TadantaChitra.Com | logo

১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমার বাবার রক্ত যেন বৃথা না যায়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : আগস্ট ১৪, ২০২০, ১৫:৪৩

আমার বাবার রক্ত যেন বৃথা না যায়: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমরা কীভাবে সহ্য করে আছি! শুধু একটা চিন্তা করে যে এই দেশটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার যতটুকু সাধ্য সেইটুকু করে দিয়ে যাব যেন তার আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে যারা হত্যা করেছে তারা ঘৃণ্য। তাদের বিচার করেছি, আল্লাহ আমাদের সেই শক্তি দিয়েছেন। ইনডেমনিটি বাতিল করে দিয়ে তাদের বিচার করতে পেরেছি এতে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি।’

জাতির পিতা শেখ মুজিবুরের রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ৫০ হাজার বার কোরআন খতম এবং জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সমাজসেবা অধিদফতর আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমরা যারা এখানে উপস্থিত এবং অন্যান্য যারা আছো সবাইকে বলবো- তোমরা ছোটবেলা পিতামাতাকে পাওনি। অনেকে পিতাকে পাওনি, অনেকে মাকে পাওনি। অনেকে কাউকেই পাওনি। অতএব স্নেহ ভালবাসা কী জিনিস সেটা তোমরা উপলব্ধি করতে পারনি। আমার মা মাত্র তিন বছর বয়সে তার মাকে হারিয়েছিলেন। এরপর ৫ বছর বয়সে তার পিতাকে হারান। ৭ বছর বয়সে দাদাও মারা যান। সম্পূর্ণ এতিম অসহায় হয়ে পড়েন।এই কষ্টটা আমি বুঝি এই কারণে। কারণ আমি আমার মায়ের বড় সন্তান। মায়ের যে কষ্ট মা আমার সঙ্গে সবসময় বলতেন। সে জন্য এই কষ্টটা আমি বুঝি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কষ্ট আরও বুঝলাম ৭৫ এর ১৫ আগস্ট। একদিন সকালে উঠে যখন শুনলাম আমাদের কেউ নেই। এই ১৫ আগস্ট আমি হারিয়েছি আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সব সময় ছায়ার মতো আবার বাবার সঙ্গে ছিলেন। আমার ছোট ভাই, আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট ছিল, ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, সে মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তাকে হত্যা করে, তার নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামালকেও হত্যা করে। যার হাতের মেহেদির রং তখনও মোছেনি। তার বুকের রক্তে তার হাত যেন আরও রাঙিয়ে যায়। তার থেকে ছোট লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, সে সেনাবাহিনীর একজন অফিসার। বিলাতে মিলিটারি একাডেমি থেকে ট্রেনিং নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল।’

‘তাকেও খুনিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরই কিছু বিপথগামী সদস্য এবং কিছু উচ্চপদস্থ ছিল যারা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। হত্যা করেছিল তারও নবপরিণীতা বধূ রোজী জামালকে। যে আমার ছোট ফুফুর মেয়ে ছিল। অনেক শখ করে তাকে ঘরে আনা হয়েছিল। আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসের। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি পঙ্গু ছিলেন। কিন্তু তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাকেও নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ছোট ভাইটি- আমি এখনও এই প্রশ্নের উত্তর পাই না। তার মাত্র ১০ বছর বয়স। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সে একদিন সেনাবাহিনীতেই যোগদান করবে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস তাকে সেই সেনাবাহিনীর সদস্যরাই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করল। তার অপরাধ কী?

কর্নেল জামিল যিনি আমার বাবার মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন। এই খবর পেয়ে তিনি ছুটে এসেছিলেন। তাকেও তারা হত্যা করেছিল। তিনি তো সামরিক বাহিনীর বড় অফিসার ছিলেন। কিন্তু এই সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।

স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমি স্বামী তখন জার্মানিতে। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। অল্প কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আর দেশে ফিরতে পারিনি। ৬ বছর আমাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। আমার বাবার লাশও দেখতে পারিনি। কবরও জেয়ারত করতে পারিনি। আসতেও পারিনি। এভাবে আমাদের বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল। এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে থাকার মতো কী কষ্ট এটা আমাদের মতো যারা ছিল তারা জানে। আমাদের পরিবারের আত্মীয় স্বজন যারা গুলিতে আহত, যারা কোন বেঁচে ছিল তারাও ওভাবে রিফিউজি হয়ে ছিল দিনের পরদিন।’

তিনি বলেন, ‘৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবে আমাদের চেষ্টা ছিল যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার সয়েছেন এদেশের সেই মানুষের জন্য কিছু করে যাবো। সেটিই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজকে একটা হত্যাকাণ্ড হলে সবাই বিচার চাইতে পারে, মামলা করতে পারে ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম আমাদের কারও মামলা করার বা বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। সেই অধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে। খুনিদের সমস্ত দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দেশে বিদেশে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তারা পুরস্কৃত হয়েছিল এ খুন করার জন্য। নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতি হত্যাকারী তাদের পুরস্কৃত করা হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। আমি সেই অবস্থা থেকে পরিবর্তন আনতে চাই। এ দেশে সবমানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সব মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, ন্যায়পরায়ণতা যেন সৃষ্টি হয়। মানুষের অধিকার যেন সমুন্নত থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ রাখি। আর স্বাভাবিকভাবে নিজেরা এতিম হয়েছি বলে এতিমের কষ্টটা আমরা খুব ভালো বুঝি। তাই তো আমাদের সবসময় চেষ্টা।’

‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা এই সমাজ কল্যাণে অনেক অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সংবিধানেও আমাদের শিশুদের অধিকারের কথা বলেছেন। শিশু অধিকার আইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই করে দিয়ে গেছেন। আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা থাকবে যারা এতিম, মা-বাপ হারা তারা যেন সুষ্ঠুভাবে মানুষ হতে পারে। তোমরা মন দিয়ে পড়াশোনা করো। নিজের পায়ে দাঁড়াও। তোমরা একেবারে একা না। আমরা আছি তোমাদের পাশে। আমি এবং আমার ছোট বোন সবসময় তোমাদের কথা চিন্তা করি।’

শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তোমাদের পাশে আছি। আমি যতক্ষণ আছি তোমাদের পাশে থাকব। তোমরাই আমাদের আপনজন। আমাদের দুই বোনের তোমরাই আপনজন। তোমাদের মধ্যে অনেক মেধাবী আছো, যারা একদিন এই দেশে অনেক বড় কাজ দেশের জন্য করতে পারবে। মানুষের জন্য করতে পারবে। সেভাবে কাজ করবে। সততা নিষ্ঠা একাগ্রতা নিয়ে কাজ করবে।’

‘দেশের জন্য তৈরি করো বড় হয়ে আরও এতিমদের জন্য সাহায্য করতে পারবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবে। তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে সহায়তা করতে পারবে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।