TadantaChitra.Com | logo

৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জনপ্রশাসনে ঘুষ কেলেঙ্কারির!

প্রকাশিত : মে ২৩, ২০১৮, ০৮:৪১

জনপ্রশাসনে ঘুষ কেলেঙ্কারির!

জাহিদ হাসান খান রনিঃ সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রশাসনে নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিতে ঘুষ বাণিজ্য বহুল আলোচিত একটি বিষয়। ঘুষ ছাড়া যেন এসব কাজকর্ম হয়ই না। কেউ নিজে সরাসরি, কেউ তদবিরকারী বা দালালের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন করেন অথবা করতে বাধ্য হন। যখন দেখেন- কোনও কিছুতেই কাজ হচ্ছে না, সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও পদোন্নতি বা ভালো পদে পদায়ন হচ্ছে না তখন বাধ্য হয়েই ঘুষ লেনদেনের পথে পা বাড়ান। আবার যারা বেশি বুদ্ধিমান এরা আগেই বুঝে যান, পদোন্নতি-ভালো পদায়ন প্রভৃতি পেতে কী করতে হবে। আগে থেকেই ‘লাইন’ ঠিক করে রাখেন।
তদবিরকারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অথবা নানা মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত ধরণা দিয়ে থাকে। যার তদবির যত বেশি সে তত বেশি সফল- জনপ্রশাসনের ক্ষেত্রে এখন এটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। এমনকি প্রশাসনের কোনও কোনও পদ নিলামের মতো ঘুষ হাঁকারও অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের পদে যে বেশি দিতে পারবে তার চেষ্টাই সফল হবে- এমন খবর আগেই চাউর হয়ে যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে ঘুষের টাকা মার যাওয়ারও অনেক নজির রয়েছে। এ প্রতিবেদকের কাছে এই মর্মে সুনির্দিষ্ট তথ্য এসেছে যে, অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পদায়নটি হয়নি। এরপর টাকা ফেরত নিতে গিয়েও বিপাকে পড়েন।
এই কর্মকর্তা সচিবালয়ের বাইরে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে সরকারি একটি সংস্থার শীর্ষ পদে পদায়নের জন্য তদবির করেছিলেন বলে জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কেন্দ্রীক একজন তদবিরকারী বা দালালের মাধ্যমে তদবিরটি করেছিলেন। মোট কন্ট্রাক্ট হয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। এর জন্য এডভান্স হিসেবে দিয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা। বাকি টাকা পদায়নের পর ধাপে ধাপে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু, পদায়নটি করানো সম্ভব হয়নি। পরে তিনি এই ১০ লাখ টাকা ফেরত চেয়েও আর পাননি। দীর্ঘদিন ধরেই দালাল ঘুরাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত সচিবও উচ্চবাচ্য করতে পারছিলেন না। কারণ, এই দালালের পেছনে রয়েছে জনপ্রশাসনের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। তবে অতিরিক্ত সচিব ব্যক্তিগত পর্যায়ে দু’এক জায়গায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। তাতে কাজ হয়নি।
অবশেষে টাকা আদায় করতে না পেরে অতিরিক্ত সচিব সম্প্রতি ওই তদবিরকারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। জনপ্রশাসনের ঘুষ কেলেংকারির এ যেন বিস্ফোরক ঘটনা! নিজের হাতে সাদা কাগজে অভিযোগপত্রটি লিখেন অতিরিক্ত সচিব। অভিযোগপত্রটি তিনি জমা দিয়েছিলেন তোপাখানা রোডস্থ জাইকা এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে। যেহেতু তদবিরকারী জাইকা এলামনাই এসোসিয়েশনেরই একজন কর্মকর্তা। তাই অতিরিক্ত সচিব সেখানে অভিযোগপত্রটি দেন। কিন্তু এরপরও তদবিরের টাকা ফেরত পাননি। বরং এই অতিরিক্ত সচিবকেই এখন উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অতিরিক্ত সচিব (বিশেষ কারণে নাম প্রকাশ করা হলো না) তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, “ইজার উদ্দিন, ওয়ারী- ৪/১ হেয়ার স্ট্রীট, লিফট এর ৫, মোবাইল নং ০১৯১৮২২৭৪০৪, ৭১১৪২৬৫, কার নং ১৭-৮১২০। স্থায়ী ঠিকানা: সারিয়াকান্দি, বগুড়া। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী (ওয়াপদার কর্মচারী)। তার ড্রাইভারের নাম কামাল, মোবাইল নং ০১৭২৬১৬৮৭৮৭। গত ৮/৮/১৭ তাং এ আমার থেকে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গত ২৮/১২/১৭ তাং এ ফেরৎ দিয়েছে। অবশিষ্ট ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ফেরত দিচ্ছে না।”
তোপখানা রোডস্থ এলামনাই এসোসিয়েশন কার্যালয়ে সশরীরে গিয়ে নিজের হাতে অভিযোগপত্রটি লিখেন অতিরিক্ত সচিব। নিজের নাম, পদবীসহ স্বাক্ষর করেন। তিনি নিজের মোবাইল ফোন নম্বরও এতে উল্লেখ করেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ইজার উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করে সম্ভব হয়নি। তবে অতিরিক্ত সচিবের ঘনিষ্ঠ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইজার উদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জমা দেওয়ার পর ওই অতিরিক্ত সচিবকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দফতরে তলব করা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ও হুঁশিয়ারি দেন ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এরপর তাকে ওএসডি-ও করা হয়েছে। এখন আরও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইজার উদ্দিনেরই ঘনিষ্ঠ সূত্র জাইকা এলামনাই এসোসিয়েশনের একজন সদস্য এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ওই পদে পদায়নের জন্য ইজার উদ্দিনের সঙ্গে অতিরিক্ত সচিবের ৫০ লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট হয়েছিল। ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। এই টাকা ইজার উদ্দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দিয়েছেন। কিন্তু টাকাটা আর ফেরত নিতে পারছেন না। ইতিপূর্বে বিভিন্ন তদবিরের কাজে অনেক টাকাই ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ইজার উদ্দিন দিয়েছেন। কাজও হয়ে গিয়েছে। তবে এই কাজটি না হওয়ার পেছনে অন্য কারণ ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এতে চেষ্টারও কোনো কমতি ছিল না। সংস্থাটির শীর্ষ পদে পদায়নের জন্য তিনি এই অতিরিক্ত সচিবের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন হয়ে যায়।

 


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।