TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাজেটের রেকর্ড গড়লেন মুহিত

প্রকাশিত : জুন ০৭, ২০১৮, ২১:২৮

বাজেটের রেকর্ড গড়লেন মুহিত

 জাহিদ হাসান খান রনি, সাদমান রাফিদ: আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে টানা দশম বাজেট উপস্থাপনের নতুন রেকর্ড গড়লেন তিনি। দেশের ইতিহাসে এর আগে টানা নয়বার বাজেট পেশ করার একমাত্র রেকর্ড তারই। নিজেই সেই রেকর্ডকে টপকে এবার নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন তিনি।

এর আগে টানা ছয়বার বাজেট পেশের রেকর্ড গড়েছিলেন আওয়ামী লীগের সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ৬টি বাজেট পেশ করেছিলেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী এবারের ১০৩ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম করেছেন ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ।’

এবারের বাজেট নিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে তার দেয়া বাজেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২টি। সংখ্যার দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তিন দফায় ১২টি বাজেট দিয়ে সর্বোচ্চ বাজেটদাতা হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন। আজকের বাজেট উপস্থাপনের পর সাইফুর রহমানের রেকর্ড সমান রইলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এর আগে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮২-১৯৮৩ ও ১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।

মুহিতের হাতে গত দশ বছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার বেড়েছে চারগুণের বেশি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটের আকার যেখানে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তা দাঁড়াচ্ছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায়। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নতুন বাজেটে তা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার হয়েছে।

১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বরর দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়।

১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ প্রথমটিসহ মোট তিনটি বাজেট ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক সরকার এবং তাদের ছত্রছায়ায় বেশ কয়েকটি সরকার দেশ শাসন করেছে। এসময় দেশে জাতীয় সংসদ সচল ছিল না। সামরিক সরকারগুলো অধ্যাদেশ আকারে বাজেট পেশ করে।

নিচে বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটের আকার ও প্রস্তাবকারী অর্থমন্ত্রী এবং অর্থ উপদেষ্টাদের নাম তুলে ধরা হলো-

১৯৭২-১৯৭৩ তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৭৩-১৯৭৪ তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা

১৯৭৪-১৯৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা

১৯৭৫-১৯৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা

১৯৭৬-১৯৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা

১৯৭৭-১৯৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা

১৯৭৮-১৯৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা

১৯৭৯-১৯৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা

১৯৮০-১৯৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা

১৯৮১-১৯৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা

১৯৮২-১৯৮৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৩-১৯৮৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা

১৯৮৪-১৯৮৫ এম সায়েদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা

১৯৮৫-১৯৮৬ এম সায়েদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৬-১৯৮৭ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা

১৯৮৭-১৯৮৮ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা

১৯৮৮-১৯৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা

১৯৮৯-১৯৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা

১৯৯০-১৯৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা

১৯৯১-১৯৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা

১৯৯২-১৯৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা

১৯৯৩-১৯৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা

১৯৯৪-১৯৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা

১৯৯৫-১৯৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা

১৯৯৬-১৯৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা

১৯৯৭-১৯৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৯৮-১৯৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা

১৯৯৯-২০০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা

২০০০-২০০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা

২০০১-২০০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা

২০০২-২০০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা

২০০৩-২০০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা

২০০৪-২০০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা

২০০৫-২০০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা

২০০৬-২০০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা

২০০৭-২০০৮ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৮-২০০৯ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৯-২০১০ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা

২০১০-২০১১ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা

২০১১-২০১২ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা

২০১২-২০১৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা

২০১৩-২০১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা

২০১৪-২০১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

২০১৫-২০১৬ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা

২০১৬-২০১৭ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

২০১৭-২০১৮ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।

যেসব পণ্যের দাম কমবে:

প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্যের দাম কমবে। শুল্ক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিউটি কমানোর ফলে অনেক পণ্যের আবার দামও কমে যাবে।

প্রস্তাবিত এ বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, হাইব্রিড গাড়ি, বীজ ও ওষুধ ইত্যাদি।

মোটরসাইকেল : দেশীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। এতে দাম না কমলেও আগের দামেই মোটরসাইকেল কেনা যাবে।

হাওয়াই চপ্পল : শর্তসাপেক্ষে ১৫০ টাকা পর্যন্ত প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে এ জাতীয় পণ্যের দাম কমবে।

বীজ : কৃষিকাজে ব্যবহৃত বীজ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে চাষাবাদে ব্যবহৃত বীজের দাম কমতে পারে।

হাইব্রিড গাড়ি : পরিবেশ দূষণ এবং জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য হাইব্রিড গাড়ির আমদানি উৎসাহিত করার জন্য ১৮শ’ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড মোটরগাড়ি আমদানি সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে।

ওষুধ : কিডনি রোগের প্রতিষেধক আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে কিডনি রোগীরা কিছুটা কম দামে হলেও ওষুধ কিনতে পারবেন।

পাউরুটি ও কেক : দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষেরা প্রতিকেজি ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত পাউরুটি ও বনরুটি, হাতে তৈরি বিস্কুট ও হাতে তৈরি কেক (পার্টিকেক ব্যতীত) খেয়ে থাকেন। তাই প্রতিকেজি ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত পাউরুটি, বনরুটি, হাতে তৈরি বিস্কুট এবং ১৫০ টাকা পর্যন্ত হাতে তৈরি কেক (পার্টিকেক ব্যতীত)-এর উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

কৃষিজমির রেজিস্ট্রেশন ফি : কৃষি জমির রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো হয়েছে। এর বাইরে দাম কমবে রড, সিমেন্ট, বল পয়েন্ট কলম, ক্যানসারের ওষুধ, টায়ার-টিউব তৈরির কাঁচামাল, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ, ডে কেয়ার হোম সার্ভিস, আমদানি পল্ট্রি খাদ্য, দেশীয় রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার, গুঁড়ো দুধ।

দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের:

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন মুহিত। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ আকার বেড়েছে প্রস্তাবিত বাজেটের।

প্রস্তাবিত এ বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ছোট ফ্ল্যাট, ফার্নিচার, পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা ইত্যাদি।

আমদানি করা চাল : আমদানি করা চালের উপর রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ ও রেগুলেটরি শুল্ক ৩ শতাংশ প্রযোজ্য হবে। ফলে আমদানি করা চালের দাম বাড়তে পারে।

ছোট ফ্ল্যাট: আগামী অর্থবছর থেকে ছোট ফ্ল্যাট (১ থেকে ১১০০ বর্গফুট) কেনায় খরচ বাড়তে পারে। তবে মাঝারি আকারের (১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট) ফ্ল্যাট কেনার খরচ কমতে পারে। কেননা বর্তমানে ১ থেকে ১১০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আর ১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাটের হার রয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী

অর্থবছরে এই দুই ধরনের ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে বড় ফ্ল্যাট (১৬০১ থেকে বেশি) নিবন্ধনের ভ্যাট হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। এদিকে যারা পুরনো ফ্ল্যাট কিনবেন তাদেরও খরচ বাড়তে পারে। কারণ নতুন অর্থবছরে পুরনো ফ্ল্যাট পুনঃনিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।

ফার্নিচার : ফ্ল্যাট কেনার পর ঘর সাজানোর আসবাবপত্র কিনতে গেলে আগামী অর্থবছর বাড়তি চাপে পড়তে হতে পারে ক্রেতাদের। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আসবাবপত্র উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ১ শতাংশ করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে আসবাবপত্র উৎপাদন পর্যায়ে ৬ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী অর্থবছর থেকে তা ৭ শতাংশ হারে প্রস্তাব করেছেন
অর্থমন্ত্রী। আর বিপণন পর্যায়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট পরিবর্তন করে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

পোশাক : বর্তমানে নিজস্ব ব্র্যান্ড সংবলিত তৈরি পোশাক বিক্রিতে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আছে। সরকার আগামী অর্থবছর থেকে এ খাতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য ব্র্যান্ডবিহীন পোশাক পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রেও ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর বর্তমানে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এ খাতে ব্যয় বাড়বে। সম্প্রতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বাড়তে পারে।

ই-কমার্সে ভ্যাট : বর্তমানে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা কেনাবেচা অনেক বেড়েছে। এভাবে পণ্য ও সেবার পরিসর আরও বাড়াতে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামে একটি সংজ্ঞা দেয়া হচ্ছে বাজেটে।

অনলাইনভিত্তিক যেকোনো পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর এ সেবার আওতাভুক্ত হবে। এই ভার্চুয়াল বিজনেস সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ছে অনেক পণ্যে : সরকার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে তার ওপর ভ্যাট আরোপ করে। ট্যারিফ ভ্যালু সাধারণত বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম হয়। ফলে একই হারে ভ্যাট আরোপ হলেও আমদানি পণ্যের চেয়ে দেশি পণ্যের ভ্যাট দিতে হয় কম। আসছে বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এ তালিকায় রয়েছে- টমেটো পেস্ট, কেচাপ, সস, বিভিন্ন ফলের পাল্প, ফলের জুস, ব্যবহার অযোগ্য ট্রান্সফর্মার অয়েল, লুবব্লেন্ডিং অয়েল, বিভিন্ন ধরনের পেপার ও পেপার প্রোডাক্ট, কটন ইয়ার্ন বর্জ্য, ওয়েস্ট ডেনিম, স্ট্ক্র্যাপ/শিপ স্ট্ক্র্যাপ, সিআর কয়েল, জিপি শিট, সিআই শিট, রঙিন সিআই শিট, ব্লেড, চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস।

আমদানিতে অগ্রিম ভ্যাট বাড়ছে : আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আমদানিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে প্রায় ১১০০ ধরনের পণ্য আমদানি হয়, যেখানে ভ্যাট দিতে হয়। এর বাইরে অ্যানার্জি ড্রিংক, প্রসাধন সামগ্রী, সানস্ক্রিন সানগ্লাস, আফটার শেভ লোশন, সিগারেট, সিরামিক বাথটাব, ফিলামেন ল্যাম্প, পলিথিন, লিপস্টিক, পুরনো ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি, আমদানি করা মোবাইল ফোন, বিদেশি চকোলেট, কফি, গ্রিন টি, আমদানি করা বাদাম, আমদানি মধু, ইউপিএস, আইপিএস, স্টাবিলাইজার, ছাপাখানার পণ্য, প্লাস্টিক ব্যাগ, মোবাইল ব্যাটারি চার্জার, নেলপলিশ, অ্যালকোহল বিক্রয়কারী হোটেল রেস্তরাঁয় সেবার মান, হেলিকপ্টার সেবা, বিড়ি, জর্দা, গুল, সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন লাইন কেনাকাটা। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

‘কর্পোরেট করে ছাড়, ইতিবাচক প্রভাব পড়বে শেয়ারবাজারে’:

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করায় শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বড় অংশই ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের। কর্পোরেট কর হার কমানোর কারণে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফায় কিছু হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে সার্বিক শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক পড়বে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের টানতে নতুন বছরের বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী।

মুহিতের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করা হবে। আর অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত উভয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, কর্পোরেট কর হার কমানো পুঁজিবাজারের জন্য একটি ভালো সংবাদ। বাজারে এর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। কারণ কর্পোরেট কর হার মাত্র আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে।

ডিএসই’র ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করেছেন তাতে শেয়ারের বাজারের জন্য খারাপ কিছু নেই। সুতরাং বাজেটের কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আমরা আশা করছি।

তিনি বলেন, বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানির একটি বড় অংশ এই খাতের। কর্পোরেট কর হার কমানোর কারণে এ খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আমাদের বেশি কিছু দাবি রয়েছে। আমাদের সেই দাবিগুলো বাজেটের পর মেনে নেয়া হবে বলে আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি।

ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের কর্পোরেট কর হার কমানো হলেও অন্য খাতগুলোর কর্পোরেট কর হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যের অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলে থাকেন আমাদের কর্পোরেট কর হার খুব বেশি। কথাটি ঠিক নয়। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির (তালিকাভুক্ত) বিদ্যমান কর হার ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় যা বেশ কম। এছাড়া, আমাদের কর হার বৈশ্বিক গড় হার (২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ) এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

তবে ব্যাংকিং খাতের কর হার কিছুটা বেশি হওয়ায় আমি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। এতে এ খাত হতে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে- বলেন মুহিত।

অন্যান্য কোম্পানি করহার অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোটামুটিভাবে বর্তমান সর্বোচ্চ করহার হবে বাস্তবে ৪০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় হারটি হবে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। একমাত্র তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিরা এর চেয়ে উচ্চহারে কর দেবেন।

ফেসবুক গুগল ইউটিউবকে ৩৫ শতাংশ কর দিতে হবে:

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ইউটিউব এবং সর্ববৃহৎ অনুসন্ধান ইঞ্জিন গুগল করের আওতায় আসছে। দেশে ফেসবুক গুগল ইউটিউবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আয়ের ৩৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট অধিবেশনে বলা হয় ‘ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল খাত যেমন- ফেইসবুক, গুগল, ইউটিউব ইত্যাদির বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের উপর করারোপণের জন্য আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে প্রয়োজনীয় আইনী বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হলো।’

বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রচুর আয় করছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা তেমন একটা কর পাচ্ছি না। ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়টি তুলনামূলক নতুন বিধায় এসব লেনদেনকে করের আওতায় আনার মতো পর্যাপ্ত বিধান এতদিন আমাদের কর আইনে ছিল না।

এছাড়া কর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক করার অনেক উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে এই অর্থবছর হতে করদাতাকে ই-মেইলে নোটিশ প্রেরণের বিধান কর আইনে সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়।

তৈরি পোশাক খাতে আয়কর বাড়ছে:

প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে তৈরি পোশাক প্রস্ততকারক ও রফতানিকারকদের আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব করেন তিনি।

বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিতে নিয়োজিত সাধারণ কারখানার করহার ১৫ শতাংশ ও তৈরি পোশাকের তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বর্তমানে একক আয়কর হার ১২ শতাংশ রয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবেশসম্মত ভবন সনদ (গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন) আছে এমন সবুজ কারখানার আয়কর হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

মুহিত বলেন, দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতকে বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করা হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতের পণ্যের রফতানি মূল্যের উপর উৎসে করহার চলতি বছরের মতোই দশমিক ৭ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে।

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য (২০১৮-১৯) ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বাজেটের আকার বাড়ছে মাত্র ৬৮ হাজার কোটি টাকা। নির্বাচনী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

৫ বছরে করদাতার টার্গেট ১ কোটি: 

আগামী পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা এক কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৮০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৮-১৯ অর্থবছর) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সংসদে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের আমলে ২০১১ সালে কর বিভাগে সর্বশেষ বড় সংস্কারটি হয়েছিল। ২০১১ সালের পরবর্তী কয়েক বছরে করদাতার সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ৯ লাখ হতে বেড়ে ১৬ লাখে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি যে, কর প্রদানে বর্তমানে পরিলক্ষিত আগ্রহের উপর ভিত্তি করে লক্ষ্যমাত্রা হলো যে, আগামী ৫ বছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা এক কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা হবে ৮০ লাখ।’ অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে করদাতার সংখ্যা ৩৩ লাখ।

 প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এবারের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এটি শেষ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা দশম বাজেট। একই সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ১২তম বাজেটও এটি।

বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির আকার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বাজেটের আকার বাড়ছে মাত্র ৬৮ হাজার কোটি টাকা। নির্বাচনী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার তুষ্টিই মূল লক্ষ্য ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করছেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনী বছর হওয়ায় এবারের বাজেট সরকার ও সব শ্রেণির মানুষের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে ভোট, অন্যদিকে নানা প্রতিশ্রুতিসমৃদ্ধ এ বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি মাথায় রেখেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।

যদিও বাজেট বাস্তবায়নে পুরো সময় পাচ্ছে না বর্তমান সরকার। কারণ, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার কোনো ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছে না। তাই অন্যবারের মতো নতুন নতুন কর চাপিয়ে ভোটারদের অসন্তুষ্ট করার মতো তেমন কোনো ঘোষণা থাকছে না।

বিশ্বব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার (দেশজ উৎপাদন) ৬ দশমিক ৭ থাকবে বলে অনুমান করছে। সেখানে অর্থমন্ত্রী আজ (বৃহস্পতিবার) জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ধরে বাজেট উপস্থাপন করছেন।

প্রস্তাবিত বাজেট এ খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে: এফবিসিসিআই সভাপতি

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব নয়। প্রস্তাবিত বাজেট এ খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফেডারেশন ভবনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এ মন্তব্য করেন সংগঠনটির সভাপতি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইএর সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, মুনতাকিম আশরাফ প্রমুখ।

শফিউল ইসলাম বলেন, বাজেটে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কেটি টাকার ঘাটতি দেখানো হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা নেয়া হবে। সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। এতে ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংক নির্ভর বাজেট উৎপাদন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সম্পতি ব্যাংক খাতে সুদহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেটে ব্যাংক লোন নেয়ার ক্ষেত্রে সুদহার বাড়বে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকে অস্থিরতার জন্য নিবিড় পর্যালোচনা দরকার।

শফিউল ইসলাম বলেন, আমরা বাজেটে ইনকাম ট্যাক্স সম্পন্ন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজেটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। যেন তড়িঘড়ি না করে শেষ তিন মাসে সব প্রকল্পে হাত দেয়া না হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো দিক আছে। বিদ্যুৎ, পরিবহন, অবকাঠামো খাতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। বিধবা ভাতা, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানায়।

নির্বাচনের বছরে বড় বাজেট জনগনের সাথে প্রতারণা: মোশাররফ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে।ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তাই আজকে আমরা কষ্টের মধ্যে আছি। দেশ অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে আমাদের বাজেট সেশন শুরু হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিরাট বাজেট দেয়া হবে। গত বছর ঘাটতি বাজেট দেয়া হয়েছিল। গত বছরের উন্নয়ন বাজেটকে কাটছাট করে কমিয়ে আনতে হয়েছিল। এ বছর নির্বাচনী বাজেট। আরও বড় বাজেট দিয়ে কেন জনগণকে প্রতারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনের বছর এই ধরনের বাজেট জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।

মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে সামারাই কনভেনশন সেন্টারে ড. মোশাররফ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

মোশাররফ বলেন, গত বছরের বাজেট দিয়ে তারা রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। এ বছরও একটা বিশাল ঘাটতির বাজেট পেশ করে জনগণকে প্রতারিত করা হবে। ঋণ নিতে নিতে এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যে, ঋণের সুদ দিতে দিতে, আজকে আপনারা দেখেছেন ব্যাংকগুলো থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে টাকাগুলো লুট করে নিয়ে গেছে, এই অবস্থায় যে বাজেট দেয়া হচ্ছে, এটা লোক দেখানো। জনগণকে ঠকানো, নির্বাচনী বাজেট ও জনগণকে ধোঁকা দেয়ার বাজেট। তাই আমরা আশা করি ধোঁকা না দিয়ে আমাদের সামর্থ অনুযায়ী নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যে উন্নয়ন করবো, সেই বাজেট যেন আগামী দিনে পাস হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, হোমনা উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মুফতি নাসিম উদ্দিন কাসেমী।

‘জঙ্গিবাদ ও আগুন সন্ত্রাস মোকাবিলা করেও বড় বাজেট দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে: ইনু

তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ ও আগুন সন্ত্রাস মোকাবিলা করেও বড় বাজেট দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। আর বাজেট বাস্তবায়নে পাঁচ ভাগ অপূর্ণতাকে বড় দেখিয়ে ৯৫ ভাগ সফলতাকে আড়াল করা যায় না।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারে জাসদ ঢাকা-পূর্ব আয়োজিত ইফতার মাহফিলে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জাসদ সভাপতি বলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির পায়ের নিচের মাটি যে মজবুত হয়েছে, প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে সাত শতাংশ এবং স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়াসহ সব সূচকেই তার প্রমাণ মেলে। মেগা প্রকল্প নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বন্ধ করুন, কারণ কোনো উন্নয়নই আকাশ থেকে ঝরে পড়েনি। নিজ শক্তিতে, নিজ মাটিতে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান উল্লেখ করে ইনু এ সময় বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী উন্নয়নের সুফল যেমন মানুষ এখনই পাচ্ছে, সেই সাথে ভবিষ্যতের ভিত্তিপথও তৈরি হচ্ছে।

বিস্ময়কর উন্নয়নের এই ধারা বজায় রাখতে বিএনপির নির্বাচন বানচাল-ভন্ডুলের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে হবে এবং যথাসময়ে নির্বাচন করতে হবে, বলেন হাসানুল হক ইনু। সভায় জাসদ সভাপতি ইনু তার দল থেকে ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী হিসেবে জাসদ ঢাকা-পূর্ব সভাপতি শহীদুল ইসলামের নাম ঘোষণা দেন। জাসদ ঢাকা পূর্ব সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসেন আখতার, নূরুল আখতার, শফিউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।