
মেহেদী হাসান রিয়াদ: কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় অবাধে গড়ে উঠছে মান নিয়ন্ত্রণহীন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত এসব বেকারির খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে নিম্মমানের ভেজাল খাদ্য সামগ্রী। লাইসেন্সবিহীন এই বেকারি খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। জানা যায়,ছাবীলুল হক ফুড এন্ড বেভারেজ ভোগ্য পণ্য সমাবায় সমিতি লিঃ বেকারিতে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে কেক, বিস্কুট, পাউরুটিসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য। এসব খাদ্যদ্রব্য প্যাকেটজাত করে নিজেদের ইচ্ছামত মেয়াদ উর্ত্তীর্ণের তারিখ দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। সরকারি আইন অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিএসটিআই থেকে সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক, অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে প্রায় শতাধিক বেকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। আছে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স। বিএসটিআই কি তা অধিকাংশরাই জানেন না। অভিযোগ রয়েছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ইউনিয়ন ও উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। প্রতি মাসেই তারা পেয়ে থাকেন মাসোহারা। বেকারিতে উৎপন্ন খাদ্য পাড়া-মহলা, স্কুল-কলেজের সামনে, বাজারের বিভিন্ন চায়ের দোকানে বিক্রি হয়। এসব খাদ্যে প্যাকেট উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের অস্তিত্ব নেই। অনেক জায়গায় পচা ও বাসি খাদ্য বিক্রি করা হয়। ফলে কোমলমতি শিশুরা পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের দ্বারস্থ না হওয়ায় এসব বেকারির উৎপন্ন খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। টেকনিশিয়ান না থাকায় নিজেদের কলাকৌশলে আটা, ময়দা, ডালডা, সোডা, বিভিন্ন ধরনের রঙ মানব ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আর তা তৈরিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হয় ছোট ছোট শিশুদের।
সরেজমিন মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে খাদঘরের হুজুরের বাড়িতে ছাবীলুল হক ফুড এন্ড বেভারেজ ভোগ্য পণ্য সমাবায় সমিতি লিঃ নামে একটি বেকারিতে গিয়ে দেখা যায় এখানে পা দিয়ে ময়দার গোলা তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানে কাজে নিযুক্ত রয়েছে প্রায় ৫-৬ জন শিশু যাদের বয়স ১০-১৫ বছরের নিচে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব বেকারিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ গ্যাস। উল্লেখ্য, ছাবীলুল হক ফুড এন্ড বেভারেজ ভোগ্য পণ্য সমাবায় সমিতি লিঃ বেকারির মালিক এহসান উল্লাহ নিজেকে মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বেড়ান। তাছাড়া ছোট ছোট শিশুদের দিয়ে জলন্ত চুল্লিতে বেকারি পণ্য উঠা নামা করা সহ নানান অনিয়ম করে চলেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাবীলুল হক ফুড এন্ড বেভারেজ ভোগ্য পণ্য সমাবায় সমিতি লিঃ বেকারির মালিক বলেন, উপজেলার অন্যসব বেকারি যেভাবে চলছে তারটাও সেভাবে চালানো হচ্ছে। ১০ নং বনকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ হাকিম খান বলেন, এবিষয়ে তিনি অবগত নন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও লাইসেন্সবিহীন বেকারি পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোক্তভোগী জানান, এলাকার চেয়ারম্যান নিজেই এই বেকারির মালিক পক্ষের সাথে জড়িত। যার কারণে তিনি বেকারির বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ করছেন না। এদিকে ছাবীলুল হক ফুড এন্ড বেভারেজ ভোগ্য পণ্য সমাবায় সমিতি লিঃ বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সচিত্র প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে গেলে এই প্রতিনিধির সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন এহসান নামে বেকারির মালিক। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরাও ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিক পরিচয় পত্র বানিয়ে চাঁদাবাজি করতে পারি এবং নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন। এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ এলাকার চেয়ারম্যান ফোনে প্রতিবেদককে বেকারি থেকে চলে যেতে বলেন।
