নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার নামে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে পারছে না সরকার। রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ডসুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। বন্ড লাইসেন্সের নামধারী চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা সে সুযোগের অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত পণ্য ফ্রিস্টাইলে বিক্রি করছেন কালোবাজারে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বন্ড বা রাজস্ব খাতে অনিয়ম রোধে নানা বিভাগ, সংস্থা থাকলেও এ পুকুর চুরি দেখার কেউ নেই। ফলে প্রতি বছরই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অর্থ পাচারের পরিমাণ। তেমনি গাজীপুরের এইচ ডি এফ নামে একটি পোষাক কোম্পানি ২০১৮ সালে ৩১৩ টন শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীন থেকে কাপড় এনে তা কালোবাজারে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বন্ড সুবিধা নিয়ে আমদানী করা পণ্য দেদরাচ্ছে বিক্রি করছে কালো বাজারে। গত বছর এমন ২৯ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এসব মামলায় অনাদায় রাজস্ব ৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমস আইনে বিধান না থাকায় বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী একজনও গ্রেফতার হয়নি।
২০১৮ সালের নভেম্বরে শুল্কমুক্ত চীন থেকে ৩১৩ টন কাপড় আমদানী করে গাজীপুরের এইচডিএফ এ্যাপারেলস লিমিটেড। ঢাকা ব্যাংকের দিলকুশা শাখার এলসিতে আনা প্রায় ৬ কোটি টাকার এসব কাপড়ে তৈরী টি-শার্ট সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল। সেলসকন্টাক অনুযায়ী গেল বছর এপ্রিলে পার হয়েছে সে সময়। তাহলে কোথায় গেল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এত কাপড়।
কোম্পানী কর্তৃপক্ষের দাবী, সে কাপড়ে তৈরি পণ্যে আংশিক রপ্তানী হয়েছে। এইচ ডি এফ লিমিটেড কোম্পানীর মহাব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন জানান, এর মধ্যে রপ্তানী হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সদত্তর দিতে পারেনি ঢাকা ব্যাংক। ঢাকা ব্যাংক দিলকুশা শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, তারা কিছু মিস-মাস করেছেন। যেহেতু চলমান ব্যবসা আছে এগুলো কাস্টম ওয়্যারহাউসকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তারা না করে কালোবাজারে বিক্রি করেছে। এলসি অনুযায়ী আমাদের মাধ্যমে কাপড়গুলো রপ্তানীর কথা থাকলেও কাপড়গুলো কি করেছে তা আমাদেরকে জানাননি।
শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানীর জন্য শুল্কমুক্ত কাপড় এনে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। গেল বছর এমন ২৯ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। যারা এই বন্ডের অপব্যবহার করছে, তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। দেশের শিল্পহস্ত সংকটে কারণ কালোবাজারি সিন্ডিকেট।
সূত্র জানায়, এই কোম্পানির অলিখিত চেয়ারম্যান মির্জা আব্বাস। পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তার ছেলে মির্জা ইয়াসির আব্বাস। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছে মির্জা আব্বাসের বাল্যবন্ধু পরিচয় দানকারী চৌধুরী মোঃ হুমায়ূন কবির। এইচ ডি এফ কোম্পানীর অন্য পরিচালকদেরকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে চৌধুরী মোঃ হুমায়ূন কবির অত্র প্রতিষ্ঠান টি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। প্রভাব খাটান মির্জা আব্বাস। তার ক্ষমতা আর প্রভাবে তিনজন পরিচালকের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা দিয়ে গাজীপুর ছাড়া করেছেন বলে জানা গেছে। এই মামলা ও হামলা থেকে বাঁচতে পারেন নি স্বয়ং মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের আপন বোনের ছেলেকেও দেশ ছাড়া করলেন এই সিন্ডিকেট চক্র।
সূত্রে আরো জানায়, শুধুমাত্র শেষের দিকে কোম্পানিটির কাগজপত্রে নাম না থাকলেও তারা অন্যায় ভাবে পেশিশক্তি দিয়ে দখল করে কখনো ইনভেস্ট বা বিনিয়োগকারী হিসেবে মির্জা আব্বাস জড়িত রয়েছে। এই কোম্পানির আসল মালিকের নামে মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দেশ ছাড়া করে মির্জা আব্বাস। তার সকল অপকর্মের সহযোগিতা করে মির্জা আব্বাসের বাল্যবন্ধু খ্যাত চৌধুরী মোঃ হুমায়ূন কবির এবং আরেক সহযোগী আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের বড় ছেলে মির্জা ইয়াসির আব্বাস কোম্পানির পরিচালক হিসেবে নিজেকে বায়রাদের সামনে পরিচয় দিলেও কাগজপত্রে নাম আছে কিনা তা জয়েন্ট স্টক খতিয়ে দেখলে বুঝা যাবে।
এইচ ডি এফ কোম্পানির অনেকেই জানান, এই প্রতিষ্ঠানের আসল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল ইবনে ইউসুফ। যিনি আফরোজা আব্বাসের আপন বোনের ছেলে। বর্তমানে সে আমেরিকা বসবাস করছে। প্রায় এক বছর ধরে কিভাবে চৌধুরী মোঃ হুমায়ূন কবির একক স্বাক্ষরে চালান তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে কোম্পানিটি দখল করার অভিযোগে চৌধুরী মোঃ হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে শ্রীপুর গাজীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে মে-জুন নাগাদ অনেক মামলা হামলার ঘটনা ঘটেছে। চৌধুরী মোঃ হুমায়ূন কবির এই প্রতিষ্ঠানের অন্য লোকজনের নামে উত্তরা পূর্ব থানায়ও একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের আরো এক আসল মালিক মোঃ আনোয়ারুল কিবরিয়া বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। এই মামলায় ২০১৮ সালে জেল খাটেন আনোয়ারুল কিবরিয়া। আরো বিস্তারিত পরবর্তীতে। (চলবে)
‘দেশের ৮ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস’
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি......বিস্তারিত