TadantaChitra.Com | logo

১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোলায় হায়দার পরিবারের ভয়ে মুখ খোলেনা কেউ

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৩, ২০২০, ০৫:০১

ভোলায় হায়দার পরিবারের ভয়ে মুখ খোলেনা কেউ

এইচ এম নাহিদ‍ঃ ভোলার বোরহান উদ্দিনে সাংবাদিক সাগর চৌধুরীকে মারধরকারী আদনান রহমান নাবিল হায়দারের পরিবার উপজেলায় দোর্দণ্ড প্রভাবশালী। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হিসেবে শাসন ক্ষমতা তার দাদা ও পরে বাবার নিয়ন্ত্রণে। বাবা জসিম উদ্দিন হায়দার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দুই চাচাও ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল।

পরিবারের সবাই প্রভাবশালী হওয়ায় কোনও অনিয়ম হলেও এলাকার কেউ সাধারণত তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না। এ কারণেই সাংবাদিক সাগর চৌধুরী তার বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ আনায় অসীম ক্ষমতার প্রভাবে তাকে তুলে এনে মারধরের ঘটনা ঘটায় নাবিল। এমনকি এ ঘটনার পরও প্রভাবশালী পরিবারটির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেনি কেউ।

বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সরেজমিন বোরহান উদ্দিন সদর ও বড় মানিকা ইউপি ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাটি যেন চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোক দ্বারা বেষ্টিত। স্থানীয় সবাই চেয়ারম্যান পরিবারকে এতটাই ভয় পায় ও সমীহ করে যে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস হয়নি কারও। তবে এত কিছুর মধ্যেও কয়েক জন জেলে নিচু স্বরে তাদের জন্য বরাদ্দের চেয়ে কম চাল পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

জানা যায়, জসিম উদ্দিন হায়দারের বাবা মরহুম বশির আহমেদ ছিলেন বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি। বশির হায়দারের তিন ছেলের মধ্যে জসিম উদ্দিন বড়। মেজ ছেলে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর এবং ছোট ছেলে রাসেল মিয়া বোরহানউদ্দিন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বড় মানিকা ইউনিয়নে গিয়ে অনেকের সঙ্গে হায়দার পরিবার নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু চেয়ারম্যান সম্পর্কে কেউ মুখ খলতে রাজি হননি।

রানীগঞ্জ বাজারে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো একতলা ভবন। এখানেই সরকারি সাহায্যের চাল রাখা হয়।এখান থেকেই চাল বিতরণ করা হয়। এখান থেকে ওই রাতে চাল সরানো হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীদের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এসময় তাদের মুখমণ্ডলে ভয় ও অস্বস্তি দেখা দেয়। সবাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে ‘আমি জানি না’, ‘আমি দেখি নাই’ বলে দ্রুত সরে যান।

তাদের কথা শুনে বোঝা যায় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান পরিবারের বিরুদ্ধে দূরে থাক তাদের বিষয়েই সাংবাদিকের সামনে কথা বলতে রাজি নন কেউ। তবে এরই মধ্যে স্থানীয় মাদ্রাসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘জসিম চেয়ারম্যান এর বাবা বশির আহমেদ অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি ৩৮ বছর চেয়ারম্যানগিরি করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানও আগে ভাল ছিলেন, এখন কেমন জানি হয়ে গেছেন। তিনি বলেন,সাগর সাংবাদিকরেও চিনি। হেও ভালোমানুষ। কী জানি একটা ঘাপলা হইছে,হেইল্লইগ্গা চেয়ারম্যানের পোলায় হেরে মারছে হুনছি। এইডা ঠিক হয় নাই।’

ওই মাদ্রাসা শিক্ষক যখন তার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন তখন ঐ পুরাতন ইউপি ভবনের সামনের বাড়ির এক বৃদ্ধ তাকে (মাদ্রাসা শিক্ষককে) ধমক দেন। সঙ্গে সঙ্গে আর কথা না বলে সেখান থেকে চলে যান ওই মাদ্রাসা শিক্ষক।

পরে ইউনিয়নের কেরামতগঞ্জ বাজারে কথা হয় এক কলেজ ছাত্রের সঙ্গে।এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তার মন্তব্য,‘চেয়ারম্যানগো অনেক ক্ষমতা। এক ভাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি,আরেক ভাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান,আরেক ভাই আওয়ামী লীগের নেতা। সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি তোফায়েল আহমেদ সাহেবও তাদেরকে খুব ভালো জানেন। তাগো সামনে কারও কোনও কথা বলার ক্ষমতা নাই। তবে তারা তিন ভাই-ই ভালো মানুষ। পোলাডা (নাবিল) ঢাকায় থাইক্কা মস্তান অইছে। সাংবাদিক মাইরা জেলে গেছে। এইবার এ ঘটনায় চাপে থাকবো।’

ইউনিয়নের পাটোয়ারী বাজারের এক মুদি দোকানদার জানান, ‘চেয়ারম্যান সপ্তাহে তিন দিন পরিষদে আসেন। রিলিফের চাউল দেয়নের সময় কার্ডের মানুষের কিছু কম দিয়া হের দলীয় ও খাতিরের মাইনসেরে ওই চাউল দেন।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত সোমবার (৩০ মার্চ) চাল কম দেওয়ার অভিযোগ এনে দুজন জেলে সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে ওই দুই জেলেকে চেয়ারম্যান নিজে ধরে এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সামনে বক্তব্য দিতে বলেন। চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ইউএনওর কাছে উল্টো কথা বলেন ওই দুই জেলে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী বলেন,‘চেয়ারম্যান জসিম হায়দার দুই জেলেকে আমার সামনে আনেন। জেলেরা আমাকে বলেছেন,সাগর চৌধুরী তাদের ভুল বুঝিয়ে বক্তব্য রেকর্ড করেছেন।’

ইউনিয়নের আলিমুদ্দিন বাংলাবাজারে নাম প্রকাশ না কারার শর্তে বিএনপির স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের লোকজনেরও চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বাইরে কথা বলার সাহস নেই। সাধারণ লোকের তো কিছু বলার প্রশ্নই আসে না।’

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও বড় মানিকা ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার মিজানুর রহমান জানান, এই ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা দুই হাজার ৯১৪ জন। এদের মধ্যে খাদ্য সহায়তার জন্য তালিকাভুক্ত এক হাজার ৫০০ জন। জাটকা রক্ষায় তালিকাভুক্ত প্রতিটি জেলে পরিবারকে ফেব্রুয়ারি থেকে মে—এই চার মাসের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে এই জেলেদের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—এই দুই মাসে ৮০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। চেয়ারম্যান বলছেন, তিনি ৩৮ কেজি ৫০০ গ্রাম করে দিয়েছেন। এটা অনিয়ম কিনা জানতে চাইলে ট্যাগ অফিসার বলেন, ‘ভাই সবই বোঝেন, আমাদের কিছু করার নেই।’ যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে দাবি করেছেন, তারা ৩৮ কেজিরও কম চাল পেয়েছেন।

এদিকে, চাল কম দেওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ভোলা জেলা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. দিদারুল আলম ওই ইউনয়ন পরিষদে গেছেন। সেখানে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ইউপি মেম্বারসহ তার নিজস্ব কিছু লোক এনে রেখেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কম্পাউন্ডে ইউপি মেম্বার নওশাদ পাটোয়ারি ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাইলেও চেয়ারম্যান নিষেধ করায় তিনি কিছু বলেননি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।