TadantaChitra.Com | logo

৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তারেকের পাসপোর্ট দু’দলের নেতাদের বক্তব্যের খোরাক

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৯, ২০১৮, ২১:২৬

তারেকের পাসপোর্ট দু’দলের নেতাদের বক্তব্যের খোরাক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট ইস্যু এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের মূল খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দু’দলের নেতারা সব অনুষ্ঠানেই বক্তব্যের বিষয়বস্তু বানিয়েছে তারেক রহমানের পাসপোর্ট। পাসপোর্ট নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, চলছে পাল্টাপাল্টি রাজনীতি।

যে কোনো মূল্যে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা ড. মোশাররফ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে তাকে আনতে চান সেভাবে আনা যাবে না।

গত ২১ এপ্রিল লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ কথার পরেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় ওঠে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতারা যে যার পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মনে করেন, নিজের অবস্থান জনগণের কাছে পরিষ্কার না করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নৈতিক অধিকার নেই রাজনীতি করার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর দুদিন পর বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানের জমা দেয়া পাসপোর্ট প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেন তারেক রহমান। এর মধ্যে সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে তারেক রহমানের জমা দেয়া পাসপোর্টের নথি দেখান। পরের দিন মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম পাসপোর্ট জমা দেয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।

এ সবের প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুক বার্তায় বলেন, তার বক্তব্য নিয়ে বিএনপি শুধু শুধু ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে নিজেরাই আরও ঝামেলায় পড়েছে।

প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘রিজভী সাহেব চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন ফিরিয়ে দেয়া পাসপোর্ট থাকলে তা দেখাতে। তা মিডিয়ায় দেখিয়ে উল্টো চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, তাদের পরিবারের পাসপোর্ট ফেরত দেয়া না হলে তারা দেখাক অথবা মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করলে তাও প্রমাণসহ বলুক।’ মূলত পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুক বার্তা প্রকাশ পাওয়ার পর এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শুরু হয়।

আজকে তারা পিছুটান দিয়ে মির্জা ফখরুল সাহেবকে দিয়ে স্বীকার করেছেন যে তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন! এবং এটাও বলেছেন, তিনি সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন! যে তথ্য আমি ২০১৫ এবং ২০১৭ তেও প্রকাশ করেছি তা নিয়ে শুধু শুধু ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে তারা নিজেরাই আরও ঝামেলায় পড়েছেন।

‘সকলেই আশা করি জানেন এবং বোঝেন যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হলে অন্য দেশের নাগরিকত্ব পরিহার করতে হয়, সাময়িক হলেও। কারণ রাজনৈতিক আশ্রয়ের মূল যুক্তিই দেয়া হয় যে আপনার দেশে আপনার স্থান নেই। পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার মূল কারণ এবার বোঝা গেলো।’

শাহারিয়ার বলেন, আমাদের মূল প্রশ্নটি হলো যে নিজের অবস্থান জনগণের কাছে পরিষ্কার করে না বা সংকোচ বোধ করে তার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না রাজনীতি করার, দলের সাময়িক প্রধান তো দূরের কথা।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে দলটির নেতারা একেক সময় একেক কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। বিএনপিকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে। সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

কাদের বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পলাতক কাপুরুষ। তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। পলাতক কাপুরুষকে বাংলাদেশ কোনোদিন নেতা মানেনি, মানবেও না।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজনীতি না করা ও দেশে না ফেরার মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। আইনমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মামলায় ১৭ বছরের সাজা হয় তার। সে অনেক আগেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। কিন্তু উনারা (বিএনপি) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার নানা কৌশল অবলম্বন করছেন।

আওযামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি এমন একজনকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানালো, যিনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের নাগরিকই নন। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে। সুতরাং জন্মসূত্রে তিনি পাকিস্তানের নাগরিক। হাছান মাহমুদ বলেন, পাকিস্তানের নাগরিক হওয়ার কারণে তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট কাছে না রেখে জমা দিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপি নেতারা তারেক রহমানের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে। তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেননি। তিনি এ দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।

তিনি বলেন, তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। পাঠানো হয়েছে উকিল নোটিশও।

ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকার এখন নিজেই নিজের গহ্বরে পড়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সময়মতো স্বেচ্ছায় দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান যেদিন বলবেন, আমি বাংলাদেশে যাব, বাংলাদেশ আমার জন্য নিরাপদ, সেদিনই কেবল তিনি ফিরবেন- এর আগে নয়।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, তারেক রহমান ব্রিটিশ আইন মোতাবেক সে দেশে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার তার লন্ডনে অবস্থান নিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছে। সরকার তাকে সহ্য করতে পারছে না।

রিজভী বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশের মানুষের সমালোচনা ও প্রত্যাখ্যানের মুখে শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক থেকে উপস্থাপিত কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি তার ফেসবুকে পোস্ট করা সব ডকুমেন্টস সরিয়ে নিয়ে এখন বলছেন ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে। মূলত প্রশ্নবিদ্ধ কাগজপত্র উপস্থাপন করে তিনি সবার কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছেন।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, তারেক রহমান ব্রিটেনের আইন মোতাবেক সেখানে বসবাস করছেন, যে কথাটি দলের পক্ষ থেকে বারবার উপস্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র ও তদবির করে ব্যর্থ হয়ে তার কেবিনেটের প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ কাগজপত্র উপস্থাপন করাচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাই- আপনি কীভাবে দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছিলেন? রাজনৈতিক আশ্রয়ে কীভাবে ছিলেন? আপনার ছোট বোন শেখ রেহানা কীভাবে ব্রিটেনে অবস্থান করেছিলেন? গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেখতে পেলাম। জাতির সামনে এর জবাব দেবেন কি? তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেননি। যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে শত শত দেশের নাগরিকরা যেভাবে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম নিয়ে অবস্থান করেন সেভাবেই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের হোম ডিপার্টমেন্টে পলিটিক্যাল অ্যাসাইমেন্টের জন্য তার পাসপোর্টটি জমা দিয়েছেন, সারেন্ডার করেননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তারেক রহমানের নাগরিকত্ব জন্মগত অধিকার। কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় নিলেই নাগরিকত্ব হারায় না। আপনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের সংজ্ঞা, নিয়ম-কানুন পড়ে দেখুন অথবা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানতে বলুন। বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সব বড়বড় নেতারা তাদের দেশকে পরিবর্তন করার জন্য নিজেদের দেশে থাকতে পারেননি। বিদেশে থেকে তারা আন্দোলন পরিচালনা করেছেন এবং সফল হয়েছেন। তেমনি তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে আন্দোলন সফল করবেন এবং দেশে ফিরবেন। তবে এই মুহূর্তে আমি ব্যক্তিগতভাবেও বলবো তার দেশে আসার দরকার নেই।

বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমি আগেও বলেছি তারেক রহমান এ মুহূর্তে দেশে নিরাপদ নন। তাকে যদি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার প্রচেষ্টা বা হত্যা করা হয় সেটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। কাজেই এ অবস্থায় তারেক রহমান কেন দেশে আসবেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে বলবো এ মুহূর্তে আপনি দেশে আসবেন না। দেশে না আসার ইতিহাস অনেক আছে, বিভিন্ন দেশের বিপ্লবের ইতিহাস পড়লে বুঝা যায়।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।