TadantaChitra.Com | logo

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জঘণ্য জনবান্ধব, বোধহীন মানবিকতা আর বিচারহীনতার নির্লজ্জ উদাহরণ দেখিয়েও নাকি মিরপুর বিভাগ ডিএমপির সেরা?

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৫, ২০২১, ১১:১১

জঘণ্য জনবান্ধব, বোধহীন মানবিকতা আর বিচারহীনতার নির্লজ্জ উদাহরণ দেখিয়েও নাকি মিরপুর বিভাগ ডিএমপির সেরা?

সাইদুর রহমান রিমনঃ 
===================
ডিএমপি’র বিচার বিশ্লেষণে বারবারই শীর্ষ স্থান অর্জনকারী মিরপুর বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তারা অর্থের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছেন, টাকা দেখলেই তাদের চোখ আনন্দে চকচক করে উঠে। এই তো কিছুদিন আগেই যুবলীগ নেতা বাপ্পীর সঙ্গে মিলেমিশে ডিসি, এডিসি, ইন্সপেক্টর মিলে ৬ জন শীর্ষ কর্মকর্তা ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে পল্লবী থানার ভেতরেই বোমা বিস্ফোরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটালেন। আবার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যা জঙ্গি নাটকও সাজালেন পুলিশ। ফলে করোনাকালেও বাংলাদেশে জঙ্গি দৌরাত্ম নিয়ে সারাবিশ্বের মিডিয়াগুলোর ধারাবাহিক প্রচার প্রচারণায় ভয়ানক প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সরকারের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডিসি, এডিসি, ওসি, ইন্সপেক্টরসহ মোট ১৩ জনকে দুই দফায় মিরপুর থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে শুধু। কিন্তু তারা যে ভাড়াটে খুনিদের মতো বাপ্পীর আদেশ নির্দেশ প্রতিপালনের জন্য যে বিপুল অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করলেন, থানার ভেতরে বোমা বিস্ফোরণের ভয়ানক কান্ড ঘটালেন, জঙ্গি নাটক সাজালেন- সেগুলো কী ধর্তব্য অপরাধের মধ্যে পড়ে না? সেসব ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলো না; তারপরও নাকি মিরপুর বিভাগ ডিএমপির সেরা??
একজন নিরীহ সংবাদকর্মিকে মিথ্যা ওয়ারেন্টের অজুহাত তুলে ্ক’দিন এক রাত আটক রেখে আদালতে পাঠালেও ওয়ারেন্টটি ভ‚য়া প্রমানিত হও। বিষয়টির বিচার প্রার্থনা করে মিরপুর ডিসি দপ্তরে আবেদন করে ওই সংবাদকর্মি এতটাই বিপাকে পড়েছেন যে, ‘সে লিখে দিতে বাধ্য হয়েছেন: আমি বিচার চাই না, নিজেই উল্টো মাফ চাইতেছি।’ এমন জঘণ্য জনবান্ধব, বোধহীন মানবিকতা আর বিচারহীনতার নির্লজ্জ উদাহরণ দেখিয়েও নাকি মিরপুর বিভাগ ডিএমপির সেরা ?

টাকা দেখলেই চোখ চকচক করে উঠার একটামাত্র দৃষ্টান্ত দেখুন। গত মঙ্গলবার বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে একটা লোককে একাকী ঘোরাফেরা করতে দেখেই নাকি সেখানকার বাগান কর্মিদের সন্দেহ হয় এবং তাকে আটক করে রেঞ্জ অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে বন্দী করে তিন বাগানকর্মি তাকে বেদম প্রহার করে এবং সারাদেহে নির্মমভাবে হাতুড়িপেটা করে থেতলে দেয়। এসময় তার ব্যাগ তল্লাশি করে বনকর্মিরা বিপুল পরিমাণ টাকা পায়। সে টাকাসহ লোকটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক রুহুল আমিনের কক্ষে। লোকটির সামনেই ব্যাগ থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা টেবিলের উপর নামিয়ে সবাই গুণতে থাকেন তা। গণনাকারীরা যে যার মতো কিছু কিছু টাকা সরিয়ে নেয়া সত্তেও টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ লাখ ২৯ হাজার। এরপর ঘন্টা দুয়েক ধরে লোকটির উপর হাতুড়ি পিটুনির সঙ্গে সঙ্গে মুখস্ত করানো হয়- “বলো আমার ব্যাগে ছিল ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা…বলো টাকা ছিল ৭ লা ১৯ হাজার।” একপর্যায়ে ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকাসহ তাকে পরিচালকের গাড়িতে তুলে শাহআলী থানায় নিয়ে গিয়ে সোপর্দ্দ করা হয়। পুলিশও তার উপর আরেকদফা চালায়….। জানা যায়, ভদ্রলোকের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা এলাকায়। ঢাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করেন। করোনা দুর্যোগে বৈশ্বিক বেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টির পর থেকেই তার চারটি ব্যাংক একাউন্টের সমুদয় টাকা তুলে তিনি সব সময় নিজের কাছে কাছেই রাখতেন। এরপর মোহাম্মদপুর শেখেরটেক এলাকায় বসবাসকারী আত্মীয় স্বজনকে খবর দিয়ে থানায় নিয়ে তাদের হাতে লোকটিকে বুঝিয়ে দিলেও টাকাগুলো থানাতেই রেখে দিয়েছে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন সূত্রে এ খবর পেয়ে দৈনিক খবর বাংলাদেশ এর স্থানীয় সাংবাদিক এরশাদ টিটু ও পারভীন আক্তার এবং দৈনিক ভোরের রিপোর্টার সোহাগ হোসেন থানায় হন। তারা আটক হওয়া লোকটির সন্ধান করলে এসআই হাবিব ও এসআই মিজান জানান, লোকটিকে তার এক বোনের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা জানতে চান, লোকটির কাছ থেকে জব্দকৃত টাকাও কি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে? তার জবাবে এসআই দুইজন জানান, ‘টাকা আমাদের দায়িত্বে অন্য এক সময়ে তার ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে দিবো।’ অবাক ব্যাপার তো? মানুষের পকেট হাতিয়ে, ব্যাগ তল্লাশি করে টাকা পেয়ে সেগুলো পুলিশের দায়িত্বে তার ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়ার মহান (!) দায়িত্বটা পুলিশকে কোন্ প্রজ্ঞাপনে দেয়া হলো তা কী জানার উপায় আছে?? শাহআলী থানার পুলিশ এখন ভদ্রলোককে ‘পাগল’ বলে আখ্যা দিচ্ছে। কিন্তু টাকাগুলো তার ব্যাগ থেকে হাতিয়ে নেয়ার আগেই তিনি পাগল ছিলেন নাকি টাকাগুলো হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই তিনি পাগল হওয়ার পথে… তা পুলিশ জানাতে পারেনি।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ওই সংবাদকর্মিরা পুলিশের কথায় দুর্গন্ধের আঁচ পেয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থল বোটানিক্যাল গার্ডেনে। পরিচালককে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করতেই এলোমেলো থা বলতে থাকেন তিনি। এবার বলেন, আমার সামনেই পগল লোকটার টাকা গুণে তারপর টাকাসহ থানায় নিয়ে সোপর্দ্দ করা হয়েছে। পরক্ষণেই তিনি বলেন, আমিতো টাকা য়সা কিছু দেখিনি, আমি অফিসেই ছিলাম না, আমি ফোনে ফোনেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলাম। কিন্তু আলাদা কক্ষে আটক করে দুই ঘন্টা ধরে তাকে হাতুড়িপেটা করার ক্ষমতা কোথায় পেলেন আপনারা? জবাবে রেঞ্জ অফিসার জানান, ‘প্রথমে তো চোর ভেবে তাকে উত্তম মধ্যম দেয়া হচ্ছিল; তারপর দেখা গেল সে একটা সোনার খনি!’

সংবাদকর্মিরা বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ডের সময়েই তড়িঘড়ি সেখানে শাহআলী থানার ওসি আসাদ ও এসআই মিজান হাজির হন। তারা বোটান্যিাল গার্ডেনের পরিচালক রুহুল আমিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বারে ৩৫ মিনিট আলোচনা করে বের হওয়ার পর পরই পরিচালকের সহকারীরা দৌড়ে গিয়ে সাংবাদিক সোহাগ ও এরশাদকে আটক করে। হঠাতই এক মেয়েকে হাজির করা হয় সেখানে। তিনিই অভিযোগ তুলে বলেন, একজন লোকের সঙ্গে কিছুটা অসংলগ্ন অবস্থায় তাকে পেয়েই নাকি সাংবাদিক সোহাগ ভিডিও করতে করতেই নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৩০০ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। অতএব সোহাগকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়, তারপর ডিসি অফিসে। অত:পর রাত ১১টার পর ডিসি নাকি সাংবাদিক সোহাগের বিরুদ্ধে পুলিশ সেজে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা রুজুর নির্দেশ দেয়া হয়। ৩০০ টাকার চাঁদাবাজকে খোদ ডিসি’র জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়ে গেল?

ওহ্, ভুলেই গিয়েছিলাম, ডিএমপির সেরা বিভাগ মিরপুর-সেখানকার ডিসি আসম মাহতাবউদ্দিন পিপিএম। তার কাজকর্ম তো একটু ভিন্ন ধাচেরই হওয়ার কথা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং অন্যান্য ক্ষেত্রে তার জাদুকরী বিদ্যা আছে বলেই তো তিনি ডিএমপির সেরা!


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।