
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দখলে থাকা ১৯টি কক্ষ ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১১টার দিকে হলের তৃতীয় তলায় ‘পলেটিক্যাল ব্লক’-এর আওতাধীন কক্ষগুলোতেও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় অবশ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে ছিলেন না; ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন আগেই।
এর আগে, সোমবার মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ছাত্রলীগের হামলার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু হলে এসে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের কক্ষ এবং ভাসানী হলে থাকা সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের কক্ষ ভাংচুর করেন। এ সময় আশপাশের বেশ কয়েকটি কক্ষও ভাংচুর করা হয়; তছনছ করা হয় কক্ষে থাকা জিনসপত্র। ওই ভাংচুরের পর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় কোন নেতাকর্মী আর হল বা ক্যাম্পাসে ফিরে আসেননি। গতকাল মঙ্গলবার) সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে সারা রাত শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক এবং হলগুলোর সামনে পাহারায় বসেছিলেন। বিরতি দিয়ে দিয়ে তারা হলগুলোতে মহড়া দিয়েছেন, মিছিল করেছেন।
এ অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীরা খবর পান তৃতীয় তলার ‘পলেটিক্যাল ব্লক’-এর দুটি কক্ষে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিন জন নেতাকর্মী আছেন। রাত ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা এসে তাদের হল থেকে বের করে দেন। এরপর তৃতীয় দফায় ওইসব কক্ষে ভাংচুর করা হয়।
এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে; পাবলিক হেলথ বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজিলুল ইসলাম ও ইনফরমেশন টেকনোলজির শাওন। অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হল থেকে বের হওয়ার সময় তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা হামলা করে কি না — সে শঙ্কা ভর করেছিল তাদের মধ্যে। একপর্যায়ে আন্দোলনে থাকা হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপদে বের করে দেন। এরপরই তারা একটি বাইকে বটতলা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন। সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু হলের তিনতলায় ১৯টি কক্ষের মধ্যে সাতটি কক্ষের দরজার তালা ভাঙা। ভেতরে আসবাবসহ সবকিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলা হয়েছে। কক্ষগুলোর জানালার কাঁচও ভাঙা।
যেসব কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই থাকতেন ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রলীগের নেতারা। শেষে যে তিনজনকে বের করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পোষ্যকোটায় ভর্তি হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারেন না। তবে তিনি একাই বঙ্গবন্ধু হলের দুটি কক্ষ অবৈধভাবে দখলে নিয়ে থাকতেন। এর আগে সোমবার দিনগত রাতে ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে আশ্রয় নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত আড়াইটার দিকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা এসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান ফটক দিয়ে পালিয়ে যান। পরে রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের কক্ষ ভাঙচুর করেন। আকতারুজ্জামান মাওলানা ভাসানী হলে থাকতেন।
