TadantaChitra.Com | logo

১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিরপুরের কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৯, ২০২০, ১৭:৩৩

মিরপুরের কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ “দেখেন স্যার আমরা গরীব মানুষ, আমার ছোট ছেলেটির পায়ে সমস্যা থাকলেও চেয়ারম্যান- মেম্বররা আমাদের জন্য কিছুই করেনা” ৷ দৈনিক সময়ের কাগজের এ প্রতিবেদকের নিকট অভিযোগের করুন কন্ঠে এমনটিই বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাজিহাট গ্রামের এক প্রতিবন্ধী সন্তানের অসহায় দুঃখীনী মাতা ৷

সরেজমিনে জানা যায়- তার নিজ ওয়ার্ডে প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা সুবিধা বঞ্চিত হলেও স্বামী ইদ্রিস আলী শারীরিকভাবে সম্পুন্ন সুস্থ্য থাকা সত্ত্বেও স্বামীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বানিয়ে টাকা আত্মসাতের মতো নজির বিহীন ঘটনা ঘটিয়েছে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য রাজিয়া খাতুন ।

অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পরিশোধের বই থেকে জানা যায় কুর্শা ইউপি’র ১নং ওয়ার্ড মাজিহাট গ্রামের বাসিন্দা মৃত মফি মোল্লার ছেলে মোঃ ইদ্রিস আলী, যার বই নং ২৫৫৪ ৷ শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা এ বিষয়ে মহিলা ইউপি সদস্যর স্বামী ইদ্রিস আলী ওরফে ইদুল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার শরীরে কোন সমস্যা নাই ৷

এ ব্যাপারে ওই মহিলা ইউপি সদস্য রাজিয়া খাতুন বলেন আমার স্বামী কোন কাজকাম করতে পারেনা তাই আমি কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী ও মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে ম্যানেজ করেই আমার স্বামীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটি করেছি । তিনি আরও বলেন আমরা গরীব মানুষ আপনারা আমার নামে কিছু না লিখলেই খুশি হবো ৷

অপর দিকে কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী সমাজসেবা অধিদপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার অসিত কুমার বিশ্বাস এর যোগসাজসে কম বয়স্ক ব্যক্তিদের বয়স বেশী দেখিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

সরকারের বয়স্ক ভাতার নীতিমালা অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা পেতে হলে পুরুষদের বয়স ৬৫ বছর এবং নারীদের বয়স ৬২ বছর হতে হবে অথচ সরকারের এসব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিম্নোক্তদের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ না হলেও চুক্তিতে ভাতার কার্ড বানিয়ে ওমর আলী চেয়ারম্যান কমিশন খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।

মাজিহাট গ্রামের মৃত নেমদ্দিন মন্ডলের ছেলে মোঃ ইছারদ্দিনের জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৭/০৮/১৯৫৫, একই গ্রামের মৃত ইছরাফ সর্দারের পুত্র ওমেদ আলীর সর্দারের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ২৭/০৬/১৯৫৮, একই গ্রামের মৃত ভাদু মুন্সীর পুত্র নুরুল ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৬/০৩/১৯৫৯, কুর্শা চেয়ারম্যান পাড়ার শফিকুল ইসলাম যার, ভাতা হিসাব নং ০১০১৭৩৬৭, জন্ম তারিখ ৫/৯/১৯৬২ ।

এ ছাড়াও কুর্শা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মাজিহাট গ্রামের বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে জানা যায় ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত ওয়ার্ড সদস্য ইকতার আলী প্রায় দুই বছর যাবৎ এলাকায় না থাকায় গ্রামবাসীরা বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে ৷

এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে গোপনে ইকতার আলী মেম্বর প্রায় দুই বছর পূর্বে দেশ ছেড়ে লিবিয়াতে পাড়ি জমালেও ওমর আলী চেয়ারম্যানের সাথে মেম্বরের আত্মীয়তার বন্ধন থাকায় ওমর আলী চেয়ারম্যান নির্বাচন ইস্তেহার অমান্য করে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ৷ ওমর আলী চেয়ারম্যান তার নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ইকতার মেম্বর প্রবাসে থাকলেও আজ পর্যন্ত তার অনুপস্থিতির বিষয়ে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাচন অফিস বা সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরকেই রেজ্যুলেশন অথবা অভিযোগ পত্র দাখিল না করে সম্পুন্ন অবৈধভাবে তার শূন্যস্থানের কার্যক্রম ইকতার মেম্বরের কলেজ পড়ুয়া ছেলে মাহাব্বত আলী জনি’কে দিয়ে পরিচালনা করাচ্ছে৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকতার মেম্বরের বড় ছেলে কলেজ পড়ুয়া মাহাব্বত আলী জনি বলেন, আমার বাবার অবর্তমানে আমাদের ওয়ার্ডবাসীকে বিভিন্ন ভাবে আমিই সহযোগীতা ও সেবা দিচ্ছি৷ করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারী খাদ্যসামগ্রী থেকে শুরু করে সব কিছুই গ্রামবাসী পাচ্ছে৷ পরিষদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে জানতে চাইলে জনি বলেন- বাবা লিবিয়ায় থাকায় মাঝে মাঝে আমিই আমার বাবার পক্ষে স্বাক্ষর করে থাকি৷

উল্লেখ্যঃ দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকায় গ্রাম পুলিশকে ভূয়া নাতি সাজিয়ে বয়স্ক ভাতার টাকা এবং ভিজিডি’র চাল আত্মসাতের অভিযোগ সংক্রান্ত দু’টি খবর প্রকাশিত হলে দুইদিনের দুইটি সংবাদ আদালতের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী, সহযোগী ইউনিয়ন সমাজ কর্মী এবং চেয়ারম্যানের যোগসাজশে ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য রাজিয়া খাতুন তার নিজের সুস্থ্য স্বামী ইদ্রিসের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করায় আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে তাদের ৩ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দিয়েছেন। ২২ এপ্রিল বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সেলিনা খাতুনের আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত ক্রিমিন্যাল মিসকেস নং ০২/২০২০ ফৌ:কা:বি: ১৯০(১) (সি) ধারায় আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে নিশ্চিত করেন ।

এতসব অনিয়মের বিষয়ে ১০ নং কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলীর মুঠোফোনে ফোন করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি৷


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।