তানভীর ইমামের ২৮ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে দুদক

লেখক: Dhaka Bangladesh
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বৈষম‍্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মূখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর একে একে বেরিয়ে আসে ঠলের বিড়াল ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের আমলা এমপি মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তাদের পাহাড় পরিমান দূর্নীতির খবর। সরকারের আমলা মন্ত্রীদের কার কত সম্পদ- এ নিয়ে যেমন কৌতূহল সব মহলে তেমনি সরকারী আমলাদের সম্পদ নিয়েও জানার আগ্রহ কম নয়।

তার মধ্য বাদ যায় আমলা-মন্ত্রী ও শেখ পরিবারের সদস্যের সাইনবোর্ড ব‍্যবহার করে হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে কামিয়েছেন অনেক দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা ও আমলারা। তাদের মধ্য অন‍্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে ও সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের প্রায় ২৮ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকসূত্রে জানা যায়, সম্পদের মধ্যে তানভীরের মালিকানায় আইমেক্স ও পাথমার্ক নামে দুইটি কোম্পানি রয়েছে। ঢাকার গুলশান ও উত্তরায় তিনটি ফ্ল্যাট এবং ব্যাংকে সাড়ে চার কোটি টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, স্ত্রী ও মেয়ের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তানভীরের আয়কর বিবরণী, হলফনামা ও ব্যাংক হিসাবসহ সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে এসব সম্পদের তথ্য মিলেছে। যদিও দলিল মূল্য হিসাবে ওই সম্পদের আর্থিক মূল্য কম ধরা হয়েছে।

বাস্তব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তানভীর ইমাম, তার স্ত্রী মাহিন ইমাম ও তাদের মেয়ে মানিজে ইসমাত ইমামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। চলতি সপ্তাহে দুদকের অনুসন্ধান টিম প্রধান উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন সই করা তলবি চিঠিতে তানভীর ও তার পরিবারকে আগামী ৫ নভেম্বর সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত ২৯ আগস্ট অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

এরপরই তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’কে বলেন, অর্থপাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে তানভীর পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কমিশন না থাকলেও দুদকের যে কোনো অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ স্বাভাবিক নিয়মে চলমান থাকবে। এর আগে দুদকের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ অক্টোবর তানভীর ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

তানভীরের নামে যত সম্পদ

আয়কর বিবরণী ও হলফনামাসহ বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে— পাথমার্ক অ্যাসোসিয়েট ও আইমেক্স লিমিটেড নামে দুইটি কোম্পানির ১৬ হাজার ৫২৫টি শেয়ার। প্রতিটি শেয়ারের আর্থিক মূল্য ১০০ টাকা। রাজধানীর গুলশান মডেল টাউনের ৫০ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট, গুলশানের ৫৭ নম্বর রোডে ডুপ্লেক্স ভবন, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে ১৫০৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ৫ লাখ টাকার শেয়ার, ল্যান্ডক্রুজার ও টয়োটা আভানজা মডেলের দুটি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া, ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ৪ কোটি টাকা রয়েছে। বর্তমান ঠিকানা গুলশান মডেল টাউনের ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ রয়েছে। আয়ের উৎস হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন— বাড়িভাড়া থেকে বছরে আয় আড়াই লাখ, ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় প্রায় ৫ কোটি টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা।

সবমিলিয়ে দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ২৭ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দালিলিকভাবে ওই সম্পদের আর্থিকমূল্য এটা হলেও বাস্তবে এসব সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন দুদক কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। অভিযোগ রয়েছে, সংসদ সদস্য হওয়ার আগ থেকেই বাবার প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হন তিনি।যা দিয়েই তিনি দেশে বিদেশে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন...