অবৈধ পত্রিকার বিজ্ঞাপন ফর্মের হিড়িক!

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৪ years ago

এম এইচ মুন্না: কিছু সংখ্যক অসাধু দালাল চক্রের দ্বারা অর্থনীতি ধ্বসের মুখে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অসাধু দালাল ও তথাকথিত নামধারী সাংবাদিকদের চাঁদাবাজী ও বিজ্ঞাপন বাণিজ্যের দৌরাত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলশ্রতিতে ভুঁইফোড় সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক নামে বিভিন্ন পত্রিকায় সয়লাব আমাদের এই দেশ।

 

প্রকৃত বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিদের অবজ্ঞা করে কিছু ব্যাংক-বীমা সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কর্মকর্তারা অর্থ লোভে পড়ে এই সমস্ত ভুঁইফোড় পত্রিকার প্রতিনিধি নামক দালাল চক্রের কাছে বিজ্ঞাপন ও তার অর্থ ভাগাভাগি করে নেওয়াতে মূলধারার পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিগণ বঞ্চিত হচ্ছেন।

পত্রিকার মিডিয়া বা ডিক্লারেশন আছে কিনা সে তথ্য পাওয়া যায় ডিসি অফিসের ওয়েবসাইটে। তবে তা যাচাই বাছাই না করে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর এসকল ভুঁইফোঁড় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পত্রিকার ডিক্লারেশন এর কপি না দেখিয়ে বেশ কিছু সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ইচ্ছামত নাম দিয়ে বিভিন্ন নামে-বেনামি পত্রিকা বানিয়েও সংগঠনকে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে ।

 

জানা যায়, ডিসি অফিস কর্তৃক কোন ডিক্লারেশন না নিয়েই বেশ কিছু বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পুরুষ এবং মহিলারা ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে একাউন্ট করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন প্রকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক তেমনি বাংলাদেশ সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যে প্রতিনিধিরা নাম লিখতে কলম ভাঙ্গেন পাঁচটি তারা হয়েছেন সম্পাদক ও প্রকাশক এবং অনেকেই ছদ্মনামে বাহারি নামের পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন, যা কিনা প্রশাসনের নাকের ডগাতেই হচ্ছে।

 

তবে প্রশাসন বলছেন সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এদের বিরুদ্ধে সঠিক কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে দু-একটি এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পরবর্তীতে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এরা বেড়িয়ে এসে আবারো এধরনের অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছেন বলে জানা যায়। এসমস্ত বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিরা প্রতিষ্ঠানের কিছু লোককে ম্যানেজ করে বিজ্ঞাপন নিয়ে নিচ্ছেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্তা বাবুরা সরকারি নিবন্ধন ছাড়াই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। এভাবেই সরকারি সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে দিনের পর দিন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তা বাবুরা জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশে বর্তমানে অফিসে বা বাসায় বসে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সকল তথ্য জানা যায়।

 

সেগুলি পর্যবেক্ষন না করেই কিসের আশায় অবৈধ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি সম্পদ নষ্ট করছেন তা জানার আগ্রহ সচেতন মহলসহ প্রকৃত সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশকদের। মিডিয়াকে কলঙ্কিত করছেন নারী পুরুষ মিলে ২০ থেকে ২৫ জন বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি। অবৈধ পত্রিকার মালিক সাজিয়ে অন্তরালে চলছে বিজ্ঞাপন ও চাঁদাবাজির বাণিজ্য।

 

সম্প্রতি ডিসি অফিসে কিছু পত্রিকার নামে অনুসন্ধান করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, যে পত্রিকার নাম দিয়েছেন এগুলো ডিসি অফিস থেকে কোন ডিক্লারেশন নেয় নি। ডিসি অফিসের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ নামে আমাদের কোন ডিক্লেয়ারেশন দেওয়া হয় নি।

যারা এভাবে নিজেদের নামে পত্রিকা প্রকাশ করছেন তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রকাশ করছেন। এ সকল বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিদের বিষয়ে আগেও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। কোনো লিখিত অভিযোগ আসলে আমরা এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে একটা অভিযোগ এসেছে আমরা এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন জানান, আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। অনেকগুলো বিজ্ঞাপনের আবেদন ফরম উদ্ধার করেছি। আমরা অনেকগুলো ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার সংগ্রহ করেছি। তবে এটা নিশ্চিত থাকুন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর উদ্যোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপকের স্বাক্ষর জাল করে একটি চক্র বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ওরা সাংবাদিক…… অবৈধ পত্রিকার ভিজিটিং কার্ড ও আইডি কার্ড বানিয়ে ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করেন একটি সিন্ডিকেট। তারা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে বিজ্ঞাপন ফরম বের করে। তারপর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিজ্ঞাপন নিয়ে আসেন ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি তথাকথিত সাংবাদিক।

 

সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদের এক সদস্য বলেন, এই নারী-পুরুষরা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ পত্রিকা বের করেন। আমরা প্রকৃত মালিকগণ এবং সম্পাদক-প্রকাশকেরা বিপদে আছি। এত কষ্ট করে ডিসি অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে কি করলাম? বিভিন্ন ব্যাংক-বীমাসহ সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ দিবসে ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন এতে পত্রিকার বৈধতা যাচাই-বাছাই করে বিজ্ঞাপন প্রদান করা একান্ত জরুরী। আমাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে ভুঁইফোড় পত্রিকার প্রায় ৩১টি বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিদের নাম যা ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন...