TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের মামলার তদন্ত উদঘাটন : নতুন করে আরো ৩-৪ নাম এসেছে

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০, ০৬:১৬

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের মামলার তদন্ত উদঘাটন : নতুন করে আরো ৩-৪ নাম এসেছে

ঢাকা:  রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড় তখনও জনাকীর্ণ। রাস্তার যানজটে আটকে ছিলেন অনেক মানুষ। হঠাৎ ওয়াহেদ ম্যানশনে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন ১০টা ৩২ মিনিট। মুহূর্তে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও পাঁচটি ভবনে। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ প্রাণহানি হয়েছিল অন্তত ৭১ জনের।

চুড়িহাট্টার সেই বিভীষিকাময় অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরেও নিহতের স্বজনেরা দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। আগুন কেড়ে নেয়া সেই জীবনগুলোর বিনিময়ে তাদের অনেকের পরিবার পেয়েছে নামেমাত্র ২০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ৷ নিহতদের মধ্যে জুম্মন নামে এক ব্যক্তির ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ভবন মালিক হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় রয়েছেন অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনও। ওয়াহিদ ম্যানশনের মালিক মো. হাসান ও সোহেলকে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।

বছর পেরোলেও ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেই কোনও অগ্রগতি৷ এক বছরেও দেয়া হয়নি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন৷ এ পর্যন্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ ৯ বার পিছিয়েছে৷ আদালত আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

এদিকে নিহতের পরিবারগুলো তাদের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে নিদারুণভাবে দিন কাটাচ্ছে। ওই ঘটনায় নিহত ৬৭ জনের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরি বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। নিহতের মধ্যে এখনও তিন জনের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এই তিন জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মরচুয়ারিতে রাখা আছে।

আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ তাদের চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ রাখতেন৷ মানুষের জীবনের ঝুঁকি জেনেও অবৈধভাবে রাসায়নিকের গুদাম করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বাসা ভাড়া দেন৷ আর ওই দাহ্য পদার্থ থেকেই আগুন লাগে৷ যদিও প্রথমে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছিলো যে, রাস্তায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লাগে৷ বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিষ্ফোরণের কাহিনীও ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল৷

ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডিতে নিহত ৬৭ জনের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। যেকোনও সময় তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

চুড়িহাট্টায় নিহত ৭১ জনের মধ্যে ৪ জনের মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ৪৫ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছিল। বাকি ২২ জনের ডিএনএ প্রোফাইলিং করে ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। বাকি তিনজনকে এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবীর হোসেন বলেন, ‘চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬৭ জন মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গতকাল বুধবার পর্যন্ত পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে হাসান ও সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। তবে মামলার অপর আসামিদের কোনও ঠিকানা পাওয়া যায়নি।’

 

লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের মামলার তদন্তে অনেককিছু উদঘাটন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে আরও তিন-চারজনের নাম এসেছে।’

 

প্রসঙ্গত. কেমিক্যাল গোডাউনের বিরুদ্ধে থেমে গেছে অভিযান: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকঢোল পিটিয়ে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর অভিযান চালায়। পাঁচটি টিমের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করে। কেমিক্যাল গোডাউনগুলোর বাড়ির বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এভাবে চলতে চলতে অভিযানটি একপর্যায়ে গোডাউন মালিকদের বাধার সম্মুখীন হয়। এরপর থেকে এই অভিযান ঝিমিয়ে পড়ে। গত বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি থেকে চলা এ অভিযান ওই বছরের ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেয়। এই অবস্থায় আগের চেহারায় ফিরে গেছে পুরান ঢাকা। এখন সেখানে কেমিক্যাল গোডাউনে আগের মতো বেচাকেনা চলছে। ৩৩ দিন টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে ১৭০টি কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করে। আবাসিক এলাকায় এসব কেমিক্যাল গোডাউনের কয়েকটি থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়। বাকিগুলো আগের অবস্থায় রয়েছে। পুরান ঢাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত আড়াই হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এর বাইরে আরও ১০ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, যার কোনও লাইসেন্স নেই। সব মিলিয়ে এখনও পুরান ঢাকায় লাখ লাখ মানুষকে রাসায়নিক গোডাউনের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।