TadantaChitra.Com | logo

১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনা ভাইরাস রোধে রোহিঙ্গা শিবিরে ৪জি নেটওয়ার্ক চালু সহ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান

প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০২০, ১৩:২৭

করোনা ভাইরাস রোধে রোহিঙ্গা শিবিরে ৪জি নেটওয়ার্ক চালু সহ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান

সোহেল মাহমুদঃ করোনা মহামারী কালে গণহত্যাসহ অপরাপর নৃশংস অপরাধসমূহের শিকার প্রায় ৪০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ ভূখন্ডের নৌ-সীমানা থেকে উদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশের জনগণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারসমূহ এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং সাধুবাদ জানান মানবাধিকারকর্মী এবং মানবিক সেবায় নিয়োজিত সংগঠনসমূহের কর্মীরা। একই সাথে, করোনা ভাইরাস রোধে রোহিঙ্গা শিবিরে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান তারা। করোনা মহামারী কালে প্রশংসনীয় এবং বিরল মানবিক আচরণের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য-স্বাস্থ্যের অধিকার, অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রয়োজনীয় চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবেদন জানান তারা।

তাদের ভাষ্যমতে, সাম্প্রতিক উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা ব্যক্তিবর্গ মানব পাচারকারীদের সহযোগিতায় অনধিক ৫০০জন রোহিঙ্গা শরণার্থী দুইমাস যাবত মালয়েশিয়ায় এবং থাইল্যান্ডে নৌপথে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন এবং দুঃখজনকভাবে, মালয়েশিয়ায় এবং থাই উভয় কর্তৃপক্ষই তাঁদের নৌকা প্রবেশে বাধা দেয়। দীর্ঘ দুইমাস যাবত নৌপথে যাত্রা চলাকালীন সময়ে কমপক্ষে ২৮ জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন এবং অনেকেই খাদ্য, ও শুপেয় পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় এবং থাইল্যান্ড রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করেছে। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় সময়ের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা ও কোয়ারেন্টাইন শেষে নিজ আশ্রয়শিবিরে ফেরত যেয়ে যেন কোন রকম বৈষম্যর শিকার না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বিশেষত নারী ও শিশুরা যেন কোন ভাবেই নিরাপত্তাহীনতার শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সাথে পাচারকারিদের দেশীয় আইনে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। অবৈধ মানব পাচার বিষয়ে হটলাইন চালু করা সহ অবৈধ পথে মানব পাচার বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনির পরতা বৃদ্ধি করতে হবে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে অতি-ঘনবসতির কারণে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশংকায় আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,১১৬ জন মানুষ বসবাস করে। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা এখানে মেনে চলা সম্ভব নয়। ফলে কোন ভাবে রোহিঙ্গা শিবিরে কোভিড ১৯ সংক্রমণ হলে তা মারাত্মক গতিতে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করাহচ্ছে। আমরা জানি, সরকার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও শিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা, বিশুদ্ধ পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার অভাব রয়েছে। যদি রোহিঙ্গা শিবির অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণহীন প্রাদুর্ভাব ঘটে, তবে এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।

প্রায় ১১ লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মাঝে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সেবা চলমান রাখতে করোনা সংক্রমণের এই সময়ে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীর শিবিরে প্রবেশাধিকার বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে পরিষেবার অভাবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা বা মৃত্যু না ঘটে। এই সময়ে, বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় মানবিক সাহায্য দানকারী সংস্থা এবং রোহিঙ্গা নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলির সাথে কোভিড-১৯ সম্পর্কে সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিতে এবং শিবিরগুলিতে এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করে কাজ করা দরকার।

করোনা ভাইরাস মহামারীটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে এই রোগের সংক্রমণটি বাড়তে শুরু করেছে। উখিয়া এবং টেকনাফ অঞ্চলে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ না থাকায়, মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না এবং যারা এদের সংস্পর্শে কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে এবং প্রতিরোধমূলক কর্মকান্ডের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এই বিধিনিষেধের ফলে, বর্তমানে স্থানীয় জনগণের মাঝে করোনা ভাইরাস উপসর্গগুলি বিদ্যমান থাকলেও তাঁদের পক্ষে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি (বিশেষ করে নারী, বয়োবৃদ্ধ), চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মিসহ জনস্বাস্থ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, মানবাধিকার এবং মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত সরকারী এবং বেসরকারি কর্মীবৃন্দ এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জীবন বাঁচাতে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্যের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণটির প্রকোপ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী, বিকাশমান মহামারীর সময় সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য এবং হালনাগাদ নির্দেশিকা দ্রুত ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট পৌঁছে দেবে এবং তা একইসাথে রোহিঙ্গাদের নেতাদের সাথে সমন্বয় করতেও সহায়তা করবে। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের সহ শরণার্থী শিবিরে যারা সবচেয়ে বেশি দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। তাদের রক্ষার জন্যে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য, বিশ্বস্ত এবং আস্থার জায়গা না থাকার ফলে, বিভিন্ন প্রকার গুজবের উপর নির্ভর করছেন এবং শিকার হচ্ছেন স্থানীয়দের বিদ্বেষমূলক আচরণের। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সংক্রমণে আক্রান্ত হবার আগেই, আমরা সরকারকে শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং সহায়তা কর্মীদের মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে, কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে চলমান মোবাইল ইন্টারনেট বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান তারা। মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রবাহ ক্রমবর্ধমান করোনা ভাইরাস মহামারী থেকে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ এবং সহায়তা কর্মীদের সুরক্ষা এবং কল্যাণে কাজ করবে।

তারা বলেন, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার এবং মানবিক সহায়তার কাজে নিয়োজিত সংগঠনসমূহ এবং কর্মীরা উপরোক্ত দাবী এবং আহবান মনোযোগের সাথে শুনবেন, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে তৎপর হবেন যাতে করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদের স্বাস্থ্যের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, এবং তথ্য প্রবাহ ও প্রয়োজনীয় চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি যে, উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় শক্তি, সাহস ও দক্ষতা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এবং এই সুরক্ষাগুলি বাংলাদেশের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারি হবে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।