TadantaChitra.Com | logo

২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় ভোটে অনিয়ম তথ্যের খোঁজে বিএনপি

প্রকাশিত : জুলাই ২৮, ২০১৯, ১৭:৫০

জাতীয় ভোটে অনিয়ম তথ্যের খোঁজে বিএনপি

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার: ভোটে অনিয়ম-কারচুপি নিয়ে টিআইবি ও সুজনের রিপোর্টের পর নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি। তারা ফের নির্বাচনে অনিয়ম তথ্যের সন্ধানে নেমেছে। দলটি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনিয়মের চিত্র প্রকাশ করবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়েও বিষয়টি তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও সংসদে যোগদান করেছে বিএনপি। অংশ নিয়েছে বগুড়ার উপনির্বাচনেও। তবে পুরো নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ এবং কমিশনকে দুর্নীতিবাজ দাবি করে আসছে দলটি। অতীতে তারা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে। এবার সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক নানা অনিয়মের তথ্য ফের সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন করে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহের পর বিএনপি পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংস্থা দুটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে অবিশ্বাস্য ও এক ধরনের অভূতপূর্ব দাবি করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে।

দলের একই সূত্র জানিয়েছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত গত ২৪ জুলাই এ সংক্রান্ত চিঠি প্রতিটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। চারটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যকেন্দ্রে সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন তিনি কেন্দ্র থেকে পাঠানো দিকনির্দেশনামূলক এমন একটি চিঠি পেয়েছেন। তিনি রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছেন। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, তিনি বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত চিঠি পেয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করছেন। তবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম জানান, তিনি এখনো কোনো চিঠি পাননি। তবে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের কাছে অতীতেই একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আবারো তা সক্রিয় করা হয়েছে বলে তিনি অবগত।

নির্বাচন কমিশনের দুর্নীতি প্রসঙ্গে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেছেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ওয়েবসাইটে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশের পর নির্বাচনে যে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, তার প্রমাণ সুনির্দিষ্টভাবে মিলেছে। ইসির তথ্যানুযায়ী বহু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এ ছাড়া এমন অসংখ্য কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে বিএনপি একটি ভোটও পায়নি। ইসির এমন তথ্যের পর বিএনপিও দলগতভাবে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, সেই ভোটারদের মধ্যে কতজন নির্বাচনকালে প্রবাসে ও জেলে ছিলেন, কতজন সেই সময়ে মৃত ছিলেন এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও কতজন ভোট দিয়েছেন, তা বিএনপি কেন্দ্রে জানাতে বলা হয়েছে। এসব তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য একটি ছক করে দেওয়া হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কেন্দ্রভিত্তিক ফল চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তখন ইসি তাদের সেই ফলাফল দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। নির্বাচনের ৬ মাস পরে ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ইসি। ওই ফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংসদীয় আসন ১ থেকে ১০০ আসনের মধ্যে ২৯টি কেন্দ্রে; ১০১ থেকে ১৯৯ আসনের মধ্যে ২২টি কেন্দ্রে এবং পরবর্তী ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮টি কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের কেন্দ্রভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে ভোট ও নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৮৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৬টিতেই যত বৈধ ভোট পড়েছে, তার সবই পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। ধানের শীষ বা অন্য কোনো প্রতীকের প্রার্থীরা এসব কেন্দ্রে বৈধ ভোটের একটিও পাননি। গত ৯ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অনিয়মের খনি, একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটা কোনোক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সুজনের তথ্যানুযায়ী, ওই কেন্দ্রগুলো মোট ৭৫টি সংসদীয় আসনের আওতাধীন। এসব আসনের মধ্যে ৭৪টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বর্তমান ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচন না করার সুপারিশ করে ইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে সুজন। নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হবে বলেও সংস্থাটি সতর্কবার্তা দিয়েছে।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ৫০টি আসনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর এক পরিবীক্ষণের ফলাফলে ৪৭টিতেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থার বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী পরিচালক ড ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণের এবং বিশ্লেষণের পেছনে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। নির্বাচন আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এক ধরনের অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়েছে যার ফলে এই নির্বাচন অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে টিআইবি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার পরপরই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। সব প্রার্থীকে তখন ঢাকায় এনে মামলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। পরে সব প্রার্থী একযোগে মামলা না করে বিভাগওয়ারী সুনির্দিষ্ট প্রার্থীদের মামলা করতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ৭৪ জন পরাজিত প্রার্থী।

এসব অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ছয়টি একক বেঞ্চও গঠন করেন। আবেদনে সংশ্নিষ্ট নির্বাচনী আসনে বিজয়ী প্রার্থীকে বিবাদী করা হয়। এতে ওই ৭৪ আসনের ফল বাতিল চেয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবিও জানানো হয়। যদিও এখনো পর্যন্ত ওই আবেদনের ওপর কোনো শুনানি হয়নি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।