মরণফাঁদ মিরপুর ডেলটা হেলথ কেয়ার!

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৭ years ago

জাহিদ হাসান খান রনি: চিকিৎসার নামে মরণফাঁদ তৈরি করেছে রাজধানীর মিরপুর ১১ নং বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ডেল্টা হেলথ কেয়ার। চিকিৎসার নামে রোগী হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহসহ নানা অভিযোগ আছে এ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির এমন কর্মকান্ডে এলাকাবাসীরও রয়েছে বড় ধরনের ক্ষোভ। এর বাইরে যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এমন ভুক্তভোগীরা অভিযোগও করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বরাবর। তবে তারপরও প্রতিষ্ঠানটি এবং এর সঙ্গে যুক্ত কুশীলবরা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে সুকৌশলে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে ডেলটা হেলথ কেয়ার। অতি সাধারণ অসুখ-বিসুখকে ভয়ঙ্কর ধরনের অসুখে পরিণত করতে জুড়ি নেই প্রতিষ্ঠানটির। আর এমন কর্মকান্ডের মাধ্যমে মোটা অর্থ হাতিয়ে নেয়াই এই প্রতিষ্ঠানের ডাক্তারদের প্রধান কাজ। তারা অর্থের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। জানা গেছে, এ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগীরা। লিখিত এক অভিযোগে জানানো হয়, মিরপুর ১১ নং বাসস্ট্যান্ডে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উপর অবস্থিত ডেল্টা হেলথ কেয়ারের অধ্যাপক ডা. মুন্নজান বেগম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এনআইসিইউতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবজাতক সুস্থ শিশুকে অসুস্থ বলে ভর্তি করে অহেতুক অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। এ সমস্ত শিশুদের মায়েদের সিজার করেন মুন্নজান বেগম। তারপর ডক্টরস এটেনডেন্ট হিসাবে যোগদানকারী পরবর্তী ওটি নার্স হিসাবে পরিচয়দানকারী কল্পনা মন্ডল শিশুকে নানাভাবে টিপাটিপি করে বাইরে রোগীর অপেক্ষারত আত্মীয়-স্বজনকে বলেন, শিশুর অবস্থা ভালো নয়, এখনই এনআইসিইউতে ভর্তি করা না হলে শিশুটি মারা যাবে। তারপর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত এই হাসপাতালের প্রাকটিসকারী ডা. মো. আইনুল ইসলাম খানের অধীনে ভর্তি করে টেলিফোনে নানা পরীক্ষার নির্দেশনা নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তার কোনো বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়াও একটি শিশুর মৃত্যু হলে একদিন পরে আত্মীয়-স্বজনদের জানায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার জন্য। তাছাড়াও শিশু দেখতে ৫০০ টাকা ফি নিলেও ভর্তি শিশুকে দেখতে এসে প্রতিবার ২,০০০ টাকা করে ফি নিয়ে থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন এনআইসিউ-তে একটি শিশু রাখলে প্রতিদিন খরচ পড়ে সর্বনিন্ম ৮,০০০ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী অধ্যাপক (অর্থোপেডিক সার্জন) ডা. মো. মোফাখখারুল ইসলাম (রানা) তার কর্মস্থল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনতে ডেল্টা হেলথ কেয়ার-এ কর্মরত ডিজিএম (মার্কেটিং) ডা. হাসনাত আহসান ও সাইফুলকে দালাল হিসাবে ব্যবহার করে। সম্প্রতি অধ্যাপক ডা. মুন্নজান বেগম ও ডা. সামসাদ বেগমের হাতে সিজারকৃত দুটি শিশু অর্থলোভী ডা. আইনুলের কারণে মৃত্যুবরণ করে। থানা পর্যন্ত গড়ায়। এ ব্যাপারে ডা. মুন্নজান বেগম রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় অবস্থান করে শেষে টাকার বিনিময়ে ছাড়া পান। জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে এক রোগীর সিজার করেন অধ্যাপক ডা. মুন্নজান বেগম, যার আইডি নং-৪৯৫৬, ক্যাবিন-৬০৪। শিশুটিকে এনআইসিইউ-তে সুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে মৃত্যু হলে তার আত্মীয়-স্বজন অধ্যাপক ডা. মুন্নজান বেগম ও ডা. আইনুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা আত্মগোপন করে এবং পরবর্তীতে পল্লবী থানায় গিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করে পরে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পান। অপর একটি রোগী মিসেস তামান্না আফরোজ (২৪) ১৪/১২/২০১৬ ইং তারিখ সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে সিজার করেন ডা. সামসাদ বেগম, যার আইডি নং-৪৯৮৩, ক্যাবিন-৭১৮, বাড়ি-১৩৯/১৪০, রোড-৩, সেকশন-৭, মিরপুর। শিশুটিকেও একই কৌশলে এনআইসিইউ-তে সুস্থ ভর্তির পরে মৃত্যুবরণ করে। অধ্যাপক ডা. মুন্নজান বেগম ও ডা. মোফাখখারুল ইসলাম (রানা) ও ডা. মো. আইনুল ইসলাম খান, ডিজিএম (মার্কেটিং) ডা. হাসনাত আহসান ও ডেল্টা হেলথ কেয়ারে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে মাদক ব্যবসা পর্যন্ত চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ফেনসিডিলের বোতল পাওয়া যায়। বিশেষ করে যেদিন ডা. আইনুল ইসলাম হাসপাতালে অধিক রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন। এছাড়াও বেশ কিছু দিন পূর্বে হাসপাতালে ১০/১৫ জন উগ্রবাদী কিংবা জঙ্গিদের ডা. রানা ও ডা. আইনুল নিরাপদে রাখার জন্য একাউন্টস এঙ্কিউটিভ মনিরুজ্জামান মনির ও সিনিয়র অফিস সহকারী নাজমুল হোসেনকে দায়িত্ব দেন। সিকিউরিটি ইনচার্জ মাইকেল সরকার সে রাতে আতংকের মধ্যে থাকেন। এধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে শুনা যায়। মাইকেলের ভাষায়, রাত আড়াইটা পর্যন্ত নাজমুল হাসপাতালে অবস্থানের পর বাসায় যান। এছাড়াও ৩০০ টাকার বিনিময়ে ক্যান্টিন থেকে রোগীদের তিন বেলা যে খাবার সরবরাহ করে তা নিন্ম মানের। লিখিত অভিযোগে আরো জানানো হয়, ডা, রানা, ডা, আইনুল ও ডিজিএম (মার্কেটিং) ডা. হাসনাত ডক্টরস এটেন্ডস শামীমার মাধ্যমে নতুন নতুন মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মসজিদের উপরেই তাদের সম্ভম নষ্ট করে। অপরদিকে ওটির মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নার্সিং প্রশিক্ষণ ছাড়াই ওটি নার্স হিসাবে কল্পনা মন্ডলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ডিউটি রোস্টার দেখলে প্রমাণ মিলবে। শুনা যায় অস্ত্রোপ্রচার সফল ও ভালো সিজার হলেই কল্পনা মন্ডল রোগীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ৩/৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বকশিশ হিসাবে আদায় করে থাকেন। এছাড়াও অস্ত্রোপচার চলাকালীন সময় কল্পনা মূল্যবান ঔষধের নাম লিখে রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে দেন, পরে তা বাজারে বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এ টাকার ভাগ ডেল্টার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. মুন্নজান, মনির ও নাজমুল পেয়ে থাকেন। গত ৭ জানুয়ারি ২০১৭ ডক্টরস এটেন্ডেস শামীমাকে হঠাৎ করে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করলেও তার চরিত্র হনন ও মাদক সেবন করতে যারা শিখিয়েছে সেই ডা. আইনুল ইসলাম খান ও ডা. রানা, ডিজিএম (মার্কেটিং), মনির ও নাজমুল সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান। যে সমস্ত স্টাফ চলে যান বা চাকরিচ্যুত করা হয় তাদের বেতনের টাকা মনিরুজ্জামান মনির ও নাজমুল হোসেন তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ডিজিএম ডা. শরীফ মোহাম্মদ আরিফুল হক ও ডিজিএম ডা. হাসনাত আহসানও চলে যাওয়ায় স্টাফদের বেতনের অংশ পান। তারা স্টাফদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেন। নাজমুল, মনির, মাইকেল, বিদ্যুৎ ও আইটির দায়িত্বে কর্মরতরা তাদের নিরাপত্তার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারীদের ব্যবহার করে থাকেন। হাসপাতালের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে অভিযোগপত্রে জানানো হয়, ডায়ালাইসিসে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স নাই। ইউনিট ইনচার্জের কোনো প্রশিক্ষণ নাই। এছাড়া কোনো চিকিৎসকও নাই। ২ জন টেকনেশিয়ান রয়েছে মাত্র, যা খুবই নগণ্য। ওটি ইনচার্জ ডিপ্লোমা নয়। অন্য হাসপাতাল থেকে দেখে কাজ শিখে এসেছেন। মাত্র ২/১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স আছেন। স্টাফ নার্স ছাড়া কল্পনা মন্ডলসহ অধিকাংশরই কোনো সার্টিফিকেট নাই। ওটি টেকনেশিয়ান মিনহাজুল তারও কোনো প্রশিক্ষণ নাই। অদক্ষ ওটি নার্সরা ব্যথার পরিবর্তে ঘুমের ইনজেকশন দেন। এনআইসিইউ থেকে যারা ব্লাড কালেকশন করতে না পেরে ভ্যানে চাপ দিয়ে রক্ত বের করেন। প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে রোগীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীরা গোপনভাবে বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টির তদন্তপূর্বক অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং এসব অর্থলোভী ও দুশ্চরিত্রদের টাকার ক্ষমতায় সাধারণ রোগী ও কর্মচারীরা আর যাতে সর্বনাশ না হয় সে জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উল্লেখ্য, গত বছর ৯ জানুয়ারি ও ২৯ জানুয়ারি এ বিষয়ের সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন জানানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আবেদন গ্রহণ করলেও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন...

  • অর্থলোভী ডা. আইনুল