পারদর্শী বিজয় বসাক। তিনি ২০১১ সালে ইটালিতে ‘পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও নাগরিকদের সম্পর্ক’ বিষয়ে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সবমিলিয়ে দেশে-বিদেশে অন্তত ১১টি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ে। দায়িত্ব পালনের ফাঁকে নানা বিষয়ে লেখালেখি করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর দুটি গবেষণাধর্মী লেখা ও চারটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটির একটি জার্নালে ‘নারী পুলিশের চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক একটি লেখা লিখেছেন বিজয় বসাক।

গাছ লাগানো ও ফুলের বাগান-দুটোই দারুণ পছন্দ বিজয় বসাকের। সর্বশেষ বরগুনায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেন ৩৫ হাজারের বেশী ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা। উক্ত জেলার চৌকিদার ও দফাদারদের মাঝেও বিতরণ করেন গাছের চারা। বরগুনার হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজে ‘পুষ্প পল্লব’ নামে একটি ফুলের বাগানও করে দেন বিজয় বসাক।
তিনি বলেন, বরগুনা ছেড়ে আসার আগে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। দেখি তাদের প্রত্যেকের হাতে পেয়ারাসহ নানা ফল। জানতে চাইলে বলে, আমার দেয়া গাছেই নাকি ফলগুলো ধরেছে! তাদের এই ভালোবাসাটাই আমার সেরা প্রাপ্তি।’

মানুষকে সহযোগিতা করার এই মানসিকতা বিজয় বসাকের গড়ে ওঠে স্কুল জীবনে, ‘স্কুলে পড়ার সময় আমরা অনেক বন্ধু একসঙ্গে থাকতাম, বই পড়তাম। বিভিন্ন ধরনের বইয়ের মধ্যে দেখতাম, মানুষকে সহায়তা করলে সেটা কোন না কোনভাবে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। এজন্য কিছু ছোট ছোট উদ্যোগ নিতাম আমরা। কেউ কোন বিপদে পড়লে অথবা পড়াশোনার জন্য কারো সহযোগিতা লাগলে করতাম। টাকা লাগলে টিফিনের টাকা থেকে বাঁচাতাম, অথবা বাবা-বড় ভাইদের কাছে চাইতাম যে আমার ভাই-বন্ধুর এই সমস্যা হচ্ছে- সহযোগিতা করুন।’

পুলিশের মত এমন একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা কেন বেছে নিলেন। এই প্রশ্নের উত্তর যেন বিজয় বসাকের তৈরিই ছিল, ‘আমার বাবা ব্যাংকার ছিলেন। বাবার কাছ থেকে একটা শিক্ষা পেয়েছি। যেটা হচ্ছে- মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া। তিনি একটি উক্তি সবসময় বলতেন, পৃথিবীতে এসেছিস যখন দেয়ালে আঁচড় কেটে যা। কথাটি আমার সবসময় মনে থাকত। মারা গেলে কতজন আমাকে মনে রাখবে- সেই চিন্তা আসে মনের মধ্যে। মানুষের সেবা করতে না পারলে, ভালোবাসা না পেলে কোন কিছু অর্জনের মূল্য নেই। এই বোধ থেকেই আমি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছি।’


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।