TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিরপুর প্রেসক্লাব সভাপতির বিরুদ্ধে নারীকে মারধরের অভিযোগ!

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ১৭:১৭

মিরপুর প্রেসক্লাব সভাপতির বিরুদ্ধে নারীকে মারধরের অভিযোগ!

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর মিরপুরের নবগঠিত মিরপুর প্রেসক্লাবের ‘বিতর্কিত’ সভাপতি মীর শফিকুল ইসলাম পলাশ কর্তৃক বিচারপ্রার্থী অসহায় এক নারীকে মারধর ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে কথিত সাংবাদিক স্বামীর নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার ওই নারী বিচারপ্রার্থী হয়ে গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রেসক্লাব কার্যালয়ে গেলে সহযোগিতা না করে উল্টো তাকে মারধর করেন সভাপতিসহ অন্যরা।

নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ নিজেকে ‘দেশের কণ্ঠ টুয়েন্টিফোর ডটকম’ ও ‘দেশ নিউজ ডট টিভি’র চেয়ারম্যান কথিত নামধারী সাংবাদিক আক্তারুজ্জামান তারেকের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। এদিকে প্রেসক্লাব কার্যালয়ের ভেতরেই সভাপতি কর্তৃক বিচারপ্রার্থী নারীকে এমন নির্যাতনের খবরে মর্মাহত হয়েছেন অনেকেই, সেইসাথে চলছে সমালোচনার ঝড়।

নির্যাতনের শিকার চম্পা নামে ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ২০১৭ সালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার মিয়া মার্কেটে হাতুরে হোমিওপ্যাথিক ডাঃ হিসেবে একটি ডিসপেন্সারী পরিচালনা করতো মীর আক্তারুজ্জামান তারেক। অসুস্থ হয়ে সেবা নিতে গিয়ে আমার সাথে পরিচয়ের এক পর্যায়ে তার পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে অপহরণ করে বেকায়দায় ফেলে বিয়ে করেন তারেক।বিয়ের কিছুদিন ভালোই কাটছিলো। তবে বছর খানেক পার না হতেই তার নানা অপকর্ম আমার চোখে ধরা পড়তে শুরু করে। পরিচিত ও অপরিচিত বিভিন্ন নারী পুরুষকে নিয়মিত বাসায় নিয়ে এসে তাদেরকে অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দিতেন আমার স্বামী মীর আক্তারুজ্জামান তারেক।

একজন স্ত্রী হিসেবে আমি চোখের সামনে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড সহ্য করতে না পারার এক পর্যায়ে প্রতিবাদ করলে শুরু হয় আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তার অপকর্ম ও অনৈতিক কার্যকলাপের বিষয়ে এলাকায় জানাজানি হলে হঠাৎ করেই জামগড়ার হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসী ছেড়ে দেন তারেক। গা-ঢাকা দিয়ে চলে আসেন মিরপুরে। আশ্রয় নেন সম্পর্কে চাচা মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর পলাশের বাড়িতে। ফলে জামগড়ার বাসায় আমার কাছেও তার যাতায়াত অনিয়মিত হয়ে ওঠে। পরে একদিন হঠাৎ আমার স্বামীর মুখে জানতে পারি তিনি নাকি এখন সাংবাদিক হয়েছেন। মিরপুরে তার বিশাল অফিস ও লোকবল রয়েছে।

নির্যাতনের শিকার বিচারপ্রার্থী চম্পা বলেন, গত প্রায় দুই মাস যাবত আমার কোনো প্রকার খোঁজ খবর নেওয়াই বন্ধ করে দেন তারেক। আমি অসহায় হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনপাত করার সাথে সাথে নিয়মিতভাবে মুঠোফোনে তার খবরা খবর নেই এবং আমার অসহায়ত্বের বিষয়ে অবগত করি। তবে তিনি মুঠোফোনে সিলেটসহ একেক সময় একেক জেলায় আছেন বলে জানান। পরে আমি আমার পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি মিরপুরে মীর পলাশের বাড়ির নিচতলায় প্রেসক্লাবের ভেতরেই রাতে থাকার রুম রয়েছে তার এবং বর্তমানে সে সেখানেই থাকেন।

প্রেসক্লাবের সভাপতি কর্তৃক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে চম্পা বলেন, প্রায় টানা তিনদিন না খেয়ে থেকে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ১৬ই ডিসেম্বর আমি আমার স্বামীকে খুঁজতে প্রেসক্লাবে হাজির হই। প্রেসক্লাব কার্যালয়ে প্রবেশ করে সভাপতি মীর পলাশকে জিজ্ঞেস করি তার ভাতিজা, আমার স্বামী মীর আক্তারুজ্জামান তারেক আছে কিনা। এবং আমার প্রতি তার নির্যাতনের বিষয় ও অসহায়ত্ব তুলে ধরে একটা ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করি।

কিন্তু আমার আবেদনে কোনো সাড়া না দিয়ে বরং তিনি উচ্চস্বরে প্রেসক্লাবের ভেতরে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে থাকেন, এই আপদটা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকলো কিভাবে? একে বের করো।

প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর পলাশের এমন আচরণে আমি ভয় পেয়ে গেলেও তার পায়ে জড়িয়ে ধরে বসে পড়ে কাকুতি মিনতি করি। কিন্ত তিনি আমার কোন কথা না শুনে পা ছাড় বলে প্রথমেই আমার বুকে সজোরে লাথি মারলে আমি ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যাই। ফের উঠে আবার তার পায়ে ধরতে গেলে তিনি দ্বিতীয়বার আমার ডান কাঁধে সজোরে লাথি মারেন। আমার ডাক চিৎকারে প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক মারুফ হায়দারসহ অনেকেই ছুটে আসে।

তবে তারা এমন পরিস্থিতিতে আমাকে রক্ষা না করে সভাপতি মীর পলাশের সাথে সাথে তারাও মারতে থাকে। এসময় মারুফ আমাকে টেনে তুলে সেক্রেটারী জাকিরকে বলে ওরে কানের নিচে কয়েকটা চরথাপ্পর দিয়ে বের করে দেন। বলেই জাকির ও মারিফ আমার কানে, মুখে, মাথায় সজোরো আঘাত করে। আমি এখনো ডান কানে কিছুই শুনতে পারছিনা।

চম্পা অভিযোগ করে বলেন, তাদের মারধরের পরেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আমি তাদের কাছে কাকুতি মিনতি করে বলি আপনারা আমার বড় ভাইয়ের মতো। আমি তিনদিন কিছুই খাইনি। দয়া করে আমার স্বামীর সাথে আমাকে একবার দেখা করার সুযোগ করে দেন। তা না হলে আমাকে মেরে ফেললেও আমি এখান থেকে যাবো না। তখন আরো কয়েকজন সাংবাদিক এসে আমাকে টেনে হিঁচড়ে প্রেসক্লাব কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যেতে থাকে। আমি বার বার ফিরে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ফের সভাপতি মীর পলাশ আমার পেটে সজোরে লাথি মারলে আমি ছিটকে গেটের বাইরে গিয়ে পড়ি, পরে দারোয়ান গেট বন্ধ করে দেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি রুপনগর থানায় হাজির হলেও মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর পলাশের হস্তক্ষেপে থানা পুলিশও তার অভিযোগ গ্রহণ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর শফিকুল ইসলাম পলাশ কোনো সদুত্তর না দিয়ে বরং হুমকির সুরে প্রতিবেদকে বলেন, এ বিষয়ে সাংবাদিকতার বাহাদুরি না দেখিয়ে নিজের কাজ করেন গিয়ে। এসব নিয়ে ভেবে কাজ নেই। আপনার মতো একশ সাংবাদিক আমি পুষি। ওদেরকে অর্ডার দিলে আপনার মতো সাংবাদিকের হার-মাংস আলাদা করে ফেলবে।

এদিকে এ ঘটনা নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে প্রতিবেদককে বাসা থেকে ধরে এনে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেন মিরপুর প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি জাকির হোসেন।

ওই নারীর স্বামী আক্তারুজ্জামান তারেকের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি একই সুরে হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা তো দূরের কথা কোন ঘাটাঘাটি করলে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধেই তার অনলাইন পত্রিকা ও টিভিতে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেন।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।