TadantaChitra.Com | logo

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দলে আন্দোলনের আভাস

প্রকাশিত : জুন ০৯, ২০১৮, ০৬:২০

খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দলে আন্দোলনের আভাস

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ চার মাস ধরে কারাবন্দি অবস্থায় আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত হলেও দ্রুতই তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাবেন বলে প্রথমদিকে আশাবাদী ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু নানা দীর্ঘসূত্রতার পর হাইকোর্ট থেকে চার মাসের জামিন পেলেও অন্য কয়েকটি মামলায় পরোয়ানা থাকায় আজও তার মুক্তি মেলেনি। এমনকি তাকে আসন্ন ঈদ কাটাতে হচ্ছে কারাগারেই। সরকার পক্ষের একের পর এক হস্তক্ষেপের কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় সহসাই তার মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন বিএনপি নেতারা। এ অবস্থায় দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য শিগগিরই কঠোর আন্দোলনে নামার আভাস দিচ্ছেন তারা।

চার মাসের কারাবাসে খালেদা জিয়া চরম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তার চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ গঠিত মেডিকেল টিমের সুপারিশে ৭ এপ্রিল তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল

বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর আর তাকে বাইরে আনা হয়নি। এমনকি জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বকশীবাজার বিশেষ আদালতেও তাকে হাজির করা হয়নি অসুস্থতার কথা বলে। বিএনপির পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থাহীনতার কথা জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। এতে চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন দলের নেতারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন একতরফা করতে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মিথ্যা ও জাল নথি তৈরি করে সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। তিনি সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার শিকার। গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, যা অমানবিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।

এদিকে দলের সিনিয়র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও এখন বলছেন, বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্ত হতে পারবেন না। তাকে মুক্ত করতে রাজপথে নামতে হবে। তাদের ভাষায়, যেহেতু রাজনৈতিক কারণে তিনি জেলে আছেন। তাই তাকে রাজনৈতিকভাবেই মুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও কথা বলছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বুধবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা আমাদের বন্ধুরা আছেন, যাদের বয়স আছে, যাদের সাহস আছে, তারা সবাই প্রস্তুতি নিন। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনই আমাদের পথ।

অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আশা রেখে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন- এটাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। সে আন্দোলনের মাধ্যমেই পতন ঘটবে স্বৈরাচার সরকারের।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন দলকে এ ঐক্য প্রক্রিয়ায় আনার জন্য যোগাযোগ করছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই আগামী নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের অপেক্ষায় আছে দলটি।

৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরদিন থেকেই তার মুক্তির জন্য দফায় দফায় ঢাকাসহ সারা দেশে অনশন, অবস্থান, মানববন্ধন এবং মিছিল, সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। তবে এসব কর্মসূচি পালনেও পুলিশ প্রশাসনের বাধা-প্রতিবন্ধকতার কারণে এক পর্যায়ে তা থেকে সরে এসে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদার মুক্তির চেষ্টা করছিল দলটি। কিন্তু দীর্ঘ চার মাসেও তার মুক্তি না হওয়ায় দলে হতাশা সৃষ্টি হওয়ায় ফের আন্দোলনমুখী হতে চাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

কারা সূত্রে জানা গেছে, বিটিভি দেখে, পত্রিকা পড়ে ও নামাজ-রোজা করে কারাগারে সময় কাটছে খালেদা জিয়ার। দলীয় সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের কপি পাওয়া নিয়ে জটিলতায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতেই সময় কাটে অনেক দিন। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ১৭৬ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরদিন আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ বিষয়ে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত শুনানিতে সাজা রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জরিমানার দ-াদেশ স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি নিম্ন আদালতের রায়ের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি।

নানা জটিলতার পর ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে তা স্থগিত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখে ১৬ মে রায় দেন আপিল বিভাগ। তবে অন্য মামলায় পরোয়ানা থাকায় তিনি মুক্তি পাননি। এসব মামলায় জামিনের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপির আইনজীবীরা।

এদিকে ২৮ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ কুমিল্লায় হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। আর নড়াইলের মানহানির মামলায় আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন আদালত। খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে সেদিনই আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা পরের দিন চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শুনানি নিয়ে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৩১ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়াকে কুমিল্লায় হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রাখেন এবং ২৪ জুনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন।

অপরদিকে নড়াইলে মানহানির একটি মামলায় জামিনের আবেদন করলেও ৫ জুন তা নামঞ্জুর করে আদালত। ফলে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়টি আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপির আইনজীবী শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

খালেদার সুচিকিৎসা দাবিতে বিএনপির কর্মসূচি কাল : দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে রোববার সারা দেশে জেলা ও মহানগরে এবং ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। শুক্রবার রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আজ (শুক্রবার) খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয়রা তার সঙ্গে ঢাকা পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাতের জন্য গিয়েছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে তারা দেশনেত্রী সম্পর্কে যে বর্ণনা দেন তা শুধু মর্মস্পর্শীই নয়, হৃদয়বিদারক। নিকটাত্মীয়রা বলেছেন, ৫ জুন খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি তিন সপ্তাহ যাবত ভীষণ জ্বরে ভুগছেন; যা কোনক্রমেই থামছে না। চিকিৎসাবিদ্যায় যেটিকে বলা হয় টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক)। তার দুটো পা-ই এখনও ফুলে আছে এবং তিনি তার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না।

রিজভী চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, আগে ব্যবস্থা নিলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হতো না। সরকারের ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তার প্রয়োজনীয় যে চিকিৎসাগুলোর জন্য বারবার দাবি করা হয়েছিল যেমন বিশেষায়িত এমআরআই, সিটি স্ক্যান, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি, বিএমডিসহ জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে জরুরি চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা। কিন্তু দলের নেতাদের দাবি এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ ক্রমাগত উপেক্ষাই করে চলেছে সরকার।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।