TadantaChitra.Com | logo

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের নতুন ডিলার কসাই গোলাম! পর্ব-১

প্রকাশিত : মে ২৪, ২০২৩, ১৫:৪৮

মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের নতুন ডিলার কসাই গোলাম! পর্ব-১

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরস্থ জেনেভা ক্যাম্পে প্রায় লাখ খানেক আটকেপড়া পাকিস্তানির বসবাস। ক্যাম্পের ঘিঞ্জি পরিবেশে গড়ে উঠেছে বিশাল মাদকের বাজার। পুরো রাজধানীর মাদকের ডেরা বললেও ভুল হবে না। এখানে পাঁচশ’রও বেশি মাদকের স্পট। ক্যাম্পের বা মোহাম্মদপুর এলাকার ইয়াবা ডন হিসেবে পরিচিত পঁচিশের মৃত্যুর পর গোলাম ওরফে কসাই গোলাম এখন নতুন ডন। তার বিরুদ্ধে হেরোইন মামলা হলেও রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে। প্রকাশ্য চলছে জেনেভা ক্যাম্পে। ক্যাম্পটি খুচরা মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেও কসাই গোলামদের মতো বড় বড় ডিলারা থাকছেন অধরা। একাধিক মাদক মামলা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্য চালাচ্ছেন তাদের মাদক ব্যবসা।

জেনেভা ক্যাম্প থেকে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের ৮টি গ্রুপের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রোজার ঈদের আগেই অর্থাৎ ১৫ রমজানে আপোষ মিমাংসা হয়। আপোষ মিমাংসা ছিলো কেউ এই ৮ গ্রুপের মাদক বিক্রেতাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছে তথ্য দিবে না। অর্থাৎ কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা হবে না। পুলিশ যেনো এই আট গ্রুপের মাদক ব্যবসায়ী সদস্যকে গ্রেফতার করতে না পারে। কিন্তু আপোষ মিমাংসা ভুলে গিয়ে এক পক্ষ গত ১ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে বোবা বিরিয়ানির মালিক মাদক ব্যবসায়ী মোঃ এরশাদ ওরফে সোনারু এরশাদ এর চারজনকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজন মাদক বিক্রেতার নাম মোঃ কুরবান ওরফে গামছা কুরবান। এ ঘটনার পরেই শপথ করা ৮ মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপের খেলা শুরু হয়।

ক্যাম্প সূত্র বলেছে, সোনারু এরশাদের আপন বড় ভাই মোঃ মাহতাব আত্তারি ওরফে ছিন্দ্রা মাহতাবের ঘনিষ্ঠ মাদক ব্যবসায়ী: মোঃ ওয়াসি আলম ওরফে মুনাফিক বশির আত্তারির সহায়তায় আর এক পক্ষের মাদক বিক্রেতার খোঁজ খবর লাগিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর পরেই পুলিশ জেনেভা ক্যাম্পের আর এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একজন লোককে গোলাম কসাই এর বড় বোন বানোর বসত ঘর থেকে- হেরোইন সহ মোঃ আকাশকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় কিন্তু পালিয়ে যায় দুজন লোক। কিন্তু শেষ রক্ষা পায়নি শীর্ষ মাদক ডিলার মোঃ জাহিদ এবং গোলাম কসাই। কারণ হেরোইন সহ গ্রেফতার কৃত আসামি মোঃ আকাশের তথ্য অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিগত-১২/০৪/২০২৩ ইং তারিখে মোহাম্মদপুর থানা কর্তৃপক্ষ একটি মাদক আইনের মামলা করেন। যাহা মামলা নং-৬৩/৬৩০। উক্ত মাদক মামলায় পলাতক আসামিরা থানা পুলিশের কাছে তদবির করে গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা চালায়।

থানা সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের ডিলার কসাই গোলাম ওরফে গোলাম ও জাহিদের পক্ষে তদবির করেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান ও ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম রাষ্টন। তাদের তদবিরের কারণে এই দুই মাদক ডিলারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সাহস পান নাই। এমনকি তাদের মৌখিক আদেশের কারণে একমাস সাত দিন থানা পুলিশ উক্ত পলাতক আসামিদেরকে দেখেও এড়িয়ে চলতেন। অবশেষে সংসদ ও কাউন্সিলের তদবিরে শেষ রক্ষা পায়নি মাদক মামলার পলাতক আসামিরা। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসলে তখন পুলিশ বাঁধাহীন প্রচেষ্টায় ২০ মে বিকালে বিপুল পরিমাণ হেরোইন সহ মাদক ডিলার মোঃ জাহিদ ওরফে মোল্লা জাহিদকে আজিজ মহল্লা থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় মোঃ ওয়াসি আলম ওরফে মুনাফিক বশির আত্তারি জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদের সাথে ছিল। হিরো এবং হিরোর পিছনে থাকা মুনাফিক বশির আত্তারি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়।

অভিযোগ উঠেছে, মাদক ব্যবসায়ী জাহিদকে ছাড়াবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তার সাঙ্গপাঙ্গরা। নতুন কোনো মাদকের মামলা না যেনো না দেয় তাই থানা পুলিশের কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবারো ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম রাষ্টন তদবির করেন। জাহিদের আরেক মাদক ডিলার কসাই গোলাম ওরফে ডিলার গোলাম, মাদক ব্যবসায়ী মোঃ সুমন আশ্রাফি (রহিম কাবাবের মালিক, মাদক ব্যবসায়ী মোঃ মাহতাব ওরফে টাকলা মাহতাব, মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ আলী ওরফে সৈয়দ পুরিয়া বাবু গনদের সহায়তায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নুর রাষ্টন থানায় তদবির করেন। আবার এদের কথা মতো ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ সাদেক খান এমপির মাধ্যমে তদবির করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাংসদের বাসায় তদবিরের জন্য যান মোঃ শাহিদ ও মোঃ ইরফান। সংসদ ও কাউন্সিলর তদবির করার কারণে মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া মাদক ডিলার মোঃ জাহিদ ওরফে মোল্লা জাহিদকে শুধু আগের মাদক মামলা নং-৬৩/৬৩০, মামলায় আদালতে প্রেরণ করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।

এলাকা সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের আরো এক গ্রুপ মাদক ব্যবসায়ী জাহিদের গ্রেফতার হওয়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যে অর্থাৎ বিকাল-০৫ টার পরে ৮-১০ জনকে দিয়ে ৫ মিনিটের জন্য ক্যাম্পের ভিতরেই একটি মিছিল করায় যার নেতৃত্ব দেন মুনাফিক বশির আত্তারি। আর এই মিছিলে অংশ গ্রহন করে মুনাফিক বশির আত্তারির রক্ষিতা হিসেবে ক্যাম্পে পরিচিত সৈয়দ পুরিয়া বাবুর বোন মাদক ডিলার নার্গিস বেগম। এই মাদক ডিলার গত ২০১৮ সালের মে মাসের ২৬ তারিখে র‌্যাবের উপস্থিতি দেখে নিজের বসত ঘরের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেয়ার সময় পা ভেঙ্গে যাওয়াতে র‌্যাব তাকে সে সময় ছেড়ে দেয়। আরেক মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক মামলায় ৬ মাস সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোঃ আনোয়ার হোসেন ওরফে কালে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মোঃ পুর থানার মামলা নং-১৬৩/১৬৩। মাদক মামলার আসামি মোঃ নিয়াজ ওরফে নাজায়েজ নিয়াজ। একই মামলার আসামি মোঃ নাদিম ওরফে বুলু, শাকিল হোসেন ওরফে ঝাটুল্লি শাকিল, এরা সবাই ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এরা ক্যাম্পে কয়েকজন নিরীহ মা, বোনকে নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে মিছিল করেন।

সূত্র আরো জানায়, মাহতাব আত্তারি ওরফে ছিন্দ্রা মাহতাব তার বড় ভাই বোবা বিরিয়ানির মালিক আফতাব হোসেন এর ছোট ভাইরা ভাই এবং তার বোবা বিরিয়ানি নাম কারা স্টাফ এবং সোনারু এরশাদের মাদক বিক্রেতা মোঃ সনু বোবা বিরিয়ানির দোকান থেকেই তার উপরে নজর রাখে পুলিশ। একসময়ে একজন গ্রাহককে পাইওনিয়া হাউজিং সোসাইটির বাড়ি নং-১০/বি/৮ এর সামনে থেকে ৫০ পুরিয়া হেরোইন সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। যাহা মামলা নং-৭৭/৭৬৯, তারিখ -১৬/০৫/২০২৩ইং। যেহেতু পুলিশ চাইলেই বোবা বিরিয়ানির দোকান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন কিন্তু তা করেননি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত মাদক ব্যবসায়ী জাহিদ গ্রেপ্তার হতে না হতেই তার ঘরের লোকজনদের নিকট হইতে নগদ ৫ লক্ষ টাকা হাদিয়া গ্রহণ করছে তদবির কারী মাদক ব্যবসায়ীরা বলে দাবী করেছেন জাহিদের পরিবারের লোকজন। পুলিশ প্রশাসনের নিকট মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে তদবির কারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানিয়েছেন ক্যাম্পের সাধারণ জনগন।

ইতি পূর্বেও মোঃ সাদেক খান এমপি এবং কাউন্সিলর রাষ্টন এর মৌখিক আদেশে মোহাম্মদ পুর থানার তিন হাজার পুরিয়া হেরোইনের মামলা নং-৬৩/৬৩০, তাং-১২/০৪/২০২৩ এর পলাতক আসামি –
মোঃ জাহিদ এবং পলাতক আসামি – ডিলার গোলাম দের নাম বাদ দিয়ে মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করতে বলা হয় থানা পুলিশকে। কিন্তু গত-২০/০৫/২০২৩ তারিখ মাদক সহকারে জাহিদ ও মুনাফিক বশির আত্তারি আজিজ মহল্লা পাইওনিয়া হাউজিং সোসাইটির রাস্তা থেকে যাওয়ার পথে জাহিদকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করেন পুলিশ। কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় মুনাফিক বশির আত্তারি। তবে এসআই তারেক জাহান খান ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ক্যাম্পের সাধারণ জনগন। যেহেতু গত- ২০/০৫/২০২৩ তারিখে গ্রেপ্তারের পরে মোহাম্মদপুর থানা কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ শিকার করে যে, ক্যাম্পে মোঃ ওয়াসি আলম ওরফে মুনাফিক বশির আত্তারির নিকট হইতে হেরোইন ও ইয়াবা নিয়ে ক্যাম্পের স্পট গুলোতে সাপ্লাই করে থাকে। আমাদের অনুসন্ধানে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ জাহিদের মাদক ক্রয় ও বিক্রয় করার কিছু অডিও রেকর্ড আমাদের হাতে এসেছে। বর্তমান সময়ে মাদক ডিলার গোলাম কসাই, সোনারু এরশাদ, ছিন্দ্রা মাহতাব আত্তারি, মাদক রক্ষিতা নার্গিস, তার রক্ষক মুনাফিক বশির আত্তারি, রহিম কাবাবের মালিক মাদক ডিলার মোঃ সুমন ও তার ছোট ভাই মোঃ সাহিদ, মোঃ আনোয়ার হোসেন ওরফে কালে, শাকিল হোসেন ওরফে ঝাটুল্লি শাকিল, টাকলা মাহতাব, সৈয়দপুরিয়া বাবু, নিয়াজ ওরফে নাজায়েজ নিয়াজদেরকে গ্রেপ্তারের দাবী করেছেন ক্যাম্পে সাধারণ জনগন।

এসব বিষয়ে কসাই গোলাম ওরফে গোলাম বলেন, তাকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ শত্রুতা করে মাদক মামলায় আসামী করেছে। পুলিশের সাথে কথা হয়েছে। থানা পুলিশ অভিযোগপত্রে তার নাম বাদ দিবেন বলেও জানান কসাই গোলাম ওরফে গোলাম। এরপর তিনি রাষ্টনের সাথে একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। কয়েকদিন পর রাব্বানী নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে ফোন করিয়ে নিউজ না করতে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে সাংসদ সদস্য সাদেক খান, কাউন্সিলর রাষ্টন ও মোহাম্মদপুর থানার ওসির কাছে জানতে ফোন করলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।