এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণযজ্ঞে সড়কের বিবর্ণ দশা

লেখক: Dhaka Bangladesh
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বাইপাইল থেকে নরসিংহপুর প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূর। এটুকু সড়ক পাড়ি দিয়ে নারী ও শিশু হাসপাতালে আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে সালমা আক্তারের। সঙ্গে তার এক বছর ও তিন বছরের দুই শিশু। সড়কে খানাখন্দ থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনি ও ভয় নিয়ে তিনি দুই শিশুসহ রিকশায় ওঠেন।

শুধু সালমা আক্তার নয়, ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কটিতে চলাচলরত লাখো মানুষের মধ্যে এই ভয়-আতঙ্ক। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে সড়কটি জুড়ে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সড়ক জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। সড়কের দুটি লেনের কোথাও ভালো পথ নেই।

সড়কটিতে এই মরণ দুর্ভোগ নিয়েই চলতে হচ্ছে। পরিবহন চালকদের ভাষ্য, যানজট, খানাখন্দে যানবাহনেরও ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের নভেম্বরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরইমধ্যে ৩৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি বর্ধিত হবে আশুলিয়া ডিইপিজেড পর্যন্ত। এরইমধ্যে নরসিংহপুর পর্যন্ত পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলছে পাইপলাইন নির্মাণকাজ। স্ল্যাবও বসানো শুরুর চেষ্টা চলছে। তবে এসব নির্মাণযজ্ঞে সড়কের বেহাল দশা। নির্মাণকাজ যতো ধীরে সম্পন্ন হবে মানুষের দুর্ভোগ ততো দীর্ঘ হবে।

সরেজমিনে সড়কের ইউনিক, জামগড়া, শিমুলতলা, নরসিংহপুর, টঙ্গাবাড়ি, আশুলিয়া, বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ঘুরে নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে দেখা যায়। সড়কের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের বিশালাকার পিলার। কোথাও কোথাও পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোথাও চলছে ঢালাইয়ের কাজ, কোথাও কোথাও চলছে রড বাঁধাই। সড়কের ওপরে চলমান কাজের কারণে সড়কের বেশিরভাগ জায়গাই একরকম নির্মাণযজ্ঞের দখলে। সড়কের ওপরই রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।

পুরো সড়কটিতেই দেখা যায়, খানাখন্দ, কাঁদা মাটি, বালুর স্তর, কোথাও কোথাও ইটের সলিং।

হাঁটার অবস্থাও নেই

সড়কে খানাখন্দ, কাঁদা, গর্ত, সড়ক জুড়ে পানি, এতো সব কারণে সড়কে হাঁটা-চলারও পরিবেশ নেই। শিমুলতলা এলাকায় সড়কের একটি স্থানে অন্তত ৫০ গজ জায়গায় অন্তত এক ফুট পরিমাণ পানি জমে রয়েছে। রিকশা দিয়ে অনেকেই এই সড়কটুকু পার হচ্ছেন।

রাস্তার এপার থেকে ওপারে যেতে রিকশায় চেপে বসেন রায়হানুল ইসলাম। এ এলাকারই বাসিন্দা তিনি। বলেন, সারা বছর ধরে এখানে পানি জমে থাকে। বৃষ্টির পানি শুকায় না। জায়গাটি আগে ভালো ছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুর পর খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এ হাল। বাধ্য হয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হচ্ছে। একই কথা বলছিলেন নরসিংহপুর এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তার কাজের জন্য মাটি খুঁড়ে রাখা হয় সড়কের পাড় দিয়ে। পানি চুইয়ে কাঁদা পানি রাস্তায় আসে। যানবাহন চলাচল করে সেই অবস্থা আরও খারাপ হয়। রাস্তায় হাঁটা-চলাও করা যায় না।

ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমাদের মূল কাজ ৩৫% শেষ হয়েছে। আমরা এখন ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে ২১ কিলোমিটারের ভিত্তিপ্রস্তর কাজ শেষ করেছি। পর্যায়ক্রমে ঢালাই কাজ শুরু হয়েছে। পুরো সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। কোথাও পাইপলাইনের নির্মাণ শেষ হয়েছে, কোথাও গার্ডার বসেছে, কোথাও গার্ডারের ওপর স্ল্যাবও বসেছে।

তিনি বলেন, রাস্তাটি খুবই পুরনো। কাজকর্ম চললে কিছুটা খারাপ অবস্থা হয়।

আমাদের সংস্কার কাজ সবসময়ই চলে। পানির কিছু সমস্যা আছে, আবার বর্ষার পানির সময় কারখানাগুলোও নিজেদের পানি সড়কে ছেড়ে দেয়। এখন তো বর্ষা প্রায় শেষের দিকে। আমরা এখন মূল রাস্তার কাজ শুরু করবো। ড্রেনের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী বর্ষায় কারোরই এ সমস্যা আর থাকবে না। আগামী বর্ষার আগে ড্রেন হয়ে যাবে। রাস্তা সুন্দর হয়ে যাবে। এসব সমস্যা থাকবে না। যানজট বিভিন্ন কারণে হয়। এটা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারি না। এখানে কারখানার লোকেরা আন্দোলন করছে। আমাদের প্রায় ১০০ জন পুলিশের পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। গার্মেন্টস এলাকায় ছুটি দিলে যানজট হয়। আমাদের রাস্তা হয়ে গেলে যানজট কমে যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন...

  • এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে