TadantaChitra.Com | logo

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাবুদের দম্ভোক্তিঃ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের সাধ্য কারো নাই..!

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৯, ২০২১, ১৩:১২

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাবুদের দম্ভোক্তিঃ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের সাধ্য কারো নাই..!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঘুষ বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বৈধ করতে কত পন্থাই অবলম্বন করেন দুর্নীতিবাজরা। আইনের চোখ ফাঁকি দিতে তারা হরহামেশাই অভিনব কৌশল নেন। কেউ কেউ পার পেয়ে যান, আবার কেউ ধরাও পড়েন। পুলিশের এমন এক সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যাংকে এককালীন স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) টাকা বৈধ করতে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। টানা ১৮ বছর অনুসন্ধান আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি উন্মোচন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আগামী পর্বে পড়ুনঃ নারী কেলেংকারীতে পিছিয়ে নেই সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা…!

 

কমিশনের জালে ধরা পড়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল মাবুদ। তিনি অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। অবৈধ উপায়ে অর্জিত প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বৈধ করতে আবদুল মাবুদ জাল কাগজপত্র সৃজন করেন। জালিয়াতির এ কাজে তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী নাসিমা খান ও শাশুড়ি সাহানারা খান।

 

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়াভাবে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও হলফনামা সৃষ্টি করে আয়ের উৎসের মিথ্যা তথ্য ও দান দেখিয়ে পাঁচ কোটি তিন লাখ তিন হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াসহ তার অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনা করেন মাবুদ। যা দুদক আইন- ২০১৪ এর ২৭ (১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দণ্ডবিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ… কিন্তু তাঁর বিচার বা তাঁকে গ্রেফতারের সাধ্য নাকি কারো নাই.! এমন দম্ভোক্তি করে চলেছেন তিনি। এমন কথাবার্তা ও অপকর্মের দায়ে তাঁকে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সিইও থেকে অব্যাহতিও দিয়েছেন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তদন্ত চিত্রে তাঁর অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে বিদায় দেন।

 

জানা গেছে, ওই টেলিভিশনে চাকরি নিয়েই নিজের খেয়ালখুশি মত যাকে-তাকে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তাঁর এসব খামখেয়ালিপনায় প্রকৃত সংবাদকর্মীরা নিষ্কৃত হয়ে পড়েছেন। মূলত তিনি ওই টেলিভিশনকে কাজে লাগিয়ে দুদকের দায়েরকৃত মামলা থেকে অব্যাহতি নিতে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন আবদুল মাবুদ। এছাড়াও টেলিভিশনের লোগো ব্যবহার করে ঢাকায় নিজস্ব একটি বাহিনী বানিয়েছেন মাবুদ। এই বাহিনীর সদস্যদের যখন যাকে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই তিনি কাজে লাগাতেন।

মামলার বিষয়ে দুদকের বক্তব্য হল, প্রায় ১৪ বছরের নিখুঁত শ্রম, শাশুড়ি ও স্ত্রীর সহায়তায় জাল কাগজ তৈরির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে অর্জিত পাঁচ কোটি টাকা ঠিকই নিজের করে নেন আবদুল মাবুদ। যা ইতোমধ্যে নিজ আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

 

দুদক সূত্র জানায়, ঘটনার সূত্রপাত ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আবদুল মাবুদ সাত থেকে আটটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন ধাপে ৪৩টি এফডিআরে গচ্ছিত রাখেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। অবৈধভাবে অর্জিত ওই টাকা বৈধ করতে নাটক সাজান মাবুদ। সেই নাটকের নানা কানাগলির রহস্য উন্মোচনে দুদকের লেগে যায় ১৮ বছর। ২০০২ সালে শুরু হওয়া অনুসন্ধানের সমাপ্তি করেন তদন্ত সংস্থা দুদক।

 

আবদুল মাবুদের বক্তব্য ও আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৩ সালে শাশুড়ি সাহানারা খানের কাছ থেকে দান হিসেবে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ দেখান দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওই অর্থ বৈধ করতে জাল হলফনামা ও স্ট্যাম্প দিয়ে তৈরি করেন দানপত্র। সেখানে মাবুদ দেখিয়েছেন, সাহানারা খান তার মেয়ে অর্থাৎ আবদুল মাবুদের স্ত্রী নাসিমা খানকে ওই টাকা দান করেছেন। যা পরবর্তীতে সুদ ও আসলসহ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা স্ত্রীর কাছ থেকে দানসূত্রে গ্রহণ করেন আবদুল মাবুদ। এক্ষেত্রে যে হলফনামা ও স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে তা জাল বলে ইতোমধ্যে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।

 

জাল দানপত্রের বিষয়টি নিশ্চিতে আবদুল মাবুদের শাশুড়িকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদে সাহানারা খান দাবি করেন, তার স্বামী ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। স্বামীর রেখে যাওয়া অর্থ থেকে দুই কোটি ৫০ লাখ কোটি টাকা মেয়েকে দান করেন। অথচ তার স্বামী আকরাম খান (মাবুদের শ্বশুর) ১৯৮৩ সালে মারা যান। কিন্তু কাগজপত্রে আবদুল মাবুদ দেখিয়েছেন, ২০০৩ সালে সাহানারা খান (শাশুড়ি) ওই অর্থ দান করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে গত ২০ বছর ধরে ওই টাকা কোথায় ছিল, কীভাবে ওই টাকা আসল— এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি সাহানারা খান।

 

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, জাল হলফনামা ও জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে আবদুল মাবুদ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে করা এফডিআর বৈধ করতেই এমন মিথ্যা নাটকের আশ্রয় নেন। এ প্রক্রিয়ায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দানসূত্রে মালিক হয়েছেন দেখিয়ে আয়কর রিটার্নেও প্রদর্শন করেন তিনি।

 

দুর্নীতির এমন ঘটনায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় মামলার সুপারিশ করেছেন। এছাড়া পুলিশের সাবেক এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামে আরও সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। যে কারণে শিগগিরই তার বিরুদ্ধে সম্পদের নোটিশ ইস্যু করা হতে পারেও বলে জানা গেছে।

 

অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বৈধ করার উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী নাসিমা খানের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ওই উদ্দেশ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়াভাবে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও হলফনামা সৃষ্টি করে আয়ের উৎসের মিথ্যা তথ্য ও দান দেখিয়ে পাঁচ কোটি তিন লাখ তিন হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াসহ তার অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনা করেন মাবুদ। যা দুদক আইন- ২০১৪ এর ২৭ (১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দণ্ডবিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

অভিযোগের বিষয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মাবুদের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর বক্তব্য জানতে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন সাড়া দেননি, তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

এর আগে একই অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা নুর ইসলাম সরকার, উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা ও সহকারী পরিচালক খন্দকার আখেরুজ্জামান অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন বলে দুদক সূত্রে জানা যায়।

 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের প্রথম ব্যাচের কর্মকর্তা মাবুদ অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। ২০০৯ সালে পাসপোর্টের ডিজির দায়িত্ব নিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যান। মাবুদের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের কন্দর্পপুর গ্রামে। ২০১৫ সালে অবসর নেওয়ার পর তিনি বর্তমানে একটি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

 

সূত্র আরো জানায়, মাবুদ পাসপোর্টের ডিজি পদে যোগ দেওয়ার আগে তার এবং তার স্ত্রী নাসিমা খানের নামে চারটি ব্যাংক হিসাব ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে ডিজি হওয়ার পর থেকেই তাদের নামে একাধিক ব্যাংকে হিসাব খোলা শুরু হয়। এর মধ্যে এবি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখাতেই তাদের ১৬টি এফডিআর বা স্থায়ী আমানতের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গুলশানের একটি ব‌্যাংকে তার হিসাবে কয়েক কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে বলেও এক প্রতিবেদনে বলা হয়।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।