TadantaChitra.Com | logo

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তিন থানা পুলিশের নির্ঘুমরাত!

প্রকাশিত : মার্চ ০৪, ২০২০, ১৬:৪৫

তিন থানা পুলিশের নির্ঘুমরাত!

দায়িত্ব অবহেলা-ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দুই ওসির বিরুদ্ধে মামলা, রূপনগর পুলিশের নামে স্মারকলিপি প্রদান

মেহেদী হাসানঃ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও দক্ষিনখান থানার দুই ওসিসহ ১৬জন আসামীর নাম উল্লেখ করে দায়িত্ব অবহেলা-ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন পৃথক দুই ভুক্তভোগী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত-৩ এবং ৫নং আদালতে এ মামলা দুটি দায়ের হয়। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন এক গৃহিণী। গতকাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন রানী বেগম। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের (জুডিসিয়াল তদন্ত) নির্দেশ প্রদান করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সামদার। এদিকে দক্ষিনখান থানার ওসি শিকদার মোঃ শামিম হোসেনসহ মোট ১৬জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত-৫নং আদালতে মামলা দায়ের করেন শামিমা বেগম নামের এক নারী। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

এছাড়াও একই দিনে ডিএমপির রুপনগর থানার ওসি, ওসি (তদন্ত) ও এসআই আল আমিন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা এবং অপর এক থানা পুলিশের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদানে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছে ডিএমপি। স্থানীয় অনেকেই বলছেন ঘুরেফিরে একই থানায় এ সকল অফিসার দায়িত্ব পালন করায় এবং অনেক দিন একই থানায় থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধীদের সাথে সক্ষতা গড়ে ওঠে। যার জন্য এসকল অফিসারদের অপরাধের পাল্লা ভারি হতে থাকে।

জানা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার ওসির নামে মামলা হওয়ার পর থেকেই নরে চরে বসেছেন দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারগন। যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসের রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় যাত্রাবাড়ীর কাজলা নতুন রাস্তা এলাকার কুরবান মিয়ার ২য় তলার ভাড়াটিয়া রানী ২শিশু সন্তান নিয়ে বাসায় ছিলেন তার স্বামী কবিরের অপেক্ষায়। হটাত করেই দরজায় করা নারার শব্দ। হয়তো ভালবাসার সেই মানুষটি এসেছেন ভেবে দরজা খুললো রানী। কিন্তু দারজায় দাঁড়িয়েছিলেন ওই বাড়ির মালিক কুরবান মিয়ার ছেলে সোহেল (৩২) ও তার বন্ধু মিরাজ আলি (৩০) এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। বাসায় রানীর সামি আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সোহেল ও মিরাজ রানীর বাসায় প্রবেশ করে বাসার ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে রুমের দরজা বন্ধ করে রানীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় সোহেল। এতে রানী রাজি না হওয়ায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান সোহেল ও তার সহযোগী মিরাজ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী দম্পতির। এসময় রানীর সাথে হওয়া সকল ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারন করে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি।

একপর্যায়ে রানী সোহেলের হাতে কামর দিয়ে তাদের কব্জা থেকে মুক্ত হয়ে চিৎকার দিলে সোহেলরা রানিকে এ বিষয় বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এসময় বাসায় ফেরেন রানীর স্বামী কবির মিয়া। বাসার কাছে যেতেই চিৎকার শুনতে পান তার স্ত্রী রানীর। সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাসার সামনে যেতেই সোহেল দেখতে পান তার রুম থেকে বেড় হচ্ছেন বাড়িওয়ালার (বাড়ির মালিক) ছেলে সোহেল, মিরাজ ও আরও একজন। দুজন মুখোমুখি হতেই রানীর স্বামীকে টেনে নিচে নেমিয়ে নিয়ে আসেন সোহেল। কোন কিছু বুঝে ওঠার কবিরকে এলোপাথাড়ি মেরে তাড়িয়ে দিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয় বাসায়। ওই সময় সোহেল শরিরের বিভিন্ন স্থানে ব্যপক আঘাত পান বলেও জানা যায়। পরে সকালে রানীকে বের করে বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন সোহেল। আর এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে ধামাচাপা দিতে সবার কাছে সোহেল বলে বেড়ান যে কবিরের স্ত্রীর চরিত্র খারাপ হওয়ায় এবং বাসা ভাড়া দিতে না পাড়ায় তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কবির তার স্ত্রীর কাছে জানতে পারেন পুরো ঘটনা। রানীর শরিরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত করেন সোহেল।

সুত্রে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে রানী বাদি হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তাদের মন মত একটি অভিযোগ পত্র লিখিয়ে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এস আই ওসমানের কাছে পাঠান। অভিযোগ পত্রটি নিয়ে ভুক্তভোগি পরিবার এসআই ওসমানের কাছে গেলে অসমান ভুক্তভোগিদের নিয়ে ঘটনা স্থল থেকে রানীর ২শিশু সন্তান উদ্ধার করেন এবং অভিযুক্তদের টক করে রানীকে রাতে থানায় আসতে বলেন। রানী থানায় গিয়ে জানতে পারেন আটককৃতদের ঘটনাস্থল থেকে গোপন উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরে রানী এসআই ওসমানকে কল দিলে রানীকে বিষয়টি আপোষ মীমাংসা করিয়ে দেয়ার কথা বলেন।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী রানী বলেন, বাড়ির মালিকের ছেলে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়, এতে তিনি রাজি না হওয়াতেই এই ঘটনাটি ঘটেছে।

রানীর স্বামী কবির জানান, চিকিৎসা সম্পন্ন করে তারা সোহেলদেরকে আইনের আওতায় আনতে মামলার জন্য থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন কিন্তু পুলিশের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকায় থানা পুলিশ কোন আইনগত ব্যাবস্থা না নিয়ে থানার ওসির নির্দেশে আপোষ মীমাংসার কথা বলেন এবং এলাকা ছেড়ে দিতে বলেন। পরে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও মহা-পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর পুরো ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন।এতেও ন্যায় বিচার না পাওয়ায় আদালতের দারস্ত হয়েছে তারা।

জানতে চাইলে মুঠফোন আলাপে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ওসমান বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাচ্চাদের রানী কাছে হস্তান্তর করেছেন। পরে রানীকে রাতে থানায় আসতে বললে তারা আর থানায় আসেননি। অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা এবং কি আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে এসআই ওসমান বলেন, বিষয়টি বাসাভাড়া সংক্রান্ত ঘটনা, রাতে দুই পক্ষকেই থানায় আসতে বলা হয়েছে বাড়ির মালিক পক্ষ এসেছেন তবে রানিরদের বারবার ফোনে কল দিলেও তারা ফন ধরেননি। দুই পক্ষ থাকলে তাদের কথা শুনে আপোষ মীমাংসা করিয়ে দিয়ে কিছু খরচাপাতি পাইয়ে দেয়া যেত।

এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজাহারুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি ফোন কেটে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার বর্তমান ওসি মাজাহারুল ইসলাম ঘুরে ফিরে একই থানায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একই থানায় তিনি এসআই, অপারেসন অফিসার, ইনস্পেক্টর এবং সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকেই এলাকায় বলাবলি করছেন ওসি মাজাহার বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে। তার নামে ও বেনামে রয়েছে অনেক সম্পত্তি।

অন্যদিকে দক্ষিনখান থানার পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, জমিজমা নিয়ে বিরোদের জেরে গত ২রা মার্চ দক্ষিনকান থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী শামিমা বেগম। এরপর ওই দিনই সাধারন ডায়েরিতে অভিযুক্তদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে দক্ষিনখান থানার ওসিসহ তার সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়।

মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, ওসি নিজেই ভুক্তভোগিকে যৌন হয়রানি করেন এবং নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এতে করে ঐ নারির শরিরের বিভিন্ন স্থানে নিলাফুলা জখম হয়। এছাড়াও ঐ দিন ওসিসহ তার সঙ্গীয়রা শামিমা বেগমের পরিবারকে বারি থেকে জোর পূর্বক তাড়িয়ে দেন। এবং একজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠান। এবিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বাংলাদেশের আলোকে বলেন, ওসি নিজেই আইনের রক্ষক হয়ে অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে আমিসহ বাসায় থাকা সকলকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমি প্রতিবাদ করায় সে নিজেই আমার শরিরে থাকা কাপর ছিরে ফেলে এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

এদিকে মামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিনখান থানার ওসি শিকদার মোঃ শামিম হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিপ করেননি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।