নদী দখল-দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

লেখক: Dhaka Bangladesh
প্রকাশ: ১ বছর আগে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ নৌপরিবহন এবং অতি মুনাফালোভী মালিকদের অতিরিক্ত যাত্রী বহনই নৌ-দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সেই সঙ্গে বালু-খেকো, নদী-খেকোসহ যারা শিল্প-কারখানার বর্জ্য ক্যামিকেল পদার্থ নদীতে ঢেলে দেয় তারা দেশ ও সমাজের শত্রু, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নোঙর ট্রাস্ট আয়োজিত ‘জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা নদী সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী দখল করেছে সরকারি সংস্থা। বুড়িগঙ্গার পারও দখল হয়েছে। বিত্তের ক্ষমতা অনেক সময় পদের ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বিত্তবান আবার নিজেদের সুবিধার জন্য মিডিয়া লালন করে। বুড়িগঙ্গা নদীর দুপাশে পাড় বাঁধাই করা হয়েছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তবুও বুড়িগঙ্গা দখল হচ্ছে। ক্ষমতাবানরাই নদী দখল করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তবে এখন চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করায় দখল কমে গেছে। যৌথ নদী কমিশন আরও কার্যকর করা দরকার। পানি সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, যেসব শিল্প মালিক, বালু খেকো, নদী খেকোসহ যারা নদীতে কেমিক্যাল দেয়, দূষিত পানি ফেলে তারা দেশের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, নদীর ভূমিকা হলো মানব দেহের শিরা-উপশিরার মতো। দেহের মধ্যে শিরা-উপশিরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করে, সেভাবে নদীগুলোও দেশের জন্য কাজ করে। মানুষের দেশের শিরা-উপশিরা যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে মানুষ মরে যায়। আমাদের দেশের জন্য নদীগুলোও তেমন। নদী শুকিয়ে গেলে, নদী দখল হয়ে গেলে দেশের পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলো থেকে তেমন পানি আসছে না। ডিফরেস্টেশন একটি অন্যতম কারণ। এছাড়া শহরের নদী কুক্ষিগত করে গিলে ফেলছে ক্ষমতাধররা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র আর মেঘনা তিনটা রিভার বেসিনের উৎপত্তি দেশের বাইরে। ক্যাচমেন্ট এরিয়াও বাইরে। ফলে বাইরে নদীতে যাই করা হয়, প্রভাব আমাদের নদীতে এসে পড়ে। সবার জন্য সুষম পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা দরকার। চলাচলের ক্ষেত্রে নদীর ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, রাস্তা, বিল্ডিং বানানোই উন্নয়ন নয়। নদী রক্ষা, পরিবেশ রক্ষায় কিছু করবার জন্য টাকা খরচ করতে দেয় না। নৌপথ ব্যবহারে সচেতন থাকলে এই পরিস্থিতি হতো না।

মেয়াদহীন নৌপরিবহন এবং অতি মুনাফালোভী মালিকদের অতিরিক্ত যাত্রী বহনই নৌ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নদী খেকোদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। যারা নদীতে রঙিন পানি ফেলে তারা সমাজের শত্রু। তাদেরও প্রতিরোধ করা দরকার। মন্ত্রী বলেন, নদী রক্ষা এবং সুষম পানি বণ্টনে যেভাবে সমন্বয় দরকার ছিল, চেষ্টা হওয়া দরকার ছিল, আঞ্চলিক উদ্যোগ দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। সবার জন্য সুষমভাবে পানি বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা দাঁড় করানো গেলে সবার উপকার হবে। একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম খুব প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমার গ্রাম আমার কাছে ছবির মতো। সবার গ্রামই সবার কাছে ছবির মতো। আমার গ্রামের নাম সুখ বিলাস। আমি বাড়ি গেলে, অন্তত একবার নদী দেখতে যাই। কিন্তু আগের মতো বালুচর আর নেই। কারণ নদী নেই। রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। এটি সারা দেশেরই চিত্র।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মিশন পুরো বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়।’

সংবাদটি শেয়ার করুন...

  • কর্ণফুলী নদী দখল
  • ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন
  • নদী দখল-দূষণ
  • মেয়াদোত্তীর্ণ নৌপরিবহন