করোনাভাইরাসের কারনে জাতির এ ক্রান্তিকালে হতভাগ্য ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। বিশ্বের আত্মমর্যাদাপূর্ণ চাকরি হলো শিক্ষকতা পেশা। শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ভাবা হয়, আর সেই মেরুদণ্ড সোজা রাখার কারিগর হলেন শিক্ষকরা। আপনি অস্বীকার করার মতো কোনো কারন নেই যে, ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শিক্ষক নয়! এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মতই তারা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেন। এবং কখনো কখনো মাসিক পে-অর্ডার পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং কি অভিভাবকদের ও আক্রোশের মুখে পড়েন। বলছি না যে, সব শিক্ষক বা অভিভাবকদের আক্রোশের মুখে পড়েন। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি, এমনটাও ঘটে থাকে যা কখনো শিক্ষা ক্ষেত্রে কারোর কাম্য হতে পারে না।
শত কষ্ট বুকে নিয়েও তারা দিব্যি তাদের কাজ করে যান আপনমনে। কখনো মুখ ফুটে চাহিদার কথা বলতেও পারেন না। দেশের এ সংকটময় মুহূর্তে বেশ বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক নামের মানুষ গড়ার কারিগররা। ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক হলেও নামের আগে তো শিক্ষক বলা হয়, তাই আত্মমর্যাদা তো অনেক বড়। কাউকে নিজেদের কষ্টের কথা বলতেও পারেন না।
খুশির খবর হলো, মাস শেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ঠিকই তাদের মাসিক বেতন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেয়ে যান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে বিলি করা ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আদৌ তাদের সামান্য এ বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারন তারা শিক্ষার্থীদের বেতন বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর নির্ভর হতে হয়। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ সামান্য টাকার ওপর ভর করে হয়তো কারো কারো পরিবারের ভরণ-পোষণ চলে।
এমতাবস্থায় তারা কারো কাছ থেকে খুঁজে যে নেবে, সে সাহস কিংবা আমি বলবো দুঃসাহস দেখাবে না মনে হয়। কারণ তারা যে মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের আত্মসম্মানবোধ অনেক। তাদের অনেক শিক্ষার্থী হয়তো গাড়ি-বাড়ির মালিক। কিন্তু যারা আলো বিলান, তারাই যে অন্ধকারের নিচে বাস করেন; সে কথা ক’জনই বা জানেন।
আপনি ধরে নিতেই পারেন যে, এটা তো আর সরকারি বেতনের আওতাভুক্ত চাকরি হয়নি। সুতরাং তাদের কথা কেন চিন্তা করতে হবে? কিন্তু ভাবুন তো, এ মানুষটার কাছেই হয়তো আপনি শিখেছেন কীভাবে কলম ধরতে হয়, কিভাবে শুদ্ধ করে কথা বলতে হয়, কিভাবে হিসাব করতে হয়, কিভাবে জীবন চালাতে হয়। আপনার কাছে হয়তো তারা নিতান্তই সামান্য প্রতিষ্ঠানের বেতনভোগী শিক্ষক, কিন্তু যারা তাদের কাছে শিখে গেছেন; তাদের কাছে যে মহান শিক্ষাগুরু।
তাই গুরু ভক্তির কথা স্মরণ করাতে চাই না, চাই না কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করতে। তাই ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কথা একবার ভাবুন। খোঁজ নিয়ে দেখুন, এ সংকটময় সময়ে কেমন আছেন তারা? ক্ষুধার জ্বালায় মরে গেলেও তারা বলবেন না, আমাকে একটু খাবার দাও। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানের পেশায় আছেন তিনি, হোক না ননএমপিওভুক্ত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী। এ দুঃসময়ে আপনি দেশের প্রায় (০৮) আট হাজার ননএমপিওভুক্ত এসব শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে পারেন। এবং তাদেরকে দেশের এই দুর্যোগময় মুহুর্তে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাসহ অন্যান্য সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার আওতাভুক্ত করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ যে সম্মানের পেশা, মাথা নত না করার পেশা। হীন অবস্থায় থাকলেও শির কিন্তু টান করেই রাখে এই সামান্য বেতনভোগী শিক্ষকরা। কারন সরকারি, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যেমন শিক্ষক, তেমনি প্রতিষ্ঠানের সামান্য বেতন পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও শিক্ষক।
দেশে চাল, ডাল, ত্রাণ চোরেরা ঠিকই ভালো আছে। শুধু ভালো নেই, যারা বলতে পারছেন না লোকলজ্জ্বার ভয়ে, সম্মানের ভয়ে, এবং নিজেদের আত্মমর্যাদা বোধের কথা চিন্তা করে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন, দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে আপনি ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ান। আমরা সৃষ্টিকর্তার পরেই আপনার দিকেই চেয়ে আছি।
শিক্ষক ও কলামিস্টঃ মোঃ আজাদ (গনসংযোগ বিষয়ক সচিব)।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি(কেন্দ্রীয় কমিটি) নজরুল।
‘অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি’
অবশেষে ঢাকায় হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত স্বস্তির বৃষ্টি। টানা একমাস দাবদাহের......বিস্তারিত