বিশেষ প্রতিনিধিঃ রাজধানী মিরপুর কালশী মোড়ের কাছাকাছি কর্তব্যরত ট্রফিক সার্জেন্টকে মারধর করার সাথে সাথে পিস্তল বের করে হত্যা করতে উদ্দ্যত হন পল্লবী থানা যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা। এঘটনায় উক্ত ট্রাফিক পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, পল্লবী ট্রাফিক জোনে কর্মরত সার্জেন্ট মোঃ আল ফরহাদ গত ২৬ জুলাই সঙ্গীয় কনস্টেবলসহ কালশী রোডের পূর্ব প্রান্ত ক্রসিং এবং আশেপাশের এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনে কাজ করছিলেন। বেলা ১১ টার দিকে কালশী মেইন রোডের পূর্ব প্রান্তের দিকে একটি বসুমতি বাসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সার্জেন্ট আল ফরহাদ সঙ্গীয় কনস্টেবলসহ দ্রুত পদক্ষেপ নেন। এসময় বাসের পিছনে কালো জিপ গাড়িতে থাকা যুবলীগ নেতা জুয়েল মোল্লা গাড়ি থেকে নেমেই বাসের ড্রাইভারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় সার্জেন্ট ফরহাদ তাকে গাড়ির পাশ কাটিয় যেতে বললে ক্ষেপে যায় জুয়েল রানা বাজে ভাষায় গালাগালি করতে থাকে সার্জেন্ট ফরহাদকে। সাজেন্ট ফরহাদ তাকে মুখে মাস্ক পড়ে সুন্দরভাবে কথা বলার অনুরোধ জানালে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে জুয়েল রানা মারধর শুরু করে ফরহাদকে।
এক পর্যায়ে যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা পকেট থেকে পিস্তল বের করে সার্জেন্ট ফরহাদকে হত্যা করতে গেলে ফরহাদ নিজেকে বাচাঁতে দ্রুততার সাথে জুয়েলের হাত চেপে ধরে এবং তার সঙ্গীয় কনস্টেবলসহ আশেপাশে লোকজন জুয়েল রানা ও ফরহাদকে নিরাপদ দুরুত্বে নিয়ে যায়। এ ঘটনার কিছু সময়ের মধ্যে জুয়েল রানার ৩০/৪০ জনের বাহিনী এসে সার্জেন্ট ফরহাদকে আবারো মারধর করতে থাকে।
এ সময় জুয়েল রানা সার্জেন্ট ফরহাদের বুকে থাকা বডিঅন সরকারী ক্যামেরা যাতে পুরো ঘটনাটির ভিডিও ধারণ ছিল সেটি ছিনিয়ে নেয় ও টেনে হিচড়ে তার পোষাক ছিড়ে ফেলে। ঘটনাটি সার্জেন্ট ফরহাদ ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর এ কে এম মোস্তাফিজুরকে জানালে তিনি পল্লবী থানা পুলিশকে অতিবাহিত করলে পল্লবী থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা তার বাহিনী নিয়ে পলায়ন করে।
ঘটনাস্থলে এসি ট্রাফিক পল্লবী, এডিসি ট্রাফিক মিরপুর উপস্থিত হয়ে সাজেন্ট ফরহাদকে উদ্ধার করে নিকটস্থ ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
এ বিষয়ে জুয়েল রানা বলেন, আমি বাস থামার বিষয়টি জানার জন্য গাড়ি থেকে নামতেই সার্জেন্ট এসে আমাকে মারধর শুরু করে। আমার এমপি মহোদয় ডিসি সাহেব ও তার সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করে দিবেন। সার্জেন্ট ফরহাদের কাছে ঘটনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কে এই যুবলীগ নেতা পিস্তল জুয়েল: মাত্র এক যুগ আগেও বাবার মতো রিকশা দেখাশোনা করতেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সংগঠনটির মিছিল সমাবেশে অংশ নিয়ে নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জুয়েল রানা। এরপর নেতাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজেই খুলে বসেন রিকশার গ্যারেজ। আরো কিছু দিন পর বাগিয়ে নেন পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপরই বাউনিয়া বাঁধ, পলাশনগর, রূপনগর, বেগুনটিলা ও লালমাটিসহ আশপাশ এলাকায় সরকারি খাসজমি দখল করে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন , ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে পল্লবী-কালশী এলাকায় রিকশা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন রিকশাচালক পিতার সন্তান জুয়েল। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন তিনি। এর মাধ্যমেই দলটির নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠনা গড়ে ওঠে তার। দলটি ক্ষমতার আসার পর রাতারাতি পাল্টে যায় তার ভাগ্য। অনেক রিকশার মালিক বনে যাওয়া জুয়েল কালশী মোড়ে স্কুলের পাশে বসান গ্যারেজ। স্থানীয় এক এমপির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদও বাগিয়ে নেন তিনি। এরপরই বাউনিয়া বাঁধ, পলাশনগর, রূপনগর, বেগুনটিলা ও লালমাটিসহ আশপাশ এলাকায় সরকারি খাসজমি দখল করে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন। কালশী-বেগুনবাড়ী সংলগ্ন সরকারি জমিতে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘রাজু বস্তি’। সেখান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন হয় তার।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালী এমপির ক্যাডার হিসেবে কাজ করেন জুয়েল। বিভিন্ন মামলায় কয়েক দফা জেলে যাওয়া জুয়েল নিজেও মামলায় ফাঁসিয়েছেন বহু মানুষকে। মিরপুর এলাকায় জুয়েলের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, এলাকায় মাদক ও জুয়াসহ নানা অবৈধ কাজের নিয়ন্ত্রক তিনি। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বাউনিয়াবাঁধসহ মিরপুরের শতাধিক ক্যাডার বাহিনী।
পিস্তল জুয়েলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: জুয়েল রানা নামটি রাজধানীর কালশী, কুর্মিটোলা ও বাউনিয়া বাঁধ এবং আশপাশ এলাকাবাসীর কাছে অনেকটা মূর্তিমান আতঙ্ক! তিনি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিহারি ক্যাম্পে নয়জনকে পুড়িয়ে মারা, মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ, জমি দখল ও চাঁদাবাজিসহ স্থানীয়রা অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।
রাজধানীর পল্লবীর পলাশনগরে তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল একটি পরিবার। ওই টাকার লেনদেন মিটমাট করার কথা বলে পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা সাড়ে পাঁচ কাঠা জমিসহ তাঁদের বাড়ি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জুয়েল রানা তাঁদের জিম্মি করে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে নেন। সম্প্রতি নিজের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার বাড়িটি দখল করে নিয়েছেন তিনি। পল্লবীর পলাশনগর সড়কঘেঁষা ৬ নম্বর প্লটে সাড়ে পাঁচ কাঠা জমির মধ্যে দোতলা বাড়িটি। এর বড় একটি অংশই খোলা জায়গা। পেছনে যুবলীগ নেতা জুয়েলের খালি প্লটে রিকশার গ্যারেজ। পারিবারিক ওই সম্পত্তির মালিক কয়েকজন।
অন্যতম অংশীদার মাহবুব হাসান জানান, স্থানীয় স্বপন, রিয়াদ ও বাবুর কাছ থেকে তাঁরা ১২ লাখ টাকা ঋণ করেছিলেন। ওই লেনদেন মেটানোর নামে জুয়েল রানা ঘোষণা দেন তিনি তিন পাওনাদারকে টাকা দিয়ে দেবেন। তিন ব্যক্তিকে মাহবুব হাসানদের কাছ থেকে টাকা না নিতে বলেন। এরপর একদিন অস্ত্র ঠেকিয়ে জুয়েল রানা ও তাঁর লোকজন মাহবুবকে হত্যার হুমকি দিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে সই রাখেন।
‘কুষ্টিয়ায় চায়ের দোকানে দুজনকে গুলি, আওয়ামী লীগ নেতাসহ আটক ২’
কুষ্টিয়ার মিরপুরে আওয়ামী লীগ নেতার গুলিতে দুজন আহত হয়েছে বলে......বিস্তারিত