ঢাকা: রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগের চেহারা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করে সদ্য প্রকাশিত তালিকা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ও তোলপাড় প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে আরেক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে এবার আওয়ামী লীগ নিজেরাই ফেঁসে গেছে। জনগণের সামনে তাদের চেহারা প্রকাশ পেয়েছে।’
বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় পর কারারুদ্ধ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর স্বজনদের দেখা করতে দেয়া হয়েছিল গত ১৬ ডিসেম্বর। দেশনেত্রীর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে আদালতে পেশ করা মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার বাস্তবে কোনও মিল পাননি সাক্ষাত করতে যাওয়া তাঁর বোনসহ পরিবারের সদস্যরা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে নিঃশেষ করাটাই এই সরকারের অভিপ্রায়। বাস্তবে তাই হতে চলেছে এখন। তিনি বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর ভয়াবহ সংকটে রয়েছেন। হাঁটাচলা করতে পারেন না। খেতে পারছেন না। হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং এতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। জয়েন্টগুলো শক্ত ও বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে হাইলি অ্যাক্টিভ ডিফরমিং, রেমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বেশ কয়েকটি রোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। তীব্র অসুস্থতায় কাতরালেও ডাক্তার আসেন না। ডাক্তার ঠিকমত ওষুধ দিচ্ছেন না। রাত্রে ঘুমাতে পারে না। ফাস্টিংয়ের তার সুগার থাকছে ১৪।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীম এবং ডা. মামুনকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যেতে দেয়া হচ্ছে না। বাস্তবে দেশনেত্রীর কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না এবং ওষুধও দেয়া হচ্ছে না। আদালতে সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের নামে পেশ করা হলো গণভবনের ফরমায়েশি এক চোখা রিপোর্ট। প্রথমে সঠিক রিপোর্ট তৈরি হলেও সরকারপ্রধানের নির্দেশে বদলে ফেলা হয় সেই রিপোর্ট। প্রচণ্ড অসুস্থতায় জীবনের হুমকির মুখে থাকা মানুষকে কিভাবে সুস্থ বলে চিকিৎসকরা রিপোর্ট দিতে পারে?’
রিজভী বলেন, ‘চিকিৎসকরা হুকুমের অনুগত হবেন এই দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোথাও নেই। অথচ বাংলাদেশে এখন সরকারের কথা শুনে চিকিৎসকদের রোগীর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে হয়। এটি শেখ হাসিনার চরম কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের একটি নমুনা।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের উপাসক আওয়ামী লীগ। শিক্ষা, অভিরুচি, কৃষ্টি ও সৌজন্য-সংস্কৃতির বিশাল ঘাটতি রয়েছে এই দলের। এ কারণে তারা গণতন্ত্রকে ঘৃণা করে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ সভ্যতার মাপকাঠি। সভ্যতার অহংকার মানব জাতির অলংকার। আওয়ামী ক্ষমতাসীনরা অন্ধকারের আদিম অরণ্যচারী বলেই এরা মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়।’
রিজভী বলেন, ‘আমি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা রাজনীতির ভিত্তিভূমি নির্মাণ করেছেন প্রতিহিংসা দিয়ে। আর সেই প্রতিহিংসায় বর্তমানে বাংলাদেশে মহাসংকটকাল উপস্থিত। বৈষম্য, দুঃশাসন ও শোষণে সারা দেশকেই আপনারা অসুস্থ বানিয়েছেন। ক্ষুদ্র গণ্ডিতে বাঁধা আপনাদের রাজনীতি। এ কারণেই সারা দেশকে করেছেন সন্ত্রাসপীড়িত। দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি বন্ধ করুন। তাঁকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।’
বিএনপির এই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আরও বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেজারতি করছেন তারাই মিথ্যা অপপ্রচারে আর কুৎসা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন। সর্বগ্রাসী দখল এবং কূটকৌশলে অবৈধ ক্ষমতা নিরাপদ করার জন্য এখন দেশকে নানাভাবে বিভাজন ও বিভ্রান্তির কুয়াশায় ঢাকতে চাচ্ছে এই সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, নিশিরাতের এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যবহার করতে গিয়ে নানারকম অঘটনের জন্ম দিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারও কারও বিচার হয়েছে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়তার বন্ধনের কারণে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছেন।’
রাজাকারের তালিকা প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় দেখা যায়, অধিকাংশই আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতাকর্মী। এতে জনগণ বিস্মিত নয়, কারণ ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় প্রমাণিত হয়েছে, জনগণের সেই আশংকাই সত্যি হয়েছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা সঠিক নয় বলে সমালোচনা করছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা, আবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন- ‘তালিকায় বেশি ভুল প্রমাণিত হলে তা প্রত্যাহার করা হবে’।’
রিজভী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের থলের বিড়াল বের হতে শুরু হওয়ায় তা প্রত্যাহারের প্রশ্ন ওঠছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগের চেহারা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তারা এখন নিজেরাই কুতর্কে লিপ্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দোষ আর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপাচ্ছে। যে মন্ত্রণালয়েরই দায় থাকুক, আওয়ামী লীগ মূলত স্বাধীনতার মূল স্পিরিটের বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র-সাম্য-মানবিক মর্যাদা-এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। এর কোনোটিই আওয়ামী রাজনীতির ঐতিহ্যে নেই। এদের ঐতিহ্য ময়দান থেকে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দখলে রাখার ঐতিহ্য।’
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনিবার্য সারসত্য হচ্ছে- এরা একনায়কসুলভ মনোভাবের কর্তৃত্ববাদী নিষ্ঠুর শাসক, যার সাথে কেবল হালাকু খাঁ, আইয়ুব, ইয়াহিয়া ও টিক্কা খানেরই বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। ৭১ এর পাকিস্তানি শাসকরা জণগণের ম্যান্ডেটকে স্বীকার করেনি, গণতন্ত্র হত্যা করে, নারী নির্যাতনসহ পাইকারি হারে বাংলাদেশের জণগণকে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের হাতে বারবার গণতন্ত্র হত্যা হয়ে একদল কায়েম হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের মহাসমারোহ চলছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে হত্যা, ঘুম ও খুন অব্যাহত রয়েছে। এ সরকারের পতন ছাড়া দেশের বিরাজমান গুমোট অবস্থা দূর হবে না।’
‘রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায়ী”র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যবসায়ীক ও যুবলীগ নেতা’
নিজস্ব প্রতিনিধি: আদালতে নির্দেশনা অমান্য করে জালিয়াতি মাধ্যমে জমি হাতিয়ে......বিস্তারিত