পরীমনি.. মদ খান, পুরুষসঙ্গ করেন, তাই নোংরা চরিত্র?

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৪ years ago

বাউরে কেউ দরজায় ধাক্কা মারছে। রাতপোশাকে উঠে এসেছেন অভিনেত্রী। ভয় পেয়ে ফেসবুক লাইভ শুরু করেছেন। ভেসে আসছে তীক্ষ্ম মন্তব্য। সাহায্য নয়, টিটকিরি।…….রূপসা রায়

একটা মেয়ে। রাতপোশাকে উঠে এসেছেন। দরজায় ধাক্কা মারছে পুলিশ (?)। জানেন না তিনি, বাইরের লোকগুলো সত্যিই পুলিশ কি না। ভয় পেয়েছেন। শুরু করেছেন ফেসবুক লাইভ। বলছেন, ‘বনানী থানার পুলিশ রেসপন্স করছে না। কেউ আসবেন? একটু সাহায্য করবেন’? লাইভ ভিডিয়ো ফেসবুকে।

স্ক্রল করতে করতে চোখে পড়ে গেল ভিডিয়োটা। ভিডিয়ো যতটা না, তার চেয়ে বেশি, নীচের কমেন্টগুলো।

কেউ লিখেছেন, ভয় পেয়ো না, দরজা খুলে দাও।

কেউ লিখছেন, আসছি আমি

কেউ লিখছেন, বুকে কাপড় দাও।

মেয়েটির নাম পরিমনি। বাংলাদেশের অভিনেত্রী। এই মুহূর্তে বিতর্কিত শুধু নয়, প্রভাবশালী কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করার পরে শুরু হয়েছে তাঁর চরিত্রহনন। অত রাতে তিনি কী করছিলেন প্রমোদ ভবনে? তাঁর বাড়ি থেকে নাকি উদ্ধার হয়েছে বহু মদের বোতল। তাঁর গাড়ি আছে, কে দিল? কার থেকে কত টাকা নিয়েছেন তিনি? জড়িত কি মাদকচক্রের সঙ্গে?

মনে পড়ে যেতে পারে, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পরে তাঁর প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর চরিত্রহননের চেষ্টা। পরিমনিও তাঁর ব্যতিক্রম নন। ইতিমধ্যেই ভাইরাল তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিয়ো।

চরিত্রহনন চলছে। চলছে মিডিয়া ট্রায়াল। বহু মিডিয়ার হেডলাইনেই পরিমনির বিরুদ্ধে কটাক্ষ বিশেষণ ‘রাতের রানি’!

খুব কম মানুষই প্রশ্ন তুলেছেন, পরিমনির পুরুষসঙ্গ করা কি অপরাধ? মদ খাওয়া কি অপরাধ? টাকা রোজগার কি অপরাধ?

না। কোনওটাই অপরাধ নয়। কিন্তু দেশবিচারে হয়তো ‘অপরাধের’ মাপকাঠি বদলে যায়।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এ কোন সমাজ যেখানে ক্ষমতাবানদের দিকে প্রশ্ন ছুড়লে, তাদের ‘ভালোমানুষি’-কে নগ্ন করলে, অভিযোগ ছুটে আসে তাদের শিকারের দিকেই!

এ তো শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তো প্রায় একই অবস্থা।

ধর্ষণ হয়েছে? জামাকাপড় ঠিক ছিল তো? রাতে বাইরে গেলে ধর্ষণ তো হবেই!— চেনা লব্জ। যেখানে ধর্ষিতার, নিগৃহীতার চরিত্রহনন করতে লোকের অভাব হয় না, কিন্তু একটা মেয়ে রাস্তায় বেরোলে, একটা মেয়ে ছোট পোশাক পরলে কেন তাঁকে নিগৃহীত হতে হবে— এই ন্যায্য প্রশ্নটাই তোলেন না কেউ!

গভীর রাতে সাহায্য চেয়ে ফেসবুক লাইভ করছেন একটি মেয়ে— ধেয়ে আসছে যে মন্তব্য, তাতে ভয় করে! মন্তব্যের পরতে পরতে ধর্ষকামী চেতনা!

তা হলে, আমরা এই উপমহাদেশের মেয়েরা কি সত্যিই চলমান যোনি ছাড়া কিছু নই?

আজ আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে মেয়েদের কী হবে, তাই নিয়ে উদ্বেগে রাজা-উজির মারছেন যাঁরা, তাঁরাই কি রাতের বেলা এক মেয়ের ফেসবুক লাইভ দেখে বলছেন না, ‘আমি আসছি, রেডি থাকো?’ যে মিডিয়া আফগান মেয়েদের ‘মানবাধিকার’ নিয়ে সরব, সেই মিডিয়ারই তো বাধছে না পরিমনিকে ‘রাতের রানি’ বলতে!

অতঃপর?

উপমহাদেশের মেয়েদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, জানি না আমরা কেউই। কিন্তু ন্যায্যতা পেয়ে যাচ্ছে অন্যায় প্রশ্ন। ন্যায্যতা পেয়ে যাচ্ছে অন্যায়।

ইতিমধ্যেই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের কিছু নারীবাদী শুরু করেছেন #রাতের রানি। পরিমনির সঙ্গে সংহতিতে বলছেন তাঁরা, ‘আমরা সবাই রাতের রানি’। কিন্তু ক’জন। ধনী-দরিদ্রে তীব্র ভাবে বিভক্ত বাংলাদেশের সমাজে হ্যাশট্যাগ আন্দোলনের কার্যকারিতা কতটুকু?

অনেকেই চুপ! মেয়েটা গিয়েছিল তো প্রমোদতরীতে! আহা রে…

ভয় করছে আমাদের। ভীষণ ভয়। অন্যায় দেখে চুপ থাকা অন্যায়কেই মান্যতা দেয়। আর কত কিছু সইতে হবে, জানি না আমরা।

সূত্রঃ এইসময়.ইন্ডিয়ান টাইমস…

সংবাদটি শেয়ার করুন...