পটিয়া থানার ওসি নেয়ামত উল্যাহ’র বিচারের দাবি সাংবাদিক সংগঠনের

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৭ years ago

তদন্ত চিত্রঃ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ওসি নেয়ামত উল্যাহর বিরুদ্ধে। রবিবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট অরগানাইজেশনস এর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করে এই অভিযোগ করেন সংগঠনটি দফতর সম্পাদক মো. শামসুল আলম।

এছাড়াও ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট অরগানাইজেশনস্ এর নেতৃত্বে উক্ত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অনলাইন প্রেসক্লাব,  বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ( বি. এম. এস.এফ) সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সাংবাদিক নেতৃত্ববৃন্দ।

মানববন্ধনে তিনি বলেন, সিটিজি ক্রাইম টিভির দুজন পেশাদার সাংবাদিক ও তাদের গাড়িচালককে মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করতে হচ্ছে। ওই বানোয়াট মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও দুজন সাংবাদিককে। গত নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ধোরলা কালাইয়ার হাট শিকদার বাড়ির জুবায়েদ মোস্তফা চুমকি নামের এক গৃহবধূ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। শাশুড়িকে পরকিয়া প্রেমিকের সঙ্গে অনৈতিক অবস্থায় দেখে ফেলায় ওই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। থানার ওসি নেয়ামত উল্যাহ হত্যাকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। নিহতের পিতা বাদী হয়ে থানায় মামলা করতে গেলে, মামলা না নিয়ে বাদীকে অপমান করে থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই সংবাদের ভিত্তিতে নভেম্বরের ২৭ তারিখ চট্টগ্রামের সিটিজি ক্রাইম টিভি থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিটিজি ক্রাইম টিভির উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সাগর ও নিউজ এডিটর রতন বড়ুয়া। থানায় যাওয়ার পর ওসি নেয়ামত উল্যাহ তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করেন। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা একটি সচল ভিডিও ক্যামেরা, একটি সচল স্টিল ক্যামেরা, ব্যবহৃত চারটি সেলফোন, নগদ ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও মো. সাইদুল ইসলাম সাগর এর গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন কেড়ে নেওয়া হয়।

আরও অভিযোগ, এরপর সম্পূর্ণ কাল্পনিক অভিযোগ এনে তাদের থানা হাজতে আটকে রাখে পুলিশ এবং সেই সঙ্গে তাদের গাড়ি চালককে আটক করা হয়। থানা হাজতে আটক থাকা অবস্থায় ওসি নিজে ও তার নির্দেশে এসআই মো. কামাল হোসেন, এসআই এ টি এম আমিনুল ইসলাম, এসআই বাসু দেবনাথ, এসআই কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম, এএসআই আরিফুল ইসলাম ও বহিরাগত কথিত দালাল শেখ ফুরকান তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ৩৮৫/৪১৯/১০৯ ধারায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় সিটিজি ক্রাইম টিভি সম্পাদক আলী আজগর মানিক ও বিভাগীয় প্রধান মো. রাশেদুল ইসলামকেও আসামি করা হয়।

এই ঘটনায় সিটিজি ক্রাইম টিভি উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সাগর, নিউজ এডিটর রতন বডুয়া ও তাদের গাড়িচালক বর্তমানে কারা নির্যাতন ভোগ করছে। একই সঙ্গে আসামি আলী আজগর মানিক ও রাশেদুল ইসলাম পলাতক অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মানববন্ধন থেকে পটিয়া থানার ওসি নেয়ামত উল্যাহর বিচার ও কারাগারে থাকা সাংবাদিকের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, পুটয়া থানার ওসি নেয়ামত উল্ল্যাহ দীর্ঘ সময় ধরে বহাল থাকার কারনে উক্ত এলাকার মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ছিনতাই চক্র সহ বিভিন্ন অপরাধীর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই এ থানা থেকে তিন তিন বার বদলী হলেও আবার এই থানায় চলে আসেন। তার অপকর্ম নিয়ে কোন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করলেই তার উপর নেমে আসে ওসি নেয়ামত উল্ল্যাহ’র ক্ষমতা অপব্যবহারের ফিরিস্তি হিসেবে মামলার হিড়িক।

এর আগেও আদালত অবমানার অভিযোগ উঠে ঃ

নয় মাস আগে মারধরের অভিযোগে চট্টগ্রামের পটিয়ায় এক ব্যক্তি প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত তদন্তের জন্য পটিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু বারবার আদালত থেকে তাগাদা দেওয়া হলেও ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এভাবে একে একে ধার্য দিনের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১২-তে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিনও প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নেয়ামত উল্লাহর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননা এবং বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তিন কার্য দিবসের মধ্যে তার জবাব দিতে বলেছেন আদালত। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সার এই আদেশ দেন।

বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, থানা থেকে মামলাটির প্রতিবেদন না আসায় বিচারপ্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। এতে বিচারপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পটিয়া থানার ওসি ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের আদেশ অবজ্ঞা করে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থেকেছেন।

মামলার বাদী মুসলিম উদ্দিন বলেন, ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর আদালতে তিনি একটি মামলা করেন, যাতে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু থানা-পুলিশ এখনো সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা আদালত পরিদর্শক বিজন কুমার বড়ুয়া বলেন, একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় পটিয়া থানার ওসির কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে এ সকল বিষয়ে জানতে ওসি নেয়ামত উল্ল্যাহ’র সরকারী ফোনে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় পেলেই ওসি ফোন কেটে দেন। আবার পুনরায় চেষ্টা করলেও ওসি ফোন রিসিভ করেন নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন...