মাগুরায় ভয়ংকর ডা: আব্দুস সালামের মাদক ও নারী কেলেংকারী ফাঁস

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৫ years ago

# দিন শুরু করেন ইয়াবা দিয়ে রাত শেষ করেন মদে

মাগুরা প্রতিনিধিঃ মাগুরায় এক ভয়ংকর ইয়াবা ডাক্তারের উত্থান ঘটেছে। প্রতিদিন তিনি ২/৩ হাজার টাকার মদ ও ইয়াবা সেবন করেন বলে প্রচার চলছে। তার অপচিকিৎসা ও যৌনথাবা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না রোগীরাও।

আপন ভাগ্নি থেকে শুরু করে কাজের মেয়ে ও নার্সদেরকেও তিনি যৌন নিপীড়ন করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। কথিত আছে তার দিন শুরু হয় ইয়াবা সেবনের মধ্য দিয়ে আর রাত শেষ হয় মদ্যপান করে। সারাদিন সরকারী ডিউটি ফাঁকি দিয়ে শহরের ৫/৬ টি বেসরকারী ক্লিনিকে অবৈধ সিজার অপারেশন করে বেড়ান।

যদিও তিনি সার্জন নন। অপারেশন করারমত তার কোন ডিগ্রীও নেই। তিনি এইসব বেসরকারী ক্লিনিকে অবস্থান করে নিয়মিত মাদক সেবন ও নার্স সেবিকাদের যৌন নির্যাতন করে থাকেন।

কোন নার্স তার যৌন চাহিদা না মিটালেই তাকে চাকুরীচ্যুত করার জন্য ক্লিনিক মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। মাঝে মধ্যে বাইরে থেকে মেয়ে এনেও আনন্দ ফুর্তি করেন। তার এসব বদ অভ্যাসের কারণে প্রথম স্ত্রীর ২ কন্যা কোন দিন তার মুখ দর্শন করেন না। কেবলমাত্র মোবাইলে যোগাযোগ করে লেখাপড়ার খরচ সংগ্রহ করেন।

এই ইয়াবা ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অসংখ্য নারী -পুরুষ অকালে প্রান হারিয়েছেন। কেউ কেউ বিছানায় শয্যাসায়ী হয়ে আছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। তিনি সব সময়ই রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে তদবীর করে সব কিছু ম্যানেজ করে থাকেন। ম্যানেজ মাষ্টারখ্যাত এই ডাক্তারের নাম মো: আব্দুস সালাম। তিনি বর্তমানে মাগুরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন। এই ডাক্তারের অতীত বর্তমান বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পাওয়াগেছে জঘন্য সব কাহিনী।

মাগুরাবাসীর নানা অভিযোগে গত বছরের প্রথমভাগে তাকে মাগুরা থেকে সাতক্ষীরায় বদলী করা হলেও তিনি তদবীর করে অল্প ক’দিন পরেই আবার মাগুরায় ফিরে আসেন। এরপরই পুর্বেরন্যায় শুরু করেন সিজারিয়ান অপারেশন। তার ভুল অপারেশনের শিকার হয়ে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে অসংখ্য রোগী।অপচিকিৎসায় রোগী এখন মৃত্যুর পথে।

গত ৩ মে ২০২০ তারিখে মুক্তা (২৬) স্বামী: মিরাজ, গ্রাম: কুকিলা, মাগুরা সদর, কোন শারীরিক সমস্যা ছাডাই, মাগুরার স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানে ডাক্তার আব্দুস সালাম সকাল সাতটায় অপারেশন করেন, কিন্তু অপারেশনের পরবর্তীতে মুক্তার প্রস্রাব দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে, ৪ ঘন্টা পরে বেলা ১১ টায় আবারো তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে ডাক্তার আব্দুস সালাম অপারেশন করেন।

রোগীর ননদ টুনটূনি জানান ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শফিউর রহমানকে দেখালে তিনি রোগীকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়র পরামর্শ দেন। তিনি আরো জানান, ডাক্তার আব্দুস সালাম রোগীর প্রস্রাবের নাড়ি কেটে ফেলেছেন এবং রোগীর অবস্থা খুব সংকটপূর্ণ, এই অপচিকিৎসার জন্য তিনি ডাক্তার সালাম এর বিচার দাবি করেন।

৪ মে তারিখে ডাঃ আব্দুস সালামকে ফোন দিলে তিনি জানান “রোগীর অবস্থা এখন ভালো” কিন্তু ৮ মে তারিখেকে ফোন দিয়ে রোগীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করলে তিনি রোগীর অপারেশনের কথা অস্বীকার করেন। এদিকে মাগুরার সিভিল সার্জনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান “ঘটনা আমার জানা ছিল না, তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।

খোঁজখবর নিয়ে আরো জানা যায়, ইতিপুর্বে তার ভুল চিকিৎসায় ২ জনের মৃত্যু হয়। তখন তিনি মোটা অংকের টাকা জরিমানা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। তিনি বর্তমানে মাগুরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে কর্মরত থেকে নানা কৌশলে ভূয়া বিল ভাউচারে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারী ক্লিনিকের নার্সকে কুপ্রস্তাব দিলে ওই নার্স ্িক্ষপ্ত হয়ে ডা: আব্দুস সালামকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেয়। এবং তাকে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান করে দেন। যার অডিও ক্লিপ আমাদের সংগ্রহে রয়েছে।

২০১৮ সালের রমজান মাসে ইফতারির সময় তিনি ইয়াবা সেবনকালে ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এ সময় সিভিল সার্জন ও অন্যান্য ডাক্তারদের তদবীরে মুক্তি পান বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও কন্যা সন্তান নিয়ে মাগুরা শহরে বসবাস করেন। কিন্তু চরিত্রহীনতার কারণে এই স্ত্রীর সাথেও তার মনমালিন্য, ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। এক কথায় মাদক গ্রহণ করতে কবতে এখন তিনি নিজেই একটা মানষিক রোগীতে পরিণত হয়েছেন। তার রক্ত পরীক্ষা করলেই মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে।

ডা: আব্দুস সালামের বক্তব্য‍ঃ

এসব অভিযোগের বিষয়ে ৩ জুন বিকাল ৪ টায় তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে ডা: আব্দুস সালাম বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি কোন প্রকার মাদক সেবন বা নারী নির্যাতন করেন না বলে জানান।

বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশনের বিষয়ে বলেন, আমি এই মুহুর্তে একটা অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি অপারেশন করার যোগ্যতাধারী একজন ডাক্তার বলেও দাবী করেন। একবছর আগে তিনি সাতক্ষীরা থেকে মাগুরায় বদলী হয়ে এসেছেন বলে জানান।

তিনি কি সরকারী চাকুরীতে বহাল থাকতে পারেন? এমন একজন মাদকাসক্ত মানষিক রোগী কি ডাক্তারী পেশার মত মহান পেশায় থাকতে পারেন ? তার হাতে কি মানুষের জীবন নিরাপদ? তিনি কি সরকারী চাকুরীতে বহাল থাকার অধিকারী?

এ প্রসংগে কথা বললে একজন সমাজ বিজ্ঞানী ও আইনবিদ বলেন, একজন সরকারী কর্মকর্তা (ডাক্তার) যদি নৈতিক চরিত্র হারিয়ে ফেলেন এবং মাদকাসক্ত হন তবে তিনি নৈতিক চরিত্রের অধ:পতন জনিত অপরাধে দন্ডিত হবেন। সরকারী চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি অনুযায়ী তিনি সরকারী কোন গুরুদায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারাবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিধিগত ব্যবস্থা না নিলে জনস্বার্থে যে কোন নাগরিক উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করে প্রতিকার চাইতে পারেন।

মাগুরাবাসীর দাবীঃ
ভয়ংকর মাদকাসক্ত ডাক্তার আব্দুস সালামের বিষয়ে মাগুরা শহরের বেশ কিছু সচেতন ব্যক্তির সাথে কথা বললে তারা জানান, তিনি মাদকাসক্ত কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার রক্ত পরীক্ষা করা হোক।

তিনি বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন কি না তা তদন্ত করা হোক। তারা এখন ডাক্তার আব্দুস সালামের অপচিকিৎসা ও যৌনথাবা থেকে মুক্তি চান। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তার অপসারণ চান। এ ক্ষেত্রে তারা স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন...