TadantaChitra.Com | logo

৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এ কেমন মৃত্যু ? স্বজন ছুঁয়ে কাঁদতেও পারে না

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৭, ২০২০, ০৬:৫৩

এ কেমন মৃত্যু ? স্বজন ছুঁয়ে কাঁদতেও পারে না

‘এ কেমন মৃত্যু! যার পরিবার তাকে ছুঁয়ে কান্না করতে পারে না! যার মৃতদেহ কবরে নামানোর জন্য পরিবারের কেউ থাকে না!’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক জালাল সাইফুর রহমানের জানাজা-দাফনের পর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের ফেসবুক পেজে এমনই কিছু লাইন লিখে পোস্ট করা হয়। মরণকালে স্বজনদের কাছে না পাওয়া আর প্রিয়জনকে ছুঁয়ে কাঁদতে না পারার পারস্পরিক বেদনার এমন প্রকাশ আপ্লুত করেছে অনেককেই। ওই পোস্টেই অনেকে মন্তব্য করেন, এই বেদনার পাহাড় যেন বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

সোমবার (৬ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যাওয়া জালাল সাইফুরকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা। জানাজা ও দাফনকালে তার কিছু সহকর্মী ও মারকাজুল ইসলামের ক’জন স্বেচ্ছাসেবী উপস্থিত ছিলেন। তার কোনো আত্মীয়-স্বজন জানাজায় উপস্থিত হতে পারেননি। এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তার লাশ নেয়া হয়নি চট্টগ্রামের ষোলশহরের পৈতৃক বাড়িতেও।

শোকের সাগরে স্বজন-বন্ধু-সহকর্মীরা
৪৫ বছর বয়সী এই চৌকস কর্মকর্তার এমন বিদায়ে কাঁদছেন তার স্বজন, বন্ধু, গুণগ্রাহীরা। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর শোক আরও ভারী করে দিচ্ছে তার মুখ একবারের জন্যও দেখা হলো না বলে, তার জানাজা-দাফনে থাকা হলো না বলে।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের ফেসবুক পেজের ওই পোস্টে জালাল সাইফুরের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলা হয়-
“এ কেমন মৃত্যু! যার মৃত্যুর সময় প্রিয়জন কেউ পাশে থাকতে পারে না।
এ কেমন মৃত্যু! যার মৃত্যুর পর প্রিয়জনরা শেষবারের মতো তার মরামুখটা দেখতে পারে না।
এ কেমন মৃত্যু! যার পরিবার তাকে ছুঁয়ে কান্না করতে পারে না ।
এ কেমন মৃত্যু! যার জানাযায় পরিবার-পরিজন-প্রিয়জনরা কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে না।
এ কেমন মৃত্যু! যার মৃতদেহ কবরে নামানোর জন্য পরিবারের কেউ থাকে না।
এ কেমন মৃত্যু! প্রিয়জনরা শবযাত্রায় অংশ নিতে পারে না।”

এদিকে মৃত্যুর খবরটি শোনার পর থেকে জালাল সাইফুরের ষোলশহরের পৈতৃক বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার চাচা ও নগরের ষোলশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে দুই দফা জ্বরে কষ্ট পেয়েছিল জালাল সাইফুর। পরে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল। গতকাল তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে না বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ভোরে হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে লাইফ সাপোর্টে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘জালাল সর্বশেষ গত ঈদে বাড়ি এসেছিল। বেশিরভাগ সময় স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ঢাকায়ই থাকতো। সকালে তার মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে শোকের মাতম চলছে বাড়িতে।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের একান্ত সচিব (পিএস) মো. রেজাউল আলম ও জালাল একই ব্যাচের কর্মকর্তা। রেজাউল বলেন, ‘ও (জালাল সাইফুর) খুবই হাসিখুশি ছিল, কারও সঙ্গে তাকে রাগ করতে দেখিনি। অসাধারণ একটা ভালো মানুষ ছিল, আমার ব্যাচমেট, এটা আমার ভালো করে জানা। ওর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভাবি ও বাচ্চারাও মনে হয় আইসোলেশনে। এই মুহূর্তে যে তাদের সান্ত্বনা জানাব সেটারও উপায় নেই। ঘর থেকে তো বের হওয়া যাচ্ছে না।’

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সেই ফেসবুক পোস্টে অবসরে যাওয়া সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ কমেন্ট করেন, ‘জালাল সাইফুর একজন দক্ষ, কর্মঠ, সৎ ও চৌকস অফিসার ছিলেন। আমি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালে সে কসবার ইউএনও ছিল। তার অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহপাক তাকে শহীদি মর্যাদাসহ বেহেস্ত নসিব করুন। দোয়া করি, তার পরিবারের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত বর্ষিত হোক।’

তৌফিক হাবিব নামের একজন লিখেছেন, ‘ভাবতেই পারছি না তিনি আর নেই। গত মাসের ৪ তারিখেই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদের ভাইভার সময় তার সাথে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। তার কথা, চিন্তা, পরিকল্পনার কথা শুনে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার থেকে শেখার অনেক ইচ্ছা ছিল। তার মতন এমন একজনের অকাল প্রস্থান সত্যিই অনেক বেদনাদায়ক।’

তানভীর ইবনে আলম লিখেছেন, ‘আমাদের কসবা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। খুবই সৎ ও ভালো মানুষ ছিলেন।’

পাপ্পু ইসলাম লিখেছেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ভালো লোক ছিলেন। আল্লাহ উনাকে বেহেশতে নসিব করুন-আমিন।’

এক শোকবার্তায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন সৎ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন দেশ ও জনগণের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তার মৃত্যুতে দেশ একজন মেধাবী কর্মকর্তাকে হারাল।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুনও তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।