TadantaChitra.Com | logo

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুমি শহরের একজন রিকশাচালক!

প্রকাশিত : মার্চ ২৯, ২০২০, ১৭:৫৭

সুমি শহরের একজন রিকশাচালক!

রাজশাহী প্রতিনিধিঃ ‘ঘরে চাল-ডালের ব্যবস্থা থাকলে আজ আর রিকশা নিয়ে বের হতাম না। নাতিটাকে গোসল করায়ে ঘুম পাড়াতাম’—বলতে বলতেই চোখে পানি চলে আসে রিকশাচালক সুমির। কাঁধে রাখা গামছা দিয়ে চোখ মোছেন। করোনা পরিস্থিতির আগে রিকশার মালিককে দৈনিক ৩৫০ টাকা জমা দিতে হতো। এখন কমিয়ে ২০০ টাকা করেছেন। আজ রোববার মাত্র ৮০ টাকা ভাড়া হয়েছে। তখন বেলা সাড়ে তিনটা। রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় দেখা হয় তাঁর সঙ্গে।

স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় ১৫ বছর আগে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে রাজশাহী শহরে আসেন সুমি। এখন তিনি শহরের একজন রিকশাচালক।

সুমির বয়স কত, তিনি জানেন না। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীন হওয়ার পরপরই তাঁর জন্ম হয়েছে বলে মায়ের কাছে শুনেছেন। বিয়ে হয়েছিল। দুটি ছেলে হয়েছে। তারপরই স্বামী মারা যান। এরপর সন্তান দুটি নিয়ে বাবার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিছুদিন পর বাবাও মারা যান। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন সুমি। কোনো উপায় না দেখে দুই সন্তানকে নিয়ে রাজশাহী শহরে চলে আসেন। নগরের পাঠার মোড়ের রেললাইনের পাশে পলিথিন টাঙিয়ে থাকতে শুরু করেন। আর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ঝাড়ুদারের কাজ নেন। এভাবেই চলছিল। বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর হার্টের অসুখ। কোনো কাজ করতে পারেন না। একটা নাতি হয়েছে। তার কথাও সুমিকেই ভাবতে হয়। পুরো সংসারের ভার সুমির কাঁধেই। সংসারের খরচ বেড়ে গেছে। তাই সাত মাস ধরে রিকশা চালানো শুরু করেছেন।

 

দুপুরে নগরের আলুপট্টির মোড় থেকে খালি রিকশা নিয়ে সাহেববাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। সুমি বললেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি রাজশাহী শহরে আছেন কিন্তু তাঁকে কেউ এই শহরের মানুষ মনে করেন না। কারণ, তিনি এখনো বড়াইগ্রামের ভোটার। শহরের যেখানেই সাহায্য দেওয়া হয়, সেখানেই তিনি যান। গেলেই কথা ওঠে, তিনি বাইরের মানুষ। কোনো সাহায্য পাবেন না।

খুবই হতাশা প্রকাশ করে সুমি বললেন, ‘সারা দিন রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় মরেই যাব।’ সুমির একটা মুঠোফোন আছে। সেটা বন্ধ করে নিজের কাছে রেখে দেন। ফোন নম্বর চাইলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে অন করলেন। তারপর নম্বরটা দিলেন। পরে আরও কথা বলতে চাই, ফোনটা বন্ধ করবেন না—এই অনুরোধ জানিয়ে সুমিকে তখনকার মতো ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিকেল চারটার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন খোলা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তিনি রাজশাহী কোর্ট এলাকায় আছেন। বাজার থেকে আসার সময় ২০ টাকার একটা ভাড়া পেয়েছেন। এখন কিছু খাবেন। কিন্তু কোনো হোটেল খোলা পাচ্ছেন না। রাজশাহী কোর্টের পাশে একটা হোটেল খোলা থাকে, সেখানে যাচ্ছেন। কয়েক মিনিট পর তিনি ফোন করে জানান খাবার পেয়েছেন। করলা ভাজি দিয়ে এক প্লেট ভাত খাচ্ছেন।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।